অনুসরণকারী

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*


     *আহলে বাইতের সদস্য বর্গের স্বদেশ* 

                         *প্রত্যাবর্তন* 


      ইয়াযীদ আহলে বাইতের মহিলাদেরকে নিজ অন্দর মহলে থাকতে দিল। উভয় বংশের মধ্যে যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল তাই ইয়াযীদ বংশীয় সমস্ত মহিলাগণ তাদের নিকট এসে সমবেদনা জ্ঞাপন করতে লাগল এবং তাদের দুঃখে শরীক হতে লাগল। ইয়াযীদ উভয় বেলা আহারের সময় ইমাম যাইনুল আবেদীন আলী ইবনে হুসাইনকে শাহী দস্তর খানায় নিজের সাথে বসাত। কয়েকদিন যত্নখাতিরের সাথে মেহমানদারী করানোর পরে ইয়াযীদ আহলে বাইতের কাফেলাকে কিছু মাল সামান দিয়ে একজন বিশ্বস্ত সৎচরিত্র ব্যক্তির তত্বাবধানে মদীনা মুনাওয়ারায় পাঠিয়ে দিল। বিদায়ের প্রাক্কালে ইয়াযীদ যাইনুল আবেদীন আলী ইবনে হুসাইনকে বলল আল্লাহ তা’আলার যা ফয়সালা ছিল তাই হয়েছে এবং এটা আমার মর্জির খেলাফ হয়েছে যদি অভিশপ্ত ইবনে যিয়াদের স্থলে আমি হতাম তাহলে কখনই এই পরিস্থিতির উদ্ভব হত না। ইমাম হুসাইন রাযি. আমার সামনে যে প্রস্তাব দিত আমি তাই কবুল করে নিতাম এবং তার প্রাণ এভাবে সংহার হতে দিতাম না। বৎস তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে লিখে জানাবে। (ইবনে আসীর ৪-৩৬)


      হযরত হুসাইন রাযি. এর কন্যা হযরত সাকীনা এই আলোচনায় বড়ই প্রভাবিত হয়েছিলেন তাই তিনি বলতেন খোদাদ্রোহীদের মধ্যে আমি ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়ার চাইতে উত্তম কাউকে দেখিনি। ইয়াযীদের এ সব কথার বাস্তবতা সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে এ সবই তার মুখের কথা।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

43. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৪====🥀*


     *আহলে বাইতের কাফেলা সিরিয়ায়* 


      এই হৃদয় বিদারক ঘটনার পর আহলে বাইতের সদস্যদেরকে কুফায় ইবনে যিয়াদের নিকট পাঠানো হল। আর শহীদদের মাথা তার দরবারে পেশ করা হল। ইবনে যিয়াদ হযরত হুসাইনের রাযি. দাঁত মুবারক একটি লাঠি দ্বারা খোঁচা দিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী হযরত যায়েদ ইবনে আকরাম রাযি.।


      তিনি এই বেআদবী সহ্য করতে পারলেন না। বললেন: আল্লাহর শপথ! আমি নিজের চোখে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই ঠোটে চুম্বন করতে দেখেছি। এর সাথে বেআদবী কর না। একথা বলে তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন। ইবনে যিয়াদ বলল, বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তোমার বোধশক্তি যদি লোপ না পেত তাহলে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। হযরত যায়েদ বদ দুআ করতে করতে মজলিস থেকে চলে গেলেন।


      ইবনে যিয়াদ আহলে বাইতের এই কাফেলা এবং শহীদের মাথা শিমারের তত্বাবধানে দামেশকে ইয়াযীদের নিকট পাঠিয়ে দিল।


https://chat.whatsapp.com/IAmsnxFXehkI5mIL05ApPJ


      ইয়াযীদের দরবারে যখন হযরত হুসাইন রাযি. এর মাথা মুবারক রাখা হল আর পুরস্কারের লোভে শিমার নিজের এবং সাথিদের বীরত্বের কথা উচ্চকন্ঠে বলতে লাগল তখন ইয়াযীদ অশ্রুভরা কন্ঠে বলল: আফসোস তোমাদের উপর। তোমার যদি হুসাইনকে হত্যা না করতে তাহলে আমি তোমাদের প্রতি অধিক খুশি হতাম। আল্লাহর লানত হোক ইবনে মারজানার (ইবনে যিয়াদের) উপর। তার স্থলে যদি আমি হতাম তাহলে আল্লাহর কসম আমি হুসাইনকে মাফ করে দিতাম। আল্লাহ তুমি তাদের উপর রহমত নাযিল কর।


      ইয়াযীদের স্ত্রী হিন্দ বিনতে আব্দুল্লাহ বিন আমের মুখে চাদর পেঁচিয়ে দরবারে এসে বলল আমীরুল মুমিনীন। এটি কি রাসূলের কলিজার টুকরা হুসাইন ইবনে ফাতেমার মাথা।


      ইয়াযীদ জবাব দিল, হ্যাঁ। এটা হুসাইন রাসূল দৌহিত্রের মাথা। তুমি এর জন্য মাতম কর। আল্লাহ ইবনে যিয়াদকে ধ্বংস করুন। সে তাকে হত্যা করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তবে ইয়াযীদ তাকে শাস্তি দিল না বা কুফার শাসন ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করল না এটা তার চরম অযোগ্যতা প্রমাণ করে।


      অতঃপর ইয়াযীদ দরবারী লোকদেরকে সম্বোধন করে বলল, তোমরা কি জান, এই ঘটনা কেন ঘটল? হুসাইন রাযি. বলেছিল আমার পিতা হযরত আলী রাযি. ইয়াযীদের পিতার চেয়ে উত্তম। আমার মাতা সায়্যিদা ফাতেমা যাহরা রাযি. ইয়াযীদের মাতার চেয়ে উত্তম। আমার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াযীদের নানার চেয়ে উত্তম। আর আমি নিজেও তার চেয়ে উত্তম, তাই খেলাফতের হক ও আমারই বেশি।


      পিতার ব্যাপারে কথা হল আমার পিতা আর তার পিতা আল্লাহর সামনে নিজেদের মুআমালা পেশ করেছিলেন দুনিয়া স্বাক্ষী যে আল্লাহতালা আমার পিতার পক্ষে ফয়সালা করেছেন। উল্লেখ্য ইয়াযীদের এ বক্তব্য ভুল ছিল কারণ রাজত্ব পাওয়া আর উত্তম হওয়া কখনো এক জিনিষ নয়। তবে তার মা রাসূল তনয়া ফাতেমা রাযি. আমার মার চেয়ে উত্তম আর তার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নানার চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি আল্লাহও কিয়ামতের দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে সে কখনো কোন ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ বলতে পারে না। তবে হুসাইন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন নি এবং কুরআনের এই আয়াতের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ হয়নি যেখানে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করছেন, বলুন হে আল্লাহ তুমিই সারা জগতের বাদশাহ, যাকে ইচ্ছা তুমি বাদশাহী দান কর আর যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নাও। (আল কামেল ৩/৪৩৮)


      আল্লাহই ভাল জানেন ইয়াযীদের এসব কথা তার অন্তরের প্রতিধ্বনি ছিল নাকি শুধু মাত্র চাপাবাজি ছিল। আর তার এই অশ্রু দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের অশ্রু ছিল নাকি রাজনৈতিক কুটচাল ছিল। কেননা ইতিহাসে এ ধরনের অশ্রুর দৃষ্টান্ত অনেক দেখতে পাওয়া যায়। ইউসুফ আ. এর ভায়েরাও তাকে কুপে নিক্ষেপ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় ঘরে ফিরে এসে পিতা হযরত ইয়াকুব আ. নিকট অনেক দুঃখ প্রকাশ করেছিল। পরবর্তী ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে এ সবই তার রাজনৈতিক চাল ছিল। অন্তরের প্রতিধ্বনি ছিল না। বস্তুত ইয়াযীদ শাসন ক্ষমতা লাভ করার পরে অনেক গুলি মারাত্মক ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল ইসলাম ইতিহাসে যার দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। যেহেতু নিছক দোষচর্চা আমাদের উদ্দেশ্য নয় তাই তার দুষ্কর্মের ফিরিস্তি পেশ করা থেকে আমরা বিরত থাকলাম। ঘটনা বুঝানোর স্বার্থে দু একটি বিষয় বলতে বাধ্য হচ্ছি। তাঁর অন্যায়ের মধ্যে ইমাম হুসাইনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ, তেমনিভাবে ইবনে হুসাইনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ তেমনিভাবে ইবনে যিয়াদকে শাস্তির সম্মুখীন না করাও তার পদস্খলন। আর প্রকৃত কথা হল ইবনে যিয়াদ যা করেছিল তারই নির্দেশে বা ইশারায় করেছিল। ইয়াযীদের দুষ্কর্মের সামান্য আলোচনা শুনুন।


      নিঃসন্দেহে ইয়াযীদ মুসলিম ইবনে উকবাকে তিন দিন পর্যন্ত মদীনাতে হত্যা যজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে সাংঘাতিক রকমের ভুল করেছিল। এই (অন্যায় মূলক) ভ্রান্তি তো ছিলই এর সাথে সাহাবায়ে কিরামের বিরাট একটি অংশ এবং তাদের সন্তানদের হত্যা করার অপরাধও যোগ হয়েছিল এর সাথে। পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে সে হযরত হোসাইন রাযি. কে হত্যা করিয়েছিল। তা ছাড়া সেই তিন দিনে মদীনায় সে এমন সীমাহীন অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল যার যথার্থ বর্ণনা ও বিবরণ তুলে ধরা আদৌ সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লাহই তা ভাল জানেন। মুসলিম ইবনে উকবাকে মদীনায় প্রেরণের পেছনে ইয়াযীদের উদ্দেশ্যে ছিল ক্ষমতা সংহতকরণ ও তার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। যাতে কোন প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব অবশিষ্ট না থাকে। কিন্তু এজন্য আল্লাহ তাকে শাস্তি দিলেন এবং তার অভিপ্রায় ব্যর্থ করে দিলেন। তাকে তিনি এমনভাবে পাকড়াও করলেন যে ভাবে ক্ষমতাদর্পীদের পাকড়াও করে থাকেন এবং তাকে মৃত্যু মুখে পতিত করলেন। আর অত্যাচারী জনপদের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এমন কঠিনই হয়ে থাকে। তার ধরা বড়ই কঠিন, মর্মন্তুদ। (আল-বিদায়া)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

42. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


         *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৩====🥀*


     _*হযরত ইবনে আব্বাসের রাযি. স্বপ্ন*_ 


      এ ঘটনা প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন- আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্নে দেখতে পাই । ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়। অত্যাধিক চিন্তান্বিত ও বিষণ্ণ মনে হল তাঁকে। কাদাযুক্ত অবস্থায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছুটে আসছেন। তাঁর হাতে রক্তে পরিপূর্ণ একটি বোতল দেখা যাচ্ছিল। ইবনে আব্বাস বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলাম হে আল্লাহর রাসূল এই সময়ে এই করুণ অবস্থায় আপনি কোথা থেকে আসছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে ইবনে আব্বাস। আমি কি করে মদীনায় শুয়ে থাকতে পারি? আজ আমার কলিজার টুকরা হুসাইনকে কারবালার ময়দানে যালিম ইয়াযীদ বাহিনী টুকরো টুকরো করে ঘোড়র পায়ের নীচে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। আমি আমার কলিজার টুকরার শাহাদাতের মর্মান্তিক ও করুণ দৃশ্য দর্শনের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম।


      ইবনে আব্বাস বলেন, আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম-হে আল্লাহ’র রাসূল। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার হাতে কি?


      তিনি বললেন- ইহা একটি বোতল! কারবালার ময়দান থেকে কিছু রক্ত জমিয়ে এ বোতলে করে নিয়ে এসেছি। কিয়ামতের ময়দানে এ রক্ত পেশ করে আমি এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আল্লাহ’র দরবারে ফরিয়াদ জানাব।


      এ স্বপ্ন দেখার পর হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. সকলকে হযরত হুসাইনের রাযি. শাহাদাতের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পর বাস্তবেই হযরত হুসাইনের রাযি. শাহাদাতের সংবাদ মদীনায় পৌঁছল। পরে হিসাব করে দেখা গেল তিনি যেদিন স্বপ্নে দেখেছিলেন ঠিক সে দিনই হযরত হুসাইন রাযি. শাহাদাত বরণ করেছিলেন। (শহীদে কারবালা (উর্দূ) পৃঃ ৯৭, আল-কামেল, লি-ইবনে-আছীর ৩য় খণ্ড)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

41. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত*             

                          *ইতিহাস* 


*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১২====🥀* 


       *হযরত হুসাইনের রাযি. শাহাদাত* 


      প্রথমে হাতাহাতি লড়াই শুরু হল। উভয় পক্ষ থেকে এক জন করে ময়দানে আসত আর প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করত। কিন্তু এভাবে কুফাবাসীদের প্রচুর ক্ষতি হল। আব্দুল্লাহ ইবনে উমায়ের কালবী, বারীর ইবনে হাসীর, হুর ইবনে ইয়াযীদ এবং নাফে ইবনে হেলাল নিজেদের প্রতিপক্ষকে কচু কাটা করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে শত্রুবাহিনী থেকে উমর ইবনে হাজ্জাজ চিৎকার করে বলল, হে বাহাদুরবৃন্দ তোমরা কি জান কাদের সাথে লড়াই করছ? এরা তো তারা যারা স্বীয় প্রাণ হাতে নিয়ে বের হয়েছে। তাদের সাথে মল্লযুদ্ধ মোটেই সমীচীন নয় সম্মিলিতভাবে আক্রমণ কর। এরা কজনই বা সংখ্যায়? খোদার কসম তোমরা এদের উপর পাথর নিক্ষেপ করলেও এদের কেউ বাঁচবে না।


      এবার ব্যাপকভাবে লড়াই শুরু হল। স্বল্প সংখ্যক আহলে বাইতের জীবন উৎসর্গকারীরা অগণিত কুফাবাসীদের যম হিসাবে আবির্ভূত হল। হুসাইনী বাহিনীর বীরেরা যেদিকে ফিরত শত্রু বাহিনীর ব্যূহ ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলত। কিন্তু যুদ্ধ ছিল অসম (একদিকে অগণিত সেনা। অপরদিকে মাত্র ৭২ জন)। দুপুর হতে হতে হযরত হুসাইন রাযি. এর সকল সাথি এক একে শহীদ হয়ে গেলেন।


      এবার রয়ে গেলেন আহলে বাইতের যুবকবৃন্দ। আকবার ইবনে হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে আকীল, মুহাম্মদ ইবনে আকীল, কাসেম ইবনে হুসাইন ইবনে আলী, আবু বকর ইবনে হুসাইন ইবনে আলী প্রমূখগন স্বীয় স্বীয় তরবারীর ঝলক দেখাতে দেখাতে জান্নাতী যুবকদের সরদারের জন্য জান কুরবান করে দিলেন। পরিশেষে হযরত ইমাম হুসাইন রাযি. এর সাথে তার চার ভাই আব্বাস, আব্দুল্লাহ, জাফর এবং উসমান ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট রইল না। যতক্ষণ পর্যন্ত বুকে দম থাকল তারা প্রতিটি আঘাত বুক পেতে গ্রহণ করতে লাগলেন। অবশেষে এক এক করে তারাও জান্নাতের পথে পাড়ি জমালেন । ইমাম হুসাইন রাযি. এখন নিঃসঙ্গ একা। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত। পিপাসায় কাতর। কিন্তু তার বীরত্ব উৎসাহ আর উদ্দীপনায় কোন ভাটা পড়ল না। যেদিকেই তার তরবারী উঠত শত্রুর অগণিত লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। অবশেষে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লেন। দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত এভাবে নিশ্চুপ বসে থাকলেন কিন্তু দুশমন তার উপর হামলা করতে সাহস পেল না। তার রক্তে নিজের ভাগ্যকে কলঙ্কিত করা থেকে সকলে বাঁচতে চাচ্ছিল। পরিশেষে শিমার চিৎকার করে বলল এখন কিসের অপেক্ষা? তাকে হত্যা করছ না কেন?


      হযরত হুসাইন রাযি. তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠে কেবল মাত্র পানির পাত্র লাগিয়ে ছিলেন এমন সময় হুসাইন ইবনে তামীম নিশানা করে একটি তীর নিক্ষেপ করল যা তার কণ্ঠনালীতে এসে বিদ্ধ হল। তিনি টলতে টলতে ফুরাতের দিকে চললেন কিন্তু শত্রুবাহিনী চারিদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অরা বিন শুরাইক তামিমী তার উপর তরবারীর আঘাত করল সিনান ইবনে আনাস নাখঈ বর্শার আঘাতে তাকে যমিনে শায়িত করে ফেলল এবং তরবারী দিয়ে মস্তক মুবারক দ্বিখণ্ডিত করে দিল। (ইন্না-- -- --রাজেউন) (আখবারুত তিওয়াল ২৫৫, আল কামেল ৩/৪৩০)


      তার পবিত্র শরীরে বর্শার ৩৩টি আঘাত আর তরবারীর ৩৩টি আঘাত ছিল। এছাড়া অগণিত তীরের আঘাত তো ছিলই। (আল কামেল ৩/৪৩২)


      তার শাহাদাতের পরে পাপিষ্ঠরা আহলে বাইতের মহিলাদের তাঁবুর দিকে ধাবিত হল। মাল-সামান যা কিছু ছিল সব লুট পাট করে নিলো। এমন কি মহিলাদের গায়ের চাদর পর্যন্ত খুলে নিলো। তার দুই পুত্র যাইনুল আবেদীন এবং আলী আসগর অসুস্থতার কারণে তাবুতে শায়িত ছিল। শিমার তাদেরকেও শহীদ করতে চাইল, কিন্তু উমর ইবনে সাআদ বলল, মহিলাদের তাবুতে প্রবেশ করনা। আর বাচ্চাদের গায়ে হাত উঠিওনা।


      মহিমান্বিত শাহাদাতের এই মর্মান্তিক হৃদয়স্পর্শি ঘটনা ৬১ হিজরী সনের ১০ ই মুহাররম রোজ শুক্রবার সংঘটিত হল। পরের দিন গাযেরিয়ার অধিবাসীরা জানাযার নামায আদায় করে শহীদদেরকে কারবালার ময়দানেই দাফন করল। হযরত হুসাইন রাযি. সহ অন্যান্য শহীদদের মাথা যেহেতু দুশমনরা কেটে নিয়ে গিয়েছিল তাই মাথা বিহীন শরীর দাফন করা হল। আল্লাহ তা’আলা তাদের সকলের উপর রহম করুন এবং তাদের সকলকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করেন।


           *آمیـــــــــن‎ ‎یــا ربّـــــ العــالمیــــن*



   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

40. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত*             

                          *ইতিহাস* 


*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১১====🥀*


                  *শাহাদাতের সকাল* 


      পরিশেষে আশুরা দিবসের সকালের উন্মেষ ঘটল। সূর্য রক্ত অশ্রু ছড়াতে ছড়াতে উদিত হল। হযরত হুসাইন রাযি. ফজরের নামায শেষে জীবন উৎসর্গকারী ৭২ জন সাথি নিয়ে রণাঙ্গনে এলেন। ডান দিকে যুবায়ের ইবনে কীন, বাম দিকে হাবীব ইবনে মুজাহেরকে নিযুক্ত করলেন।


      আব্বাস ইবনে আলীর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে ইমাম হুসাইন রাযি. স্বয়ং ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করলেন এবং কুরআন শরীফ আনিয়া সামনে রাখলেন অতঃপর হাত তলে দূ’আ করলেন।


      তিনি যদিও খুব ভালভাবে জানতেন যে, তার কোন চেষ্টা বাহ্যিকভাবে সফলকাম হবে না তবুও দলীলের পূর্ণতার জন্য কুফাবাসীদেরকে সম্বোধন করে নিম্নোক্ত ভাষণ প্রদান করলেন, যাতে করে কুফাবাসী আল্লাহর দরবারে কোন ওজর পেশ করতে না পারে। “হে লোক সকল! একটু থাম। আমার কথা শ্রবণ কর। যেন আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারি। তোমরা যদি আমার কথা শ্রবণ কর আর আমার সাথে ন্যায় বিচার কর তাহলে তোমাদের চেয়ে সৌভাগ্যশালী আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে তোমরা যদি এর জন্য প্রস্তুত না থাক তাহলে সেটা তোমাদের ইচ্ছা, ঘটনার সব দিক তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর তোমরা যা ইচ্ছা করার অধিকার রাখবে। আমার সাথে কোন কিছু করতে বাদ রাখবে না, আমার সাহায্যকারী আমার আল্লাহ ।


https://chat.whatsapp.com/IAmsnxFXehkI5mIL05ApPJ


      হযরত হুসাইন রাযি. এতটুকু বলতে না বলতেই মহিলাদের তাঁবু থেকে কান্নার রোল ভেসে এলো। তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ঠিকই বলেছিল। মহিলাদেরকে সাথে না আনাই ভাল ছিল। অতঃপর তিনি আব্বাস ইবনে আলীকে মহিলাদেরকে চুপ করানোর জন্য পাঠালেন। তারা নিশ্চুপ হয়ে গেল তিনি আবার বক্তৃতায় ফিরে এলেন, হে লোকেরা! একটু চিন্তা করে দেখ আমি কে? তারপরে ভেবে দেখ তোমাদের জন্য আমাকে হত্যা করা এবং আমাকে লাঞ্ছিত করা জায়েয আছে কি? আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই? আমি কি তার চাচাত ভাই আলীর পুত্র নই? সায়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা রাযি. কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? শহীদ জা’ফর তাইয়ার কি আমার চাচা ছিলেন না? আমাদের দুই ভাই সম্পর্কে তোমরা কি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রসিদ্ধ হাদীস শোননি “হে হাসান, হুসাইন! তোমরা জান্নাতের সরদার আর আহলে সুন্নাতের চোখের শীতলতা।” আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, অথচ আমি জীবনে কখনো মিথ্যা বলি নাই, তাহলে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক সাহাবী রাযি. এখনো জীবিত আছেন, তাদের জিজ্ঞাস করে দেখ। এতদসত্বেও কি তোমরা আমার রক্তপাত থেকে বিরত হবে না? নবীর এই হাদীসের ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? অথবা এই ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে যে, আমি ফাতেমা যাহরার ছেলে হুসাইন? এতে যদি সন্দিহান হও তাহলে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারি যে, তোমরা পূর্ব-পশ্চিমে আমি ব্যতীত আর কাউকে নবী-দৌহিত্র রূপে আর ফাতেমার আদরের দুলাল হিসাবে পাবে না। তোমরা আমাকে কেন হত্যা করতে চাও? আমি তোমাদের কাউকে হত্যা করেছি? তোমাদের কারো ধনসম্পদ ডাকাতি করেছি? তোমাদের কাউকে আহত করেছি?


      অতঃপর তিনি কুফায় কয়েকজন নেতার নাম ধরে ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা কি পত্র প্রেরণ করে আমাকে আমন্ত্রণ জানাওনি?


      তারা বলল- না, আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। হযরত হুসাইন বললেন, তোমরা অবশ্যই আমন্ত্রণ জানিয়েছ। তবে এখন আমার আগমন যদি পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে নিজের আশ্রয়ের জায়গায় যেতে দাও।


      এক ব্যক্তি বলল, আপনি আমার চাচাত ভাই ইবনে যিয়াদের ‍সিদ্ধান্ত কেন মেনে নিচ্ছেন না? এটাই তো আপনার জন্য ভাল।


      হযরত হুসাইন রাযি. বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি ছোট লোকদের মত আমার হাত দুশমনের হাতে দিতে পারি না। গোলামের মত তাদের দাসত্ব মেনে নিতে পারি না। আমি সকল অহংকারী থেকে যাদের কিয়ামতের উপর বিশ্বাস নাই- আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় কামনা করছি। (আল কামেল ৩/৪১৮-১০)


      ইমাম হুসাইনের রাযি. পদতলে হুর ইবনে ইয়াযীদঃ ইমাম হুসাইনের রাযি. এই ভাষন কুফাবাসীর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারল না। তবে হুর ইবনে ইয়াযীদ তামীমী ধীরে ধীরে ঘোড়া নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং কাছাকাছি পৌঁছে ঘোড়াকে জোড়ে এক গোড়ালী মেরে আহলে বাইতের বাহিনীতে যোগ দিলেন। তিনি ইমাম হুসাইনকে রাযি. বললেন, হে রাসূলের বংশধর! আমিই ঐ নরাধম যে সর্বপ্রথম আপনাকে বাধা দিয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম না যে, আমার সম্প্রদায় বদবখতীর চরম সীমায় পৌঁছে যাবে এবং যুদ্ধ ছাড়া আর কোন যুক্তি সংগত পন্থা অবলম্বন করবে না। এখন আমি আপনার পদতলে হাজির। শরীরে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে আপনার সাহচর্য্যের হক আদায় করব। আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আমার এই ভূমিকা কি পিছনের গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে?


      হযরত হুসাইন রাযি. খুশি হয়ে বললেন অবশ্যই হে হুর। দুনিয়াতেও তুমি হুর (স্বাধীন) আখেরাতেও ইনশাআল্লাহ দোযখের আযাব থেকে মুক্তি পাবে। হুর এবার স্বীয় কওমকে সম্বোধন করে বললেন: হে লোক সকল ইমাম হুসাইনের রাযি. প্রস্তাবিত দফা সমূহের মধ্যে যে কোন একটি দফা নাও এবং তার বিরুদ্ধে তরবারী ধারণের অভিশাপ থেকে বেঁচে যাও।


      উমর ইবনে সাআদ বলল, আমি তো সমঝোতাই পছন্দ করি কিন্তু এটি তো আমার আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। অতঃপর কুফাবাসীদের পক্ষ থেকে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হল এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। (আল কামেল ৩/৪২১)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

39. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 



*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১০====🥀*


             *পানি বন্ধ করে দেয়া হল* 


      ইমাম হুসাইন কোন অবস্থায় ইয়াযীদের হাতে বাই’আত করতে সম্মত হলেন না। সুতরাং মুহাররমের ৭ তারিখে উমর ইবনে সাআদ ইমাম হুসাইন এবং তার সাথিদের পানি বন্ধ করে দিল। এবং ফুরাতের তীরে ৫০০ সৈন্য মোতায়েন করল। ইমাম হুসাইন রাযি. স্বীয় বাহাদুর ভাই আব্বাস ইবনে আলীকে পানি আনতে বললেন। তিনি ত্রিশ জন অশ্বারোহী আর বিশটি মশক নিয়ে পানি আনতে গেলেন। এবং জোর করে পানি নিয়ে এলেন। (আল কামেল ৩/৪১২)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

38. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 



 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৯ ====🥀*


*ইমাম হুসাইন রাযি.এর কারবালায় অবস্থান* 


      কারবালায় অবতরণের পরের দিন উমর ইবনে সাআদ ইবনে অক্কাস চার হাজার সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। উমর ইবনে সাআদ কে ইবনে যিয়াদ রাই এবং সীমান্ত শহর দাইলামের শাসক নিযুক্ত করেছিল। সে স্বীয় এলাকার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় ইমাম হুসাইনের রাযি. যাত্রার সংবাদ আসে তাই ইবনে যিয়াদ তাকে ইমাম হুসাইনকে প্রতিহত করার নির্দেশ দেয় কিন্তু উমর ইবনে সাআদ অপারগতা প্রকাশ করে। ইবনে যিয়াদ বলল এই দায়িত্ব পালন করতে যদি দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে তাহলে রাই আর দাইলামের কর্তৃত্বও তুমি পাবে না। উমর ইবনে সাআদ শাসন ক্ষমতার লোভে এই আদেশ পালন করতে রাজি হয়ে গেল। কিন্তু সে ইমাম হুসাইনের রাযি. সাথে লড়াই করতে চাচ্ছিল না। তাই শেষ সময় পর্যন্ত মিটমাটের চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল।


      উমর ইবনে সাআদ ইমাম হুসাইনের রাযি. নিকট দূত পাঠিয়ে জানতে চাইল, আপনি কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন? ইমাম হুসাইন রাযি. বললেন, ১৮ হাজার কুফাবাসীরা আমাকে চিঠি লিখেছিল যে, আমাদের কোন ইমাম নেই। আপনি তাশরীফ নিয়ে আসুন আমরা আপনার হাতে বাই’আত করব। আমি তাদের চিঠির উপর ভরসা করে বেরিয়ে পড়েছি। পরে কুফাবাসী আমার হাতে বাই’আত করেও তা ভঙ্গ করেছে এবং আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আমি এটা অবগত হয়ে দেশে ফিরে যেতে চাইলাম কিন্তু হুর ইবনে ইয়াযীদ আমাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলনা। এখন তুমি আমার নিকটাত্মীয়। আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মদীনা চলে যাব।


      উমর এই জওয়াব শুনে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর শপথ আমি নিজেও চাই যে হুসাইনের রক্তে আমার হাত যেন রঞ্জিত না হয়। অতঃপর সে ইবনে যিয়াদকে ইমাম হুসাইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করল। ইবনে যিয়াদ উত্তরে লিখল হুসাইনের নিকট থেকে ইয়াযীদের বাই’আত গ্রহণ কর। এর পরে আমরা অন্য বিষয় নিয়ে চিন্তা করব। যদি বাইআতে রাজি না হয় তাহলে তার পানি বন্ধ করে দাও।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

37. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 



 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৮ ====🥀*


   *হযরত হুসাইনের রাযি. কুফায় যাওয়া* 


 *হযরত হুসাইনের রাযি. কুফা যাওয়ার সংকল্প আর সহমর্মিদের নসীহতঃ* 


      মুসলিম ইবনে আকীল যখন কুফায় পৌঁছলেন তখন হযরত হুসাইন রাযি. এর পক্ষে ১৮ হাজার মানুষ তার হাতে বাই’আত করেছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হযরত হুসাইনকে রাযি. লিখে জানালেন:- আপনি নিশ্চিন্তে তাশরীফ নিয়ে ‘আসতে পারেন। ইরাকবাসীরা আপনার সমর্থক এবং বনু উমাইয়ার তথা ইয়াযীদ এর প্রতি অসন্তুষ্ট। সুতরাং হযরত ইমাম হুসাইন রাযি. কুফা যাত্রার আয়োজন করতে লাগলেন। তার কল্যাণকামীরা যখন এ বিষয়ে অবগত হল তখন তারা ইমাম হুসাইন এর ইচ্ছা থেকে বিরত রাখার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা চালাতে লাগল। উমর ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হারস বলল আমি জানতে পারলাম আপনি ইরাক যাওয়ার মনস্থ করেছেন। অথচ সেখানকার সরকারী কর্মকর্তারা বনু উমাইয়ার সমর্থক। সেখানকার ধনভাণ্ডারও তাদের কবজায়। পাবলিকের কোন ভরসা নেই। তারা ঘরের গোলাম। আমার আশংকা হয় যেসব লোকেরা আপনাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তারাই কাল আপনার সাথে মোকাবিলা করবে। হযরত ইমাম বললেন ভাই! তোমার কথা মানি আর না মানি তুমি যে সত্যিকারের হিতাকাঙ্খী তাতে কোন সন্দেহ নেই।


      হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন হে চাচাত ভাই! মশহুর হয়ে গেছে তুমি নাকি ইরাকে যাচ্ছ। আল্লাহর ওয়াস্তে এরকম এরাদা মোটেও করনা। ইরাকবাসীরা কি বনু উমাইয়ার শাসকদেরকে বহিস্কার করে সে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে? যদি এরকম হয় তাহলে অবশ্যই যাও। কিন্তু অবস্থা যদি এই হয় যে তাদের শাসকরা এখনো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, ধনভাণ্ডারের চাবি তাদেরই হাতে তাহলে কুফাবাসীরা তোমাকে এই জন্য ডাকছে যে, তারা তোমাকে যুদ্ধের আগুনে ঠেলে দিয়ে নিজেরা পৃথক হয়ে যাবে। এই আচরণই তারা তোমার পিতা আর ভাইয়ের সাথেও করেছে। হযরত হুসাইন উত্তরে বললেন আমি এস্তেখারা করে দেখব।


      দ্বিতীয় দিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আবার এলেন আর বললেন, চাচার বেটা! আপনি কুফার ধারে কাছেও যাবেন না। কুফাবাসীরা বিশ্বাস ঘাতক। আপনি মক্কায় অবস্থান করে আপনার বাইআতের আহবান জানান। আপনি হেজাযবাসীদের সরদার তারা আপনার কথা গ্রহণ করবে। আর যদি মক্কা থেকে চলে যেতেই চান তাহলে ইয়ামানের দিকে যান। যেটি একটি বিশাল রাজ্য। সেখানে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা আছে। আর আপনার পিতার হিতাকাংক্ষীরাও সেখানে বিদ্যমান আছেন।


      সেখানে অবস্থান করে ইসলামী প্রদেশ সমূহে স্বীয় খেলাফতের পয়গাম পৌঁছে দিন। আমি আশা করি আপনি সফলকাম হবেন।


      ইমাম হুসাইন রাযি. বললেন ভাই! তোমার স্নেহশীল হওয়ার ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি তো ইরাকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।


     আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন এই সিদ্ধান্ত যদি অটল হয়ে থাকে তাহলে নারী ও শিশুদেরকে সাথে নিয়ে যাবেন না। আমার আশংকা হয় হযরত উসমানের রাযি. মত আপনাকেও নারী ও শিশুদের সামনে মাটি আর রক্তের মধ্যে তড়পাতে না হয়।


      আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর যখন জানতে পারলেন তখন তিনিও বুঝিয়ে বললেন আপনি হারাম শরীফে অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকায় নিজ খেলাফতের দাওয়াত দিন আর ইরাকের সমর্থকদেরকে লিখুন তারা যেন এখানে এসে আপনার সাহায্য করে। আমিও আপনার সাহায্যের জন্য উপস্থিত থাকব। হারাম শরীফ এমনিতেও ইসলামী বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু। বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা এখানে আসা যাওয়া করতে থাকে। সুতরাং এখানে অবস্থান করা আপনার জন্য মঙ্গলজনক হবে।


      কিন্তু হযরত হুসাইন জবাব দিলেন আমি স্বীয় পিতার নিকট শুনেছি যে হারাম শরীফের একটি মেষ হারাম শরীফের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করার কারণ হবে আমি সেই মেষ বনতে চাইনা। (আল কামেল ৩/৩৯৯-৪০১)


       *কুফার পথে ইমাম হুসাইন রাযি.:* 


      পরিশেষে ৬০ হিজরীর ৮ই যিলহজ্জ তিনি পরিবার পরিজন আর বন্ধু বান্ধবদেরকে সাথে নিয়ে মক্কা থেকে কুফার পথে রওয়ানা হলেন। সাফফাহ নামক স্থানে পৌঁছে তার সাক্ষাত হল বিখ্যাত ইসলাম কবি ফারাযদাকের সাথে যিনি ইরাক থেকে ফিরছিলেন। তিনি তার নিকট ইরাকের অবস্থা জানতে চাইলেন। ফারাযদাক বললেন ইরাকবাসীদের অন্তর আপনার সাথে কিন্তু তাদের তরবারী বনু উমাইয়ার সাথে। আর ফয়সালা তো আল্লাহর হাতে।


      হযরত হুসাইন রাযি. বললেন তুমি সত্য বলেছ। আল্লাহর ফায়সালা যদি আমাদের মর্জিমত হয় তাহলে আমরা আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করব। আর যদি মৃত্যু আমাদের আশা-আকাঙ্খার মাঝে অন্তরায় হয়ে দাড়ায় তাহলেও কোন অসুবিধা নাই কেননা আমাদের নিয়ত ভাল।


      আরো কিছু দূর যেয়ে তার সাক্ষাত হল স্বীয় চাচাত ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে তিনি অত্যন্ত জোরালো ভাবে ফিরে আসার অনুরোধ জানালেন আর বললেন আমার আশংকা হয় এই রাস্তায় আপনার প্রাণ সংহার আর আপনার পরিবারের ধ্বংস না নেমে আসে।


      মদীনার গভর্নর আমর ইবনে সাঈদের নিকট হতে হযরত হুসাইনের রাযি. নামে তিনি একটি নিরাপত্তাও লিখিয়ে এনেছিলেন। তিনি ইমাম হুসাইনকে নাছোড়বান্দা হয়ে বাধা প্রদান করলেন তার হাত থেকে বাচার জন্য ইমাম হুসাইন নিজের স্বপ্ন শুনাতে বাধ্য হলেন, যে নানাজী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্নে দেখেছি তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। আমাকে নিয়ে ইফতার করবেন। সুতরাং পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমাকে সামনে অগ্রসর হতে হবে। অতঃপর ইমাম হুসাইন রাযি. নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সামনে অগ্রসর হতে থাকলেন।


      সা’লাবিয়া নামক স্থানে পৌঁছে তিনি মুসলিম ইবনে আকীলের শাহাদাতের সংবাদ পেলেন। কয়েকজন সাথি তাকে বললেন, আপনাকে আল্লাহর কসম, আপনি ফিরে চলুন। কুফায় আপনার কোন সমর্থক ও সাহায্যকারী আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু মুসলিম ইবনে আকীলের আত্মীয়-স্বজনরা বলল আমরা ফিরব না। মুসলিম হত্যার বদলা নেব অথবা আমাদের জানও দিয়ে দেব।


      একথা শুনে হযরত হুসাইন রাযি. বললেন, এদেরকে পরিত্যাগ করে জীবনের কোন স্বাদ নেই। যাবালা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি স্বীয় দুধভাই আব্দুল্লাহ ইবনে বাকতারের শাহাদাতের সংবাদ পেলেন। হযরত হুসাইন রাযি. আব্দুল্লাহ ইবনে বাকতারকে একটি চিঠি দিয়ে মুসলিমের নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন পৌঁছলেন তখন মুসলিমের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে গিয়েছিল। ইবনে যিয়াদ তাকেও বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করল।


      এসব সংবাদ দ্বারা তিনি কুফার অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারলেন। তিনি স্বীয় সাথিদেরকে বললেন কুফাবাসীরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের নিকট থেকে সাহায্য পাওয়ার কোন আশা নেই। সুতরাং আমার যেসব সাথিরা ফিরে যেতে ইচ্ছুক তারা খুশি মনে ফিরে যেতে পারে। আমার পক্ষ থেকে পূর্ণ অনুমতি আছে। এই এলান শুনে তার বেশির ভাগ সাথি ইমাম হুসাইন রাযি. কে ছেড়ে নিজেদের বাড়ির দিকে ফিরে গেল। শুধু তার পরিবারের সদস্যবর্গ এবং খাস কয়েকজন প্রাণ উৎসর্গকারী রয়ে গেল।


     *ইমাম হুসাইনকে রাযি. বাধা প্রদান :-* 


      ইবনে যিয়াদ ইমাম হুসাইনের রাযি. যাত্রার সংবাদ অবগত হয়েছিল। তাই সে ইয়াযীদের নির্দেশমতো মক্কা মদীনা থেকে ইরাক অভিমুখি সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং হুর ইবনে ইয়াযীদ তামীমীকে এক হাজারের বাহিনী দিয়ে হযরত হুসাইনের সন্ধানে এবং তাকে ঘিরে ফেলার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল।


      হযরত হুসাইন রাযি. যখন হাশাম নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন হুর ইবনে ইয়াযীদ ও তার সন্ধান করতে করতে সেখানে এসে উপস্থিত হল এবং তার মুখোমুখি তাঁবু স্থাপন করল। ইমাম হুসাইন রাযি. স্বীয় সাথিদেরকে হুকুম দিলেন ওদেরকে পানি পান করাও আর ওদের ঘোড়াগুলিরও তৃষ্ণা নিবারণ কর এরা ঠিক দুপুরে এসে উপস্থিত হয়েছে।


      যোহরের নামাযের সময় হলে ইমাম হুসাইন রাযি. হুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা আমাদের সাথে নামায আদায় করবে নাকি পৃথক পড়বে? হুর বলল, এক সাথেই পড়ব। সুতরাং উভয় বাহিনী একত্রে ইমাম হুসাইনের পেছনে নামায আদায় করল। নামায শেষে ইমাম হুসাইন রাযি. হুরের সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে বললেন: লোক সকল আমি তোমাদের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতেই এসেছি। তোমরা চিঠি লিখেছ, দূত পাঠিয়েছ যে, আপনি এখানে আগমন করে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। তোমরা যদি এখনো তোমাদের কথার উপর অটল থাকার ওয়াদা কর তাহলে আমি তোমাদের শহরে যাব আর যদি আমার আগমন তোমাদের অপছন্দনীয় হয় তাহলে নিজ দেশে ফিরে যাব।


      হুর বলল, আপনি চিঠি আর দূত পাঠানোর কথা কি বলছেন? আমরা তো এ সম্বন্ধে কিছুই জানিনা। এবার ইমাম হুসাইন রাযি. দুটি ঝোলা থেকে চিঠির স্তূপ বের করে কুফাবাসীদের সামনে রাখলেন। হুর বলল, যাই হোক আমরা এসব চিঠি লিখি নাই। আমাদেরকে তো আপনাকে গ্রেফতার করে ইবনে যিয়াদের সামনে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


      ইমাম হুসাইন রাযি. বললেন এটা তো অসম্ভব। অতঃপর তিনি সাথিদেরকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার আদেশ দিলেন।


      হুর বাধা দিয়ে বলল আমি আপনাকে ফিরে যেতে দেবনা। তবে আপনার সাথে লড়াইও করব না। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি ইরাক আর হেজাযের মধ্যবর্তী কোন রাস্তা অবলম্বন করেন। আমি ইবনে যিয়াদকে লিখে পাঠাচ্ছি আপনিও ইয়াযীদকে লিখুন। হতে পারে এমন কোন সুরত পয়দা হয়ে যাবে যাতে আমাকে আপনার মোকাবিলার দাঁড়াতে না হয়।


      ইমাম হুসাইন রাযি. এই প্রস্তাব কবুল করলেন এবং উত্তর দিকে নিনওয়ার পথ ধরলেন হুরও পিছন থেকে তাকে অনুসরণ করতে লাগল।


      আযিবুল মিহজানাতে পৌঁছে সেখানে তুরমাহ বিন আদীর সাথে তার সাক্ষাৎ হল। তুরমাহ বলল কুফায় আপনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জোর প্রস্তুতি চলছে। এত বড় বাহিনী আমি কখনও ময়দানে জমা হতে দেখিনি। আমার পরামর্শ হল আপনি বনু ত্বাই গোত্রের প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘আজা’য় চলে যান। সেখানে গাসসানি আর হিময়ার গোত্রের শাসকরাও কখনো সুবিধা করতে পারেনি। আপনি যদি সেখানে তাশরীফ নিয়ে যান তাহলে বনু ত্বাই গোত্রের ২০ হাজার যুবকের দায়িত্ব আমি গ্রহণ করব। যাদের তরবারী আপনার সাহায্যার্থে কোষমুক্ত হবে।


      কিন্তু হযরত হুসাইন রাযি. শুকরিয়ার সাথে তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন হুরের সাথে আমার যে চুক্তি হয়েছে আমি তা ভঙ্গ করব না। নিনওয়া পৌছার পর হুর ইবনে যিয়াদের পত্র পেল যাতে লেখা ছিল হুসাইন রাযি. এবং তার সাথিদেরকে এক্ষুনি বাধা দাও এবং তাদেরকে এমন জায়গায় নামতে বাধ্য কর যেখানে কোন আড়াল নেই পানিও নেই। হুর ইমাম হুসাইনকে এই চিঠি দেখাল। তিনি বললেন আরো কিছুদূর যেতে দাও। তারপরে আমরা নেমে পড়ব। হুর রাজি হয়ে গেল। যখন তিনি কারবালা ময়দানে পৌঁছলেন তখন হুর রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল এবার আর সামনে অগ্রসর হতে দেবনা। এখানেই নেমে পড়ুন । দরিয়ারে ফুরাতও এখান থেকে নিকটে। ইমাম হুসাইন এবং তার সাথিগণ ৬১ হিজরীর ২রা মুহররম কারবালা ময়দানে অবতরণ করলেন। (আল কামেল ৩/৪০৭-১১)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

36. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 



 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৭ ====🥀*


    *মুসলিমের গ্রেফতারী আর শাহাদাত* 


      ইবনে যিয়াদের নিকট তখন পুলিশের ৩০ জন লোক এবং শহরের গণ্যমান্য আর তার খানদানের ২০ জন লোক উপস্থিত ছিল। ইবনে যিয়াদ শহরের গণ্যমান্য লোকদের বলল আপনার নিজ নিজ গোত্রের উপর প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে মুসলিমের সংগ ত্যাগ করতে বলুন। তারা বাইরে এসে স্বীয় গোত্রের লোকদেরকে হুমকি ধমকি দিতে শুরু করল।


      অতঃপর নিরাপত্তার পতাকা উড্ডয়ন করল। মুসলিম ইবনে আকীলের সাথীরা তার থেকে পৃথক হতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত তার সাথে মাত্র ত্রিশ জন লোক রয়ে গেল। মুসলিম এই অবস্থা দেখে আশ্রয়ের জন্য কিনদাহ মহল্লার দিকে চললেন। মহল্লা পর্যন্ত পৌছতে পৌছতে সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন। রাত ছিল অন্ধকার। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে পড়ছিল। কোথায় মাথা গুজবেন এই চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন।


      একটি ঘরের দরজায় একজন বৃদ্ধাকে দন্ডায়মান দেখতে পেয়ে তিনি তার নিকট পৌঁছে নিজের মুসীবতের উপাখ্যান শোনালেন। বৃদ্ধার মনে দয়ার উদ্রেক হল। তাই নিজের গৃহের একটি প্রকোষ্ঠে তাকে লুকিয়ে রাখলেন। ইবনে যিয়াদ ইশার নামাযের পরে জামে মসজিদে ঘোষণা করে দিল, যে ব্যক্তি মুসলিম ইবনে আকীলকে আশ্রয় দেবে তাকে হত্যা করা হবে। আর যে ব্যক্তি তাকে ধরিয়ে দেবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। অতঃপর পুলিশকে অর্ডার দিল কুফার সকল ঘর বাড়ি তন্ন তন্ন করে তালাশ করার । বৃদ্ধার ছেলে প্রাণের ভয়ে সরকারী লোকদেরকে সংবাদ দিয়ে দিল। ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকীলকে গ্রেফতারের জন্য মুহাম্মদ ইবনে আশ’আসকে পাঠাল। ইবনে আশ’আস মুসলিম ইবনে আকীলের অবস্থানস্থল ঘিরে ফেলল। মুসলিম যখন জানতে পারলেন দুশমন মাথার উপর দন্ডায়মান অথচ তিনি একা আর তার মোকাবিলায় ৭০ জন তবুও তিনি দীর্ঘক্ষণ যাবৎ বাহাদুরীর সাথে লড়াই করলেন এবং কাউকে নিকটে ঘেষতে দিলেন না। পরিশেষে মুহম্মদ ইবনে আশ’আস বলল: আমরা আপনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি, আপনি নিশ্চিন্তে আমাদের আশ্রয়ে আসতে পারেন। আপনিতো আমাদের পর নন। মুসলিম ইবনে আকীল আঘাতে আঘাতে জর্জরিত ছিলেন, বাধ্য হয়ে তিনি মুহাম্মদ ইবনে আশআসের নিকট নিজেকে সপে দিলেন। রাস্তায় তিনি ইবনে আশ’আসকে বললেন আমার মনে হয় তুমি আমার প্রাণ বাঁচাতে পারবে না। তবে আমার একটা দরখাস্ত আছে তুমি সেটা অবশ্যই গ্রহণ কর। ইবনে আশ’আস জিজ্ঞেস করল কি সেটা? মুসলিম বললেন কাউকে পাঠিয়ে আমার অবস্থা সম্বন্ধে ভাই হুসাইনকে জানিয়ে দিও। আর আমার পক্ষ থেকে তাকে বলে দিও তিনি যেন কুফাবাসীদের ধোঁকায় না পড়েন এরা তো তারাই যাদের হাত থেকে মুক্তি আশা তার পিতা সব সময় করতেন। আরো বলে দিও তিনি যেন পরিবার পরিজন নিয়ে মক্কা ফিরে যান।


      মুহাম্মদ ইবনে আশ’আস ওয়াদা করল যে, এই পয়গাম ইমামের নিকট পৌঁছে দেবে। অতঃপর সে তার এই ওয়াদা রক্ষা করেছিল। (আল কামেলা ৩/পৃঃ/ ৩৮৭-৮৮-৮৯-৯৮)


      মুসলিম ইবনে আকীল ইবনে যিয়াদের সামনে নীত হলেন। ইবনে যিয়াদ তিরস্কার করলে তিনিও কঠোরভাবে প্রতিউত্তর দিলেন। অবশেষে ইবনে যিয়াদ তাকে শহীদ করে দিল। মুসলিমের পরে ইবনে যিয়াদ হানী ইবনে উরওয়াকে হত্যার আদেশ দিল। শহরে হানীর প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে মুহাম্মদ ইবনে আশ’আস তার প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ইবনে যিয়াদ কোন কথা গ্রাহ্য না করে তাকেও শহীদ করে দিল।


      ইবনে যিয়াদ উভয় শহীদের মাথা ইয়াযীদের নিকট পাঠিয়ে দিল। ইয়াযীদ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লিখে পাঠাল আমি জানতে পারলাম হুসাইন ইরাকের পথে যাত্রা শুরু করেছে তুমি কঠোর পাহারাদারীর ব্যবস্থা গ্রহণ কর। কারো পক্ষ থেকে সামান্য সন্দেহ প্রকাশ পেলে তাকে গ্রেফতার কর। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ তোমার মোকাবিলায় তরবারী না উঠায় তুমিও তার বিরুদ্ধে তরবারী ধারণ করনা।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

35. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৬ ====🥀*


                     *হানীর গ্রেফতারী* 


      ইমাম হুসাইনের রাযি. সমর্থকরা এবার হানীর গৃহে একত্রিত হতে শুরু করল। ইবনে যিয়াদ গুপ্তচরদের মাধ্যমে ‌ সংবাদ অবগত হয়ে হানীকে তলব করে বলল হানী আমীরুল মুমিনীনের বিরুদ্ধে তোমার গৃহে ষড়যন্ত্র হচ্ছে? তুমি মুসলিমকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছ আর তার জন্য জনবল ও অস্ত্রশস্ত্রের অপেক্ষা করছ আবার এটাও মনে করছ যে, এসব বিষয়ে আমি অবগত নই? হানী দেখলেন অস্বীকার করে কোন লাভ নেই তাই তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, মুসলিম ইবনে আকীল আমার গৃহেই আছে। কিন্তু লাঞ্ছনা গঞ্জনার ভয়ে তাকে যিয়াদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার জানালেন। ইবনে যিয়াদ হানীর সাথে কঠোরতা করল এবং তাকে নিজের গৃহে বন্দী করে রাখল।


               *রাজ ভবন অবরোধ* 


      মুসলিম ইবনে আকীল যখন স্বীয় মেজবানের বন্দী হওয়ার সংবাদ অবগত হলেন তখন তিনি ‘ইয়া মানসূর উম্মাহ’ শ্লোগান লাগালেন। মুসলিম ইবনে আকীলের হাতে ঐ সময় পর্যন্ত ১৮ হাজার মানুষ বাই’আত হয়েছিল। তাদের মধ্যে চার হাজার লোক আশপাশের গৃহ সমূহে অবস্থান করছিল। শ্লোগান শুনতেই তারা সকলে বাইরে বেরিয়ে এলো। মুসলিম ইবনে আকীল তাদেরকে সাথে নিয়ে রাজ ভবন ঘেরাও করলেন। অন্যরা সংবাদ পেয়ে তারাও মুসলিমের সাহায্যার্থে ছুটে এলো। এমনকি জামে মসজিদ আর বাজার ইমাম হুসাইনের রাযি. সমর্থকদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেল।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

34. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৫ ====🥀*


                *হানীর গৃহে মুসলিম* 


      মুসলিম ইবনে আকীল যখন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের আগমন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হলেন তখন মুখতারের গৃহ ত্যাগ করে হানী ইবনে উরওয়া মারবীর গৃহে আসলেন এবং সেখানে থাকার অনুমতি চাইলেন। হানী বললেন আপনি আমাকে আমার শক্তি বহির্ভূত কাজে বাধ্য করছেন। কিন্তু আপনি যেহেতু আমার গৃহে প্রবেশ করেছেন তাই এখন অস্বীকার করার সুযোগ নেই। হানী তাকে মহিলাদের কামরায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।


   📋 _*নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

33. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৪ ====🥀*


    *উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের আগমন* 


      উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ আপন ভ্রাতা উসমান ইবনে যিয়াদকে বসরায় নিজের স্থলাভিষিক্ত করে কুফায় রওয়ানা হয়ে গেল। সে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে কুফায় প্রবেশ করল। এখানে লোকেরা ইমাম হুসাইনের আগমনের অপেক্ষায় ছিল। তারা মনে করল হযরত হুসাইন রাযি. আগমন করেছেন। সুতরাং ইবনে যিয়াদ যে রাস্তা দিয়ে যেত সেখানেই মারহাবা হে রাসূল দৌহিত্র এই শ্লোগান উঠত।


      ইবনে যিয়াদ পরের দিন কুফার জামে মসজিদে এই বক্তৃতা দিল-আমীরুল মুমিনীন আমাকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেছেন। আমাকে মজলুমদের সাথে ইনসাফ আর অনুগতদের সাথে সৎ ব্যবহার এবং গাদ্দার ও অবাধ্যদের সাথে কঠোরতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি এই নির্দেশ অবশ্যই পালন করব। বন্ধুদের সাথে আমার ব্যবহার আপন ভাইয়ের মত হবে। আর বিরোধীদেরকে তরবারীর খাদ্য বানানো হবে। সুতরাং প্রত্যেকেই যেন নিজের উপর দয়া করে।


      অতঃপর সে হুকুম জারী করল, প্রতিটি মহল্লার দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার মহল্লায় বসবাসরত বহিরাগত এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা যেন আমার নিকট প্রেরণ করে। কোন মহল্লার দায়িত্বশীল যদি এই আদেশ পালনে শিথিলতা করে এবং উক্ত মহল্লার যদি কেউ রাষ্ট্রদ্রোহিতায় লিপ্ত হয় তাহলে মহল্লার দায়িত্বশীলকে তার বাড়ির দরজায় ফাঁসি দেওয়া হবে এবং মহল্লার সকল লোকদের ভাতা বন্ধ করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

32. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৩ ====🥀*


            *ইমাম হুসাইনও মক্কার পথে* 


      দ্বিতীয় রাতে হযরত হুসাইন রাযি. স্বীয় ভগ্নি উম্মে কুলসুম আর যয়নব এবং ভাতিজা ও ভাগ্নে যথাক্রমেঃ- আবুবকর জাফর, আব্বাস এবং আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে মক্কার পথে পাড়ি জমালেন। তবে তার ভ্রাতা মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া মদীনা ত্যাগ করা পছন্দ করলেন না এবং বিদায়ের প্রাক্কালে এই নসীহত করলেন- প্রিয় ভ্রাতা, তোমার চেয়ে বেশি প্রিয় আর মাহবুব আমার নিকট অন্য কেউ নাই ইয়াযীদের পক্ষে বাই’আতের অস্বীকৃতি বিষয়ে আমি তোমার সাথে একমত। তুমি তার বাই’আত করনা বরং নিজের দূতদেরকে বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করে তোমার পক্ষে বাই’আতের আহবান জানাবে। দেশবাসী যদি তোমার হাতে বাইআত করে তাহলে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করবে। আর যদি অস্বীকার করে তাহলে তুমি এমন কোন শহরে যেওনা যেখানকার লোকেরা দুদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তোমার পক্ষে অপরদল বিপক্ষে। অতঃপর সেই দুই দলের মধ্যে লড়াই হয় আর তুমি সর্বপ্রথম লড়াইয়ের জন্য বেরিয়ে আস। আর ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত গুণাবলী আর বংশীয় মর্যাদার দিক দিয়ে উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিল নিকৃষ্ট পন্থায় তার রক্তপাত ঘটানো হয় আর তার পরিবার পরিজনকে লাঞ্ছিত করা হয়।


      ইমাম হুসাইন রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই তাহলে আমি কোথায় যাব? মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া বললেন তুমি মক্কায় অবস্থান করতে থাক সেখানে যদি শান্তি-নিরাপত্তা লাভ কর তাহলে তো ভাল। নতুবা মরুভূমি কিংবা পাহাড়ি এলাকার দিকে চলে যেও। এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সফর করতে থাক। এই অবস্থায় খেয়াল রাখবে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। যাতে করে স্থায়ী একটা সিদ্ধান্ত নিতে পার। পরিস্থিতির প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রেখে কাজ করা ভাল, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পরে আফসোস করে কি লাভ? (আল কামেল / ৩/ পৃ. ৩৭৯, তারীখে ত্ববারী ৩/ পৃ.২৭১, আল বিদায়া ৭-৮/১৫৫).


      পথিমধ্যে ইমাম হুসাইনের রাযি. সাথে আব্দুল্লাহ ইবনে মুতীর সাক্ষাত হল। অবস্থা জানার পর তিনি ইমামের কাছে আরয করলেন, হযরত! আপনি যদি মক্কা ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার ইরাদা করে থাকেন তাহলে কুফায় মোটেও যাবেন না। সেটি বড়ই অমঙ্গলের শহর। আপনার পিতাকে সেখানেই শহীদ করা হয়েছে আপনার ভাইয়ের উপর সেখানেই আততায়ীর হামলা হয়েছে এবং তাকে সহায় সম্বলহীন ভাবে পরিত্যাগ করা হয়েছে। বরং যতদূর সম্ভব আপনি হারাম শরীফ ছাড়বেন না। কেননা হেজাযবাসীরা আপনার তুলনায় অন্য কাউকে প্রাধান্য দেবে না। সেখানে বসে আপনি আপনার সমর্থক আর কল্যাণকামীদেরকে অতি সহজেই নিজের পাশে হাজির করতে পারবেন।


       *কুফাবাসীদের দাওয়াতী চিঠিঃ* 


      হযরত ইমাম হুসাইন রাযি. মক্কা পৌঁছে আবু তালেবের ঘাঁটিতে অবস্থান নিলেন। মক্কার অধিবাসী এবং অন্যান্য এলাকার লোকজন যারা হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করেছিল তারা যখন হযরত ইমামের আগমনের সংবাদ অবহিত হল তখন দলে দলে তার খেদমতে হাজির হতে লাগল। এরা সর্বদা তাকে বেষ্টন করে থাকত এবং নিজেদের আনুগত্য আর প্রাণ উৎসর্গের প্রমাণ রাখতে সচেষ্ট হত। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. খানায়ে কাবার এক প্রান্তে অবস্থান করছিলেন। তিনি সারাটি দিন নামায আর তাওয়াফের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন। কখনো কখনো ইমাম হুসাইনের রাযি. নিকট এসে পরামর্শে শরীক হতেন।


      কুফাবাসীরা প্রথম থেকেই আহলে বাইতের প্রতি সমর্থনের দাবীদার ছিল। তাদের কারণেই হযরত আলী রাযি. খেলাফতের রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তর করেছিলেন। এটা ভিন্ন কথা যে, তাদের এই দাবী কখনো পরীক্ষার কষ্টি পাথরে টিকতে পারেনি।


      কুফাবাসীরা যখন হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. মৃত্যু সংবাদ অবগত হল তখন তারা উল্লাসিত হয়ে উঠল। সুলাইমান বিন যরদ খুযাই তদের সরদার ছিল। তার গৃহে গোপন পরামর্শ হল এবং সেখানে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, ইমাম হুসাইনকে রাযি. কুফায় এনে তার হাতে বাই’আত করে খেলাফতকে আবারো আহলে বাইতের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। কারণ তারাই এর উপযুক্ত ইয়াযীদ আদৌ এ পদের উপযুক্ত নয়।


      এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুফার নেতৃস্থানীয় লোকদের পক্ষ থেকে প্রায় দেড়শত চিঠি হযরত ইমামের নামে প্রেরণ করা হল। সে সব চিঠির সারমর্ম ছিল নিম্নরূপ: আল্লাহর পাকের শোকর যে, আপনার প্রতিপক্ষ মৃত্যু নিদ্রায় শায়িত। এখন আমরা ইমাম বিহীন অবস্থায় আছি। আপনি দ্রুত তাশরীফ নিয়ে আসুন যাতে আপনার সাহায্যে আমরা সত্যের উপর একত্রিত হতে পারি। নুমান বিন বশীরের (কুফার গভর্নর) পিছনে আমরা জুমার নামায ও পড়ি না আর ঈদের নামাযও পড়ি না। আমরা যদি অবগত হই যে, আপনি তাশরীফ নিয়ে আসছেন তাহলে আমরা তাকে সিরিয়ার সীমান্তে ঠেলে দেব। (ইবনে কাসীর ৪ খণ্ড-৮পৃ:)


      এসব চিঠি পত্র ছাড়াও কুফার বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ইমাম হুসাইনের রাযি. খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাকে কুফায় পাওয়ার অনুরোধ করতে লাগল। (আল কামেল ৩/পৃ. ৩৮৫, তারীখের ত্ববারী ৩/পৃ.২৭৩) আর বিদায়া ৮/১৫৮)


       *মুসলিম ইবনে আকীলের যাত্রা:* 


       অনুরোধের মাত্রা যখন সীমা ছাড়িয়ে গেল তখন হযরত হুসাইন রাযি. অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্বীয় চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফায় প্রেরণ করলেন এবং তাদের নামে এই জওয়াব লিখলেনঃ আমি আপনাদের আগ্রহ সম্বন্ধে অবগত হয়েছি। আমি আপনাদের নিকট আমার ভাই এবং বিশ্বস্ত মুসলিম ইবনে আকীলকে পাঠাচ্ছি। তিনি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে আমাকে সংবাদ দেবেন। আমি যদি জানতে পারি যে কুফার আম-খাছ, ছোট-বড় সকলেই আমাকে খলীফা বানানোর প্রত্যাশী তাহলে ইনশাআল্লাহ আর দেরী করব না। বাস্তব কথা হল ঐ ব্যক্তিই ইমাম হওয়ার যোগ্য যে আল্লাহর কিতাবের ধারক, ন্যায় বিচারক এবং সত্য দীনের অনুসারী। মুসলিম ইবনে আকীল মদীনা হতে কুফায় পৌঁছলেন এবং মুখতারের গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন। হযরত আলীর রাযি. ভক্তবৃন্দরা তাকে ঘিরে ধরল। তারা দলে দলে আসত মুসলিম ইবনে আকীল তাদেরকে হযরত হুসাইনের চিঠি পড়ে শোনাতেন আর তারা কেঁদে কেঁদে অঙ্গীকার করত যে, ইমাম হুসাইনের সহযোগিতার ব্যাপারে কোন রকম শৈথিল্য আমরা প্রদর্শন করব না। নিজেদের জীবন তার জন্য উৎসর্গ করে দেব।


      নুমান ইবনে বশীর তখন হযরত মুআবিয়া কর্তৃক কুফার গভর্নর ছিলেন। তিনি সৎচরিত্র আর সন্ধি-প্রিয় ছিলেন। সব ঘটনা তিনি জানতে পারছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু এতটুকু করলেন যে, জামে মসজিদে বক্তৃতা করতে যেয়ে বললেন- হে লোক সকল তোমরা ফেৎনার দিকে ধাবিত হয়ো না। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করনা। এতে জান-মাল বরবাদ হবে আমি অপবাদ আর কু-ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন শাস্তি দিতে চাইনা তবে তোমরা যদি প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু কর তাহলে আমিও কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।


      বনু উমাইয়ার তথা ইয়াযীদ এর সমর্থকদের মধ্যে একজন নুমানকে বাধা দিয়ে বলল, হে আমীর! আপনি দুর্বলতা প্রকাশ করছেন। এভাবে কাজ হবে না। কিন্তু নুমান জবাব দিলেন আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যে দুর্বল হওয়া তার নাফরমানীতে শক্তিশালী হওয়ার চেয়ে ভাল।


      এই ব্যক্তিই ইয়াযীদকে সব কিছু লিখে জানাল এবং এ কথাও বলল যে, কুফায় যদি নিজের শাসন কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাও তাহলে শক্ত কোন ব্যক্তিকে গভর্নর করে পাঠাও। নুমানের মত দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা এখানের ফেতনা নির্মূল হবে না।


      ইয়াযীদ সারজুন রুমীর পরামর্শ মত বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করল এবং আদেশ দিল কুফায় যেয়ে মুসলিম ইবনে আকীলকে সেখান থেকে বহিস্কার কর অথবা হত্যা কর।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

31. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -২ ====🥀*


            *বাইআতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন* 


 *ইমাম হুসাইন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের বাইআতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনঃ* 


      ওলীদ হযরত হুসাইন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. কে ডেকে পাঠালেন। বুযুর্গদ্বয় তখন মসজিদে ছিলেন। এই অসময়ে ডাকার কারণে তারা ঘটনার গভীরে পৌঁছে গেলেন। তারা পরস্পরে মন্তব্য করলেন যে মনে হয় আমীরের ইন্তিকাল হয়ে গেছে আর আমাদেরকে ইয়াযিদের পক্ষে বাই’আতের জন্য ডাকা হচ্ছে। হযরত হুসাইন রাযি. কিছু লোকজন সঙ্গে নিয়ে ওলীদের নিকট পৌঁছলেন তিনি সাথিদেরকে বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন এবং আরো বললেন তোমরা যদি কোন শোরগোল শুনতে পাও তাহলে তৎক্ষণাত ভেতরে চলে আসবে। ওলীদ হযরত হুসাইন রাযি. কে হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. মৃত্যুর সংবাদ জানালেন। হযরত হুসাইন রাযি. ইন্নালিল্লাহ পড়লেন আর আমীরের জন্য মাগফিরাতের দু‘আ করলেন। এবার ওলীদ মূল প্রসঙ্গে ফিরে এসে বাই’আতের আহবান জানালেন। হযরত হুসাইন রাযি. বললেন আমার মত ব্যক্তি গোপনে বাই’আত করতে পারেনা। আপনি সাধারণ লোকদের কে এই উদ্দেশ্যে একত্রিত করুন আমিও তাদের সাথে আসব। সকলের যেটা মত হবে সেটাই করা হবে।


      ওলীদ দুশ্চরিত্রের লোক ছিলেন না। তিনি বললেন খুব ভাল কথা, তাশরীফ নিয়ে যান। হযরত হুসাইন রাযি. এর প্রস্থানের পর ওলীদ মারওয়ানকে বললেন বড়ই পরিতাপের বিষয় তুমি চাচ্ছ আমি রাসূল দৌহিত্রকে হত্যা করি। খোদার শপথ কিয়ামতের দিন যার নিকটে হুসাইনের রক্তপণ চাওয়া হবে সে বড়ই হতভাগ্য হবে।


      আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. ওলীদের নিকট একদিনের সময় চাইলেন। কিন্তু রাতেই তিনি মদীনা ত্যাগ করে মক্কার পথে পাড়ি জমালেন। ওলীদ সংবাদ পেয়ে নিজের লোকদের দিয়ে তার পিছু ধাওয়া করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর অপরিচিত রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন তাই এরা তার টিকিটিও খুঁজে পেলনা। অবশেষে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলো।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

30. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১ ====🥀*


  *কারবালার সঠিক ইতিহাস শুরুর কথা* 


      হায়াতের শেষের দিকে বেশ কিছু দিন মদীনায় অবস্থান করার পর হযরত মু‘আবিয়া রাযি. ও হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কায় এসে হাজির হলেন এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযি. কে ইয়াযীদকে খলীফা ঘোষণার ব্যাপারে পৃথক পৃথক ভাবে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনক্রমেই তাদেরকে রাজী করানো যাচ্ছিল না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বললেন -আপনার পূর্বে যারা খলীফা ছিলেন তাঁদেরও অনেক যোগ্য সন্তানাদি ছিল। যোগ্যতার মাপকাঠিতে তারা ইয়াযীদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বে ছিল, তবুও তাঁরা তাঁদের সন্তানদের এ দায়িত্ব অর্পণ করেননি। তাঁরা মুসলমানদের সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে খেলাফতের দায়িত্ব অন্যের হাতে অর্পণ করে গেছেন। অথচ আপনি আপনার সন্তানের জন্য এ কাজটি করে যাচ্ছেন।


      এমনিভাবে প্রত্যেকের সাথে হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. মতবিনিময় হয় এবং সকলেই ইয়াযীদের হাতে বাই’আত গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন।


      সর্বোপরি হযরত হুসাইন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রাযি. সহ আরও কতিপয় শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কিরাম হযরত মু‘আবিয়া রাযি. সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে পরামর্শ দেন আপনি আমাদেরকে ইয়াযীদের হাতে বাই’আতের জন্য শক্তি প্রয়োগ করবেন না। আমরা আপনার নিকট তিনটি প্রস্তাব পেশ করছি তার যে কোন একটি আপনি গ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সাথে আপনার অন্য কোন বিরোধ নেই। প্রস্তাব তিনটি হলঃ


   *একঃ* খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নীতি অনুসরণ করুন। অর্থাৎ আপনি কাউকে মনোনীত না করে মুসলমানদের উপর এ দায়িত্বভার ছেড়ে দিন। তারা যাকে ভাল মনে করেন তিনিই মনোনীত হবেন সকলের আমীরুল মুমিনীন।


   *দুইঃ* আপনি আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু’র পন্থা অবলম্বন করুন। অর্থাৎ আপনি এমন এক ব্যক্তির নাম পেশ করুন যার সাথে আপনার বংশের কোন সম্পর্ক থাকবে না, থাকবে না আপনার আত্মীয়তার কোন বন্ধন এবং দায়িত্ব পালনের যোগ্যতাও তার মাঝে পাওয়া যাবে।


   *তিনঃ* আপনি ফারুকে আযম হযরত উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু’র পদ্ধতি অবলম্বন করুন। অর্থাৎ আপনি ছয় জন বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্বের উপর এ দায়িত্ব অর্পণ করে যান তারাই নির্ধারণ করবেন পরবর্তী খলীফা কে হবেন। এ ছাড়া চতুর্থ আর কোন প্রস্তাব আমরা মানতে রাজী নই।


      কিন্তু হযরত মু‘আবিয়া রাযি. তদুত্তরে বললেন- সারা মুসলিম বিশ্ব ইয়াযীদের হাতে বাই’আত গ্রহণ করেছে। এখন আপনাদের এ কয়জনের বিরোধিতার পরিণাম মুসলমানদের জন্য আদৌ কল্যাণকর হবে না। এ পরিস্থিতিতে সকলেরই উচিত ইয়াযীদের হাতে বাই’আত গ্রহণ করা।


      হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. খেলাফত কালে পরিস্থিতি আর ঘোলাটে হওয়ার সুযোগ পায়নি। মুসলমানদের পরস্পর মতভেদ এড়ানোর জন্য সিরিয়া ও ইরাকবাসীদের বৃহৎ অংশের পর মুসলিম জনতার আরও একটি বৃহদাংশ ইয়াযীদের হাতে বাই’আত গ্রহণ করে। কিন্তু মদীনার অধিবাসীগণ বিশেষতঃ হযরত হুসাইন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. ইয়াযীদের হাতে বাই’আত গ্রহণ না করার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রইলেন। তাঁরা কারও ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন- ইয়াযীদ কোন অবস্থাতেই খলীফাতুল মুসলিমীন হওয়ার যোগ্য নয়।


      এ অবস্থায় হযরত মু‘আবিয়া রাযি. এর ইন্তিকালের পরে ৬০ হিজরীতে ইয়াযীদ সিংহাসনে আরোহণ করেন। হযরত মুআবিয়া রাযি. স্বীয় জীবদ্দশায় বিভিন্ন এলাকার মুসলমানদের থেকে তার উত্তরাধিকারী হওয়ার বাই’আত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কুরাইশের খ্যাতনামা লোকজন এবং হেজাযের নেতৃবৃন্দ যেমন- হযরত ইমাম হুসাইন রাযি., আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এবং আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর রাযি. বাই’আত করলেন না, এর বিস্তারিত আলোচনা ইসলামী ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে।


      একথা স্পষ্ট যে, এসব হযরত নিজেদের ব্যক্তিগত গুণাবলী আর বংশীয় মর্যাদার কারণে সমস্ত উম্মতে উপরে প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন। তাদের এই মতবিরোধ কোন সাধারণ ব্যাপার ছিল না। তাই সিংহাসনে আরোহণের সাথে সাথেই ইয়াযীদ এদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন।


      ওলীদ ইবনে উতবা ইবনে আবু সুফিয়ান তখন মদীনার শাসক ছিলেন। ইয়াযীদ তার নিকট হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. মৃত্যুর সংবাদ পাঠালেন আর এসব হযরতের নিকট থেকে বাই’আত গ্রহণের তাকিদ করলেন। ওলীদ ইবনে উতবা এ বিষয়ে সফলতার জন্য মারওয়ান ইবনে হাকামের সাথে পরামর্শ করলেন যিনি তখন মদীনাতেই থাকতেন। মারওয়ান বলল আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. আর আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকরের রাযি. ব্যাপারে চিন্তার কোন কারণ নেই কেননা তারা ক্ষমতার দাবীদার নয়। তবে হুসাইন ইবনে আলী রাযি. আর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে রাযি. এক্ষুনি ডেকে ইয়াযিদ এর পক্ষে বাই’আত করতে বাধ্য কর। যদি তারা না শোনে তাহলে জীবিত বাইরে যেতে দিওনা। যদি আমীরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে আর তারা বাই’আত না করে তাহলে এরা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং বিরোধিতার সুর উঁচু হয়ে যাবে।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

29. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৬ ====🥀*


    *উত্তরসূরী নির্বাচন ও ইয়াযীদ প্রসঙ্গ* 


 *হযরত মুআবিয়ার রাযি. উত্তরসূরী নির্বাচন ও ইয়াযীদ প্রসঙ্গঃ* 


      হযরত মুআবিয়া রাযি. মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বৎসরকাল ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম উম্মাহর খিদমত করেন। এর মধ্যে তিনি সাবায়ীদের ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করেন এবং সাবায়ীদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া খিলাফত ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসবাদী সাবায়ীদের দমন করে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। মুসলমানদের পারস্পরিক গৃহযুদ্ধের ক্ষতির প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রথম কাতারের ভুক্তভোগী হিসেবে তিনি একজন যোগ্য উত্তরসূরী মনোনয়ন পূর্বক নিজের জীবদ্দশায় তাঁর হাতে জনসাধারণের বাই’আত নিয়ে রাখার আকাঙ্খা পোষণ করতেন। যাতে তার মৃত্যুর পর পর খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে শত্রুদের ষড়যন্ত্রে বা অন্য কোন কারণে পুনরায় মুসলিম জাতির মাঝে বিভেদ সৃষ্টির কোন অবকাশ না থাকে।


      বর্তমান খলীফা তাঁর জীবদ্দশায় মুসলিম উম্মাহর নেতৃস্থানীয় ও গুণীজনদের সংগে পরামর্শক্রমে যে কোন যোগ্য ব্যক্তিকে পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে তার হাতে জনসাধারণের বাইআত গ্রহণের পর তাকে খলীফা ঘোষণা করে যেতে পারেন। এমনকি পিতৃত্ব বা অন্য কোন রক্ত সম্পর্কের কারণেও মনোনয়ন দানের বৈধতার রদবদল হবে না। অবশ্য পিতা-পুত্রের ক্ষেত্রে অর্থাৎ পূর্ববর্তী খলীফা যদি নিঃস্বার্থ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে শুধুমাত্র দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তার পুত্রকে ভাবী খলীফারূপে মনোনয়ন দিতে চান তাহলে এর জন্য শর্ত হচ্ছে- খলীফাকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সমর্থন ও অনুমোদন নিতে হবে। কেবলমাত্র তখনই পুত্রের মনোনয়ন ও তার হাতে জনসাধারণের বাই’আত গ্রহণ বৈধ হবে। এবং এটাকে রাজতন্ত্র বলা হবে না। রাজতন্ত্র বলা হয় যোগ্যতার বিচার না করে শুধু বংশানুক্রমিক হারে শাসনের ধারাকে।


      এ উদ্দেশ্যে পরামর্শ চেয়ে হযরত মুআবিয়া রাযি. নিজের এক গভর্নরের বরাবর যে চিঠি লিখেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “আমার মৃত্যু অতি নিকটবর্তী। আমার আশংকা হয় যে আমার মৃত্যুর পর উম্মাহর ঐক্যে আবার ফাটল দেখা দিতে পারে। এ কারণে আমার ইচ্ছা হয় নিজের জীবদ্দশাতেই কোন যোগ্য ব্যক্তিকে আমার স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করে দিয়ে যাই। অন্যত্র তিনি একবার বলেন জনসাধারণকে আমি রাখালবিহীন বকরীর পালের মত ছেড়ে যেতে চাই না।”


      এ লক্ষ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম ও প্রিয় সাহাবায়ে কিরামের মধ্য হতে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী বিশিষ্ট সাহাবী রাযি. কুফার গভর্নর হযরত মুগীরাহ বিন শুবাহ রাযি. এই বলে পরামর্শ দেন যে হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাতের পর সাবায়ীদের ষড়যন্ত্রে মুসলমানদের মাঝে যে মতানৈক্য ও ভয়াবহ রক্তপাতের সূত্রপাত হয় তা কেউ বিস্মৃত হয়নি। সুতরাং আপনার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য পূর্ণ যোগ্যতাধারী ইয়াযীদের পক্ষে জনগণের বাই’আত নিয়ে তাকে আপনার স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে যান। যাতে আপনার মৃত্যুর পর শত্রুপক্ষ হতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তিনি মুসলমানদের আশ্রয়স্থল হতে পারেন এবং খিলাফতের ব্যাপারে কোনরূপ গণ্ডগোল ও রক্তপাতের আশংকা না থাকে।


      বলাবাহুল্য ইয়াযীদ আমীরুল মুমিনীনের প্রিয়পুত্র ও সাহেবজাদা হিসেবে গোটা ইসলামী উম্মাহর বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তার নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারিবারিক সম্ভ্রম, প্রশাসনিক দক্ষতা ও একাধিক সমর নৈপূণ্যের বিচারে তিনি খিলাফতের জন্য যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। স্বয়ং হযরত মুআবিয়া রাযি. তাকে বিশিষ্ট সাহাবীগণের রাযি. উপস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী খারিজীদের দমনে এবং তৎকালের অন্যতম পরাশক্তি রোমীয়দের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে প্রেরণ করে তার সাহসিকতা ও সময় নৈপুন্যের স্বাক্ষর অবলোকন করেন। সুতরাং ইয়াযীদের তৎকালীন এসকল গুণাবলী শুধু হযরত মুগীরাহ বিন শুবাহ রাযি. বা হযরত মুআবিয়ারই রাযি. দৃষ্টিগোচর ছিল না বরং অধিকাংশ জীবিত সাহাবী রাযি. তখন ইয়াযীদের মনোনয়নকে সমর্থন করেন এবং তার পক্ষে তারা নিয়মিত প্রচারণাও চালিয়ে যান। ফলে মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলে সুধী ও গুণীজনেরা স্ব-স্ব এলাকার প্রতিনিধিসহ আমীরুল মুমিনীনের আবাসস্থল দামেস্ক আগমন করে হযরত মু’আবিয়ার রাযি. সঙ্গে সাক্ষাত করে তারা নিজেদের পক্ষ হতে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফারূপে মনোনয়ন দানের প্রস্তাব পেশ করতে থাকেন।হযরত মুআবিয়া রাযি. তাদের এ ব্যাপারে বিবেচনার আশ্বাস দেন এবং বলেন- এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। যা আল্লাহর মঞ্জুর আছে তাই হবে। এরই মধ্যে সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ সমূহের প্রতিনিধিদল এসে হযরত মুআবিয়ার রাযি. প্রতি ইয়াযীদের মনোনয়নের ব্যাপারেই অনুরোধ জানাতে থাকেন। তখন হযরত মুআবিয়াও রাযি. স্বীয় পুত্র ইয়াযীদকে মনোনয়ন দানে মনস্থ করেন।


      অতঃপর প্রশাসন ও মুসলিম উম্মাহর অন্যান্য নেতৃস্থানীয়গণের সংগে এ ব্যাপারে পরামর্শ করলে তারাও এ ব্যাপারে সমর্থন দান করেন। তখন শুধু হিজায তথা মক্কা মদীনার নেতৃবৃন্দের মতামত জানা বাকি ছিল। মক্কা মদীনাবাসীদের মধ্যে শুধু কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ইয়াযীদের ব্যাপারে একারণে আপত্তি জানালেন যে, হযরত হুসাইন, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, আবদুল্লাহ বিন যুবাইর ও আবদুর রহমান বিন আবু বকর রাযি. তখনো জীবিত ছিলেন। আর তাঁরা সকলেই সাহাবী রাযি. হওয়ার কারণে ইয়াযীদের চেয়ে উত্তম ছিলেন এবং ধার্মিকতা ও প্রশাসনিক যোগ্যতার ক্ষেত্রেও তারা ইয়াযীদের চেয়ে উত্তম ছিলেন।


      কিন্তু তাদের মতামত এজন্য প্রাধান্য পেল না যে সাহাবায়ে কিরামের এক বিরাট অংশ এ কারণে ইয়াযীদের মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন যে ইমাম হুসাইন প্রমুখগণ ইয়াযীদের চেয়ে যোগ্যতম হলেও ইয়াযীদ এক দিকে খিলাফতের দায়িত্ব পালনে বাহ্যিকভাবে কম যোগ্য ছিল না। যার বিবরণ পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর যোগ্যতর ব্যক্তির বর্তমানে যোগ্য ব্যক্তিকে খলীফা মনোনীত করার বৈধতা ইসলামে আছে। অন্যদিকে ইয়াযীদ আমীরুল মুমিনীন হযরত মুআবিয়া রাযি. এর মত বিচক্ষণ প্রশাসক সাহাবীর রাযি. পুত্র হওয়ার সুবাদে সর্বদা পিতার সান্নিধ্যে থাকার বদৌলতে খিলাফত শাসনকার্য ও রাজ্য পরিচালনায় বেশ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার পর অতিরিক্ত যোগ্যতা ও পাণ্ডিত্যের চেয়ে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক বেশী সে কারণে হযরত মুআবিয়া রাযি. ও আন্তরিকভাবে ইয়াযীদকেই খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করতেন। তাঁর ধারণায় উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণও এতে নিহিত ছিল। এ কারণে একবার হযরত উসমানের রাযি. পুত্র সাঈদের অনুযোগের উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম তোমার এ দাবী যথার্থ যে, তোমার পিতা আমার চেয়ে উত্তম এবং রাসূলুল্লাহর নৈকট্যভাজন ছিলেন। আর তোমার মাও ইয়াযীদের মায়ের চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু ইয়াযীদ সম্পর্কে আমাকে বলতেই হবে যে গোটা ভূখণ্ড তোমার মত লোকে ভরে গেলেও ইয়াযীদের যোগ্যতার পাল্লা ভারী হবে। তাই উম্মাহর ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফা বানানোর বিকল্প ছিল না।


      অপরদিকে বনু উমাইয়া গোত্রই তখন কুরাইশের প্রধান শক্তি ছিল। উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও ছিল তাদেরই অনুবর্তী। আর বনু উমাইয়ার সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এক বাক্যে ইয়াযীদের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ সকল কারণে উম্মাহর ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফা বানানোই যুক্তিযুক্ত ছিল। ফলে ইয়াযীদই চূড়ান্তরূপে পরবর্তী খলীফা হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন এবং ৬০ হিজরীতে হযরত মুআবিয়ার রাযি. ইন্তিকালের পর ইয়াযীদই যথারীতি খলীফা নিযুক্ত হন।


      ইয়াযীদকে চূড়ান্তরূপে মনোনয়ন দানের পূর্বে ও পরে হযরত মুআবিয়া রাযি. বিভিন্ন সময় আপন প্রভুর নিকট যেসব দু’আ করেন সেগুলো তার ইখলাস এবং পুত্র ইয়াযীদের মনোনয়নে পিতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিঃস্বার্থ ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন-জুমু’আর এক খুতবায় ‘আসমানের দিকে তাকিয়ে তিনি এই দু’আ করেছিলেনঃ হে আল্লাহ! খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করেই যদি আমি ইয়াযীদকে মনোনয়ন দিয়ে থাকি তাহলে তার পক্ষে আমার এ সিদ্ধান্তকে তুমি পূর্ণতা দান করো। পক্ষান্তরে পুত্রের প্রতি পিতার মোহই যদি হয় এর কারণ তাহলে তা তুমি ব্যর্থ করে দাও।


      অন্য এক খুতবায় তিনি বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ! ইয়াযীদকে যদি তার যোগ্যতার কারণেই মনোনীত করে থাকি, তাহলে সে মর্যাদায় তাকে উন্নীত কর এবং তাকে মদদ কর। আর যদি পুত্রের প্রতি পিতার সহজাত ভালবাসাই এ কাজে আমাকে প্ররোচিত করে থাকে তাহলে আগেই তাকে তুমি তুলে নাও। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তার মনে যদি সংশয় থাকত বা তিনি যদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুত্রত্বের মোহে পড়ে পরবর্তী খলীফা হিসেবে পুত্রের মনোনয়নের অপচেষ্টায় লিপ্ত হতেন তবে তিনি জুমুআর দিনে হাজার হাজার লোকের সম্মুখে মসজিদের মিম্বরে দাড়িয়ে দুআ কবুল হওয়ার যথার্থ মুহূর্তে পুত্রের নামে এরূপ কঠিন দু‘আ কখনো করতে পারতেন না।


      সাবায়ী ও খারিজীদের অপকীর্তির কথা বলাই বাহুল্য যারা হযরত মুআবিয়াকে রাযি. আপন চক্ষুশূল মনে করত এবং তাঁর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপপ্রচারেও কুন্ঠাবোধ করত না। তারা যে ইয়াযীদের মনোনয়নকে ব্যক্তি স্বার্থে প্রণোদিত বলে আখ্যা দিবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। তারা ইয়াযীদের বাই’আত গ্রহণে বল প্রয়োগ ঘুষ প্রদান ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের ন্যায় ঘৃণিত অসুদপায় অবলম্বনের মিথ্যা ও উদ্ভট অভিযোগ পর্যন্ত আনতে দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু দুঃখবোধ হয় সে সকল বিবেকবান মুসলমান ভাইদের প্রতি যারা পরবর্তীতে ইয়াযীদের শাসনামলে কুফার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের নির্দেশে কারবালা প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় দৌহিত্র সাইয়িদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত হুসাইন রাযি. এর মর্মন্তুদ শাহাদাতের ঘটনাকে পুঁজি করে এর সকল দায় দায়িত্ব রাসূলুল্লাহর-ই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর প্রিয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. উপর চাপিয়ে দেন এবং তার অযোগ্য পুত্রকে খলীফা বানিয়ে ইসলামী খিলাফতের পরিবর্তে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করে নিজেদের ঈমানের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেন।


      সাহাবীগণের রাযি. সমালোচনাকারী বা তাদের ব্যাপারে মনে মনে সংকীর্ণতা পোষণকারীদের প্রতি মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট সতর্কবাণী হচ্ছেঃ


      আল্লাহুকে ভয় কর! আল্লাহুকে ভয় কর! আমার সাহাবীগণের রাযি. ব্যাপারে। আমার পরে তাঁদেরকে তোমরা সমালোচনার পাত্র বানিও না। যে আমার সাহাবীগণকে রাযি. ভালবাসে সে আমার মুহাব্বাতেই তাদেরকে ভালবাসে। আর যে আমার সাহাবীগণের রাযি. প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখার দরুনই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। (বুখারী শরীফ-হাদীস নং-৩৬৭৩)


      বস্তুতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্রের মর্মান্তিক শাহাদাতের সাথে কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও যে নরাধম জড়িত, ইসলামী খিলাফতের পবিত্র আসনে মুহূর্তের জন্যও তাকে অধিষ্ঠিত রাখার কল্পনা করা যে কোন মুসলমানের পক্ষে কষ্টকর। কিন্তু ঘটনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ইয়াযীদকে যখন মনোনয়ন দেয়া হচ্ছিল তখন কিন্তু কারবালা ট্রাজেডির কোন অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি পরবর্তী কালের দোষ ত্রুটিগুলো ইয়াযীদের চরিত্রে তখন বিদ্যমান ছিল না। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখন সে আমীরুল মুমিনীনের প্রিয় পুত্র ও সাহাবীজাদা রাযি. হিসেবে গোটা মুসলিম জাতির বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিল এবং তার নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারিবারিক সম্ভ্রম প্রশাসনিক দক্ষতা ও সমর নৈপূণ্যের বিচারে তাকে খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করার পূর্ণ অবকাশ ছিল। তদুপরি ইয়াযীদের এ যোগ্যতা শুধু যে পিতা মুআবিয়ার রাযি. চোখেই ধরা পড়েছিল তা নয়। বরং বহু নেতৃস্থানীয় সাহাবী রাযি. ও তাবিয়ীগণও ইয়াযীদের প্রতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। যে কারণে তারাই প্রথমে হযরত মুআবিয়ার রাযি. প্রস্তাবটির ভাল-মন্দ বিবেচনা করে তা কার্যকর করেন মাত্র। পূর্বে এ কথাও উল্লেখিত হয়েছে যে প্রায় সব সাহাবী রাযি. ও তাবিয়ীগণই তখন ইয়াযীদের খলীফা মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন। ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে পানাহারের এক মজলিসে তাঁর নিকট হযরত মুআবিয়ার রাযি. মৃত্যু সংবাদ এসে পৌছলে তিনি অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলেন। অতঃপর বললেন- হে আল্লাহ মুআবিয়ার রাযি. প্রতি রহমত নাযিল কর পূর্ববর্তীদের তুলনায় তিনি উত্তম ছিলেন না বটে তবে পরবর্তীরাও তাঁর তুলনায় উত্তম হবে না। ইয়াযীদ অবশ্যই তাঁর খান্দানের যোগ্য উত্তরসূরী। সুতরাং তোমরা (উপস্থিত হাজিরানে মজলিস) স্ব-স্ব জ্ঞানে থেকে তাঁকে আনুগত্য ও বাইআত দান কর।


      এ অবস্থায় ইয়াযীদের কোন দুস্কর্মের জন্য সাহাবী হযরত মুআবিয়া রাযি. কে দায়ী করে তাঁর সম্পর্কে কোনরূপ সমালোচনা করা শুধু যে অযৌক্তিক তাই নয়। বরং কুরআন হাদীসের আলোকে তা জগণ্যতম অন্যায় ও নাজায়িয কাজ। কেননা সাহাবায়ে কিরাম রাযি. হতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপত্তিজনক কোন কাজ সংঘটিত হলেও সেখানে শরী‘আতের বিধান হচ্ছে তার যথা সম্ভব এমন ব্যাখ্যা প্রদান করা যা সাহাবিয়্যাতের মহান মর্যাদার সাথে সর্বদিক দিয়ে সংগতিপূর্ণ হয়। পক্ষান্তরে এমন কোন ব্যাখ্যা প্রদান কিছুতেই বৈধ নয় যা তাদের জীবন চরিত্র ও সাহাবীসুলভ পবিত্রতার সাথে সংঘর্ষপূর্ণ অনুমিত হয়। কারণ এর ভিত্তি মূলতঃ রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাহাবীর রাযি. প্রতি বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞা পোষণের উপর প্রতিষ্ঠিত যা নিঃসন্দেহে ঈমান বিধ্বংসী আচরণ। সে ক্ষেত্রে ইয়াযীদের অন্যায়ের কারণে হযরত মুআবিয়ার রাযি. ন্যায় বিশিষ্ট সাহাবীকে রাযি. দায়ী করা যে কত বড় পাপ এবং নিজের ঈমানকে সংকটে ফেলার নামান্তর তা সহজেই অনুমেয়।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

28. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৫ ====🥀*


              *শিয়া-রাফেজীর স্বরূপ* 


      যে সমস্ত শিয়ারা হযরত আলীর রাযি. ভক্তির আতিশয্যে এরূপ জঘন্য আক্বীদা পোষণ করে যে-


   *(ক)* হযরত আলীই প্রকৃতপক্ষে সর্বশেষ নবী হওয়ার যোগ্য ও আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু আল্লাহ পাক যখন ফেরেশতা হযরত জিবরাইল আ. মারফত হযরত আলীর রাযি. নিকট ওহী পাঠালেন তখন জিবরাঈল আ. ভুলবশতঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ওহী নিয়ে আসেন। ফলে তিনিই শেষ নবী হয়ে যান। অতঃপর মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিরোধানের পর হযরত আলীই রাযি. খিলাফতের হকদার ছিলেন। কিন্তু আবু বকর, উমর ও উসমান রাযি. তাঁর খিলাফত ছিনিয়ে নেন। এ জন্য তারা এবং অপরাপর সাহাবী রাযি. যারা তাদের সমর্থন করে সবাই মুরতাদ ও কাফির হয়ে গেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)।


   *(খ)* এমনকি তাদের মধ্য হতে একদল হযরত আলীর রাযি. জীবদ্দশায় তাকে খোদা পর্যন্ত ডাকতে আরম্ভ করেছিলেন। স্বয়ং হযরত আলী রাযি. তাদের বুঝিয়ে ব্যর্থ হয়ে এহেন কুফরী কাজের জন্য হত্যার হুমকি দিলে তারা বলতে থাকে আপনি আমাদের মা’বুদ। আপনার যা খুশী তা করার অধিকার আছে। আমাদের তাতে আপত্তি করার অধিকার নেই। অতঃপর হযরত আলী রাযি. তাদের একাংশকে হত্যা করলেও তাদের অপরাংশকে এ ভ্রষ্টতা হতে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হন।


   *(গ)* শিয়া-রাফিজীদের আরেক দল বিশ্বাস করত এবং একথা তারা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে মুসলিম জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত যে, কুরআন বিকৃত হয়ে গেছে। আসল কুরআন হযরত আলীর রাযি. কাছে সংরক্ষিত আছে। তাছাড়া হযরত আলী রাযি. কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিরিক্ত নব্বই হাজার কালাম দিয়ে গেছেন ইত্যাদি। স্বয়ং হযরত আলী রাযি. কে তাঁর জীবদ্দশায় একাধিক স্থানে বিভিন্ন তাবেয়ী রহ. এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এসব কথা নাকচ করে দিয়েছেন। যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত হাদীসগ্রন্থ সমূহে বিদ্যমান রয়েছে।


   *(ঘ)* বার ইমামপন্থী শিয়া ইছনা আশারিয়া রা হযরত আলী রাযি. হযরত হাসান ও হুসাইন রাযি. সহ তাঁর বংশধরের মধ্যে বারজন বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গকে ইমাম হিসেবে নবী সম বরং কোন কোন ক্ষেত্রে নবীদের ঊর্ধ্বে মর্যাদা দিয়ে তাদের নামের সংগে “আলাইহিস সালাম” বলেও লিখে থাকে। যা সাধারণতঃ নবী ও ফেরেশতাগণের নামের সাথেই ব্যবহার করার কথা। এমনকি ইসলামী হুকুমতের দাবীদার শিয়া ইছনা আশারিয়া পন্থী বর্তমান ইরান সরকারের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী তার আরবী ভাষায় রচিত আল-হুকুমাতুল ইসলামিয়াহ, গ্রন্থে দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্টভাবে লিখেছেনঃ “ইমাম এর মর্যাদা নবুওয়াতের উপরে। আর আমাদের ইমামগণ এমন মর্যাদার অধিকারী যেথায় আল্লাহ্‌র কোন নবী রাসূল এবং নিকটতম ফেরেশতাও পৌছতে পারেন না। যে কারণে তাঁদের রয়েছে শরী‘আতের যে কোন বিধি বিধান যে কোন মুহূর্তে পরিবর্তনের সীমাহীন অধিকার। (নাউযুবিল্লাহ)


      কত বড় জঘন্য ও দুঃখজনক কথা যে, এহেন জঘন্য আক্বায়িদে বিশ্বাসী শিয়া রাফিজীদের অকাট্য মিথ্যাচারকে পুঁজি করেই কেবল খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত মুআবিয়ার রাযি. ন্যায় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘনিষ্ঠ অতি প্রিয় ও বিশিষ্ট সাহাবী রাযি. এবং আল্লাহর প্রেরিত কালামে পাকের ওহী লেখকরূপে স্বীয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উপর অত্যন্ত জঘন্যভাবে হামলা করা হয়েছে। বস্তুতঃ এ অপপ্রচার পৃথিবীর একমাত্র অপরিবর্তিত অবিকৃত ও স্বীয় আল্লাহ পাক কর্তৃক হিফাজতকৃত আল-কুরআনের প্রতি মুসলিম উম্মাহর ইস্পাত কঠিন অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসকে দুর্বল করার লক্ষ্যে ইয়াহুদী খৃষ্টানদের প্ররোচনায় উদ্ভাবিত ষড়যন্ত্র বৈ কিছু নয়।


      হযরত মুআবিয়া রাযি. তো সেই ভাগ্যবান সাহাবী রাযি. যিনি মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন শ্যালক ও কাতিবে ওহী বা ওহী লিপিবদ্ধকারী হওয়ার সাথে সাথে মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক মাকবুল দু‘আয় ধন্য হয়েছেন। যেমন তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এভাবে দু’আ দিয়েছেনঃ


      “হে আল্লাহ্‌ তাকে (মুআবিয়াকে) হিদায়াতের পথ প্রদর্শক ও হিদায়াত প্রাপ্ত করে দাও এবং তাঁর মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত দান কর।”


      অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছেঃ ‘‘হে আল্লাহ! মুআবিয়াকে কিতাবী ইলম ও গণনা জ্ঞান দান কর এবং জাহান্নামের আযাব থেকে তাকে রক্ষা কর।”


      তাঁর সম্পর্কে একদা ফেরেশতা হযরত জিবরাইল আ. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছিলেন হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআবিয়াকে সালাম জানাবেন তাঁর মঙ্গলের প্রতি বিশেষ নজর রাখবেন। কেননা তিনি আল্লাহর কিতাব ও ওহীর উপর স্বীয় আল্লাহরই নিযুক্ত আমানতদার এবং তিনি অতি উত্তম আমানতদার।


      এমনিভাবে বড় বড় সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়ীগনের রাযি. দৃষ্টিতে হযরত মুআবিয়া রাযি. যে কত উঁচু মর্যাদার অধিকারী ছিলেন এবং তাঁর মহান মর্যাদার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর প্রতি তাদের আচরণ ও প্রশংসামূলক বাণীসমূহ হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে এত অধিক হারে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে তার ক্ষুদ্র একটি অংশের স্থান সংকুলান হওয়াও অসম্ভব। হযরত উমর ফারুক রাযি. এর ন্যায় বিচক্ষণ খলীফা হযরত মুআবিয়া রাযি. কে দীর্ঘদিন শাসন কার্যে নিয়োজিত রেখেছিলেন এবং তার শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে আমানতদারী ও দক্ষতার ভিত্তিতে বার বার পদোন্নতি দান করেছিলেন। এটা এ বিষয়ের একটা মজবুত প্রমাণ যে, সাবায়ীচক্র কর্তৃক হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগসমূহ একেবারেই অবাস্তব, মিথ্যা ও গর্হিত।


      হযরত মুআবিয়ার রাযি. এ সকল কামালাত ও ফজীলতের কথা স্মরণ রেখেই তৎকালীন মুসলমানগণ সাবায়ীদের এ সকল অপপ্রচারে কান দেননি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আজ চৌদ্দশত বছর পর আবারো সেই কুখ্যাত ইবনে সাবা ও সাবায়ীদের উত্তরসূরীরা এহেন বুযুর্গ সাহাবী রাযি. সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় জ্ঞানের স্বল্পতা ও সঠিক ইসলামী ইতিহাস অধ্যয়নের অভাবের সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পাচ্ছে। এ শ্রেণীর লোকদের থেকে মুসলমানদের সতর্ক থাকতে হবে।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

27. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৪ ====🥀*


        _*রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ভবিষ্যদ্বানী*_ 


      জ্ঞান-পাপী কতিপয় লেখকের হাতে আঁকা মুসলিম উম্মাহর অবক্ষয়ের এ চিত্র যেমন ইতিহাসের উত্থান পতনের ক্রম বিবর্তন ধারার বিরোধী তেমনি তা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান ভবিষ্যদ্বানীরও পরিপন্থী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ


      “আমার যুগই হল সর্বোত্তম যুগ অতঃপর এর পরবর্তী (সাহাবাগণের রাযি.) যুগ অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবে‘ঈনগণের রহ.) যুগ।”


      *বস্তুতঃ* হযরত মুআবিয়ার রাযি. স্বর্ণযুগ তুল্য ও মুসলিম জাহানের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের সুন্দর শাসনামলের এ বীভৎস চিত্র সাবায়ী খারেজী ও শিয়া রাফেজীদেরই কল্পিত মিথ্যা ও জাল বর্ণনায় অংকিত।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

26. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৩ ====🥀*


*অপপ্রচারণার কবলে হযরত মুআবিয়া রাযি.* 


      ঘটনা পরম্পরায় হযরত মুআবিয়া রাযি. উক্ত মুনাফিক সন্ত্রাসবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী দলটির বিরুদ্ধে যেরূপ প্রতিরোধী হয়েছিলেন, তদ্রূপ তারাও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছিল। খলীফা হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে তারা তাদের যে স্বভাবসুলভ মিথ্যার বহর ছড়িয়ে জনসাধারণকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করার অস্ত্র ব্যবহার করেছিল সেই অস্ত্রই তারা হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিরুদ্ধে আরো অধিক ধারালো রূপে বিরামহীনভাবে চালিয়ে গেল।


      গোয়েবলসের মিথ্যা প্রচারের নীতি অনুসারে সেই সব প্রচারণা কতিপয় বিভ্রান্ত ঐতিহাসিকের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছিল। অথচ হযরত মুআবিয়ার রাযি. শাসনামলের সঠিক ও বাস্তব চিত্র এই ছিল যা ইতিপূর্বে মুসলিম ঐতিহাসিকগণের বিশুদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থসমূহ হতে উদ্ধৃত হয়েছে। ঘটনার সত্য-মিথ্যা সব রকমের বিবরণ সংগ্রহে যে সকল ঐতিহাসিকগণ আত্মতৃপ্তি অনুভব করতেন তাদের এ লেখায় প্রভাবান্বিত হয়ে অনেক খাঁটি মুসলমানও বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং নিজেদের ঈমান আমলকে হুমকির সম্মুখীন করেছেন।


      আর সেসব জাল ইতিহাসের উপর নির্ভর করে কতিপয় সাহাবী রাযি. বিদ্বেষী তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকালের যে চিত্র এঁকেছেন তা আগাগোড়া যুক্তি বিরুদ্ধ ও বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তা মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার ৭৩ ফেরকার মধ্যে একমাত্র সঠিক ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা ও মৌলিক বিশ্বাসের সাথে কেবল অসংগতি পূর্ণই নয় বরং সংঘর্ষপূর্ণও। সুতরাং কোন ক্রমেই উক্ত বর্ণনাসমূহ গ্রহণযোগ্য নয়। ঐ সব তথাকথিত চিন্তাবিদদের লেখার কেরামতিতে সাধারণ পাঠকের মনে এ ধারণাই বদ্ধমূল হয় যে, ক্ষমতার লোভে সাহাবীগণ রাযি. জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনে পারস্পরিক সংঘর্ষ বাঁধিয়ে বহু লোককে হত্যা করেছিলেন। হযরত আলীর রাযি. শাহাদাতের সাথে সাথেই গোটা পরিস্থিতি হঠাৎ বুঝি ডিগবাজি খেয়েছিল এবং ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা তার সকল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে তা শুধু আগ্রাসী শাসনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। খিলাফতে রাশিদা ছিল যাবতীয় কল্যাণ ও সৌন্দর্যের এক অনুকরণীয় আদর্শ। কিন্তু হযরত মুআবিয়া রাযি. খিলাফতের দায়িত্বভার হাতে নেয়ার সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহর জীবন থেকে সেগুলো হঠাৎ করে উবে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত হযরত মুআবিয়া রাযি. রাজতন্ত্র কায়িমের মাধ্যমে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে ছেড়েছেন। (নাউজুবিল্লাহ) এমনিভাবে সেসব বিভ্রান্ত পাঠকদের হৃদয়ে এ ধারণা জন্মে যে, খিলাফতে রাশিদার স্বর্ণ যুগে মুসলিম সমাজ ছিল মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সমাজ। কিন্তু মুহূর্তের ব্যবধানে (হযরত মুআবিয়ার যুগে) সে সমাজেই প্রবৃত্তি ও পাশবিকতা সকল বিভৎসতা ও জঘন্যতা নিয়ে শিকড় গেড়ে বসল। চল্লিশ হিজরী পর্যন্ত খলীফার পক্ষে শরীআতের একটি সাধারণ বিধান লঙ্ঘনও ছিল কল্পনার অতীত। কিন্তু একচল্লিশ হিজরী তথা হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পরিস্থিতি শরী‘আত লঙ্ঘন, দীনের বিকৃতি ও বিদ‘আত প্রবর্তনের রূপ ধারণ করল। চল্লিশ হিজরীতে ঘুষ, লেন-দেনের পাপ ধারণা কারো হৃদয়ের পূর্ণ ভূমিতে ছায়াও ফেলতে পারেনি কিন্তু একচল্লিশ হিজরীতে শাসক শাসিত সবার কাছে তা হয়ে উঠল মায়ের দুধের চেয়ে প্রিয়। চল্লিশ হিজরীতে কাফিরকে পর্যন্ত লা‘নত ও গাল মন্দ করা হত না, আর একচল্লিশ হিজরীতে হযরত আলীর রাযি. বিরুদ্ধে ইসলামী খিলাফতের সর্বত্র গালাগালের ঝড় শুরু হল। চল্লিশ হিজরীতে সাধারণ সৈনিকের মনেও গনীমতের মালে খিয়ানতের কু-বাসনা জাগ্রত হত না কিন্তু একচল্লিশ হিজরীতে খোদ খলীফাতুল মুসলিমীন গনীমতের মাল আত্মসাতের মতলবে রীতিমত ফরমান জারী করতে লেগে গেলেন। চল্লিশ হিজরীতে খিলাফত ছিল ন্যায়-ইনসাফের উজ্জ্বল প্রতীক আর একচল্লিশ হিজরীতে জুলুম ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে দাঁড়াল কেন্দ্রের নীতি। চল্লিশ হিজরীতে শাসক-শাসিতের ঈমানী বল এবং আল্লাহু ভীতি এমনই প্রবলভাবে জাগ্রত ছিল যে, সাধারণ মানুষও প্রকাশ্যে রাজপথে খলীফার পথ রোধ করে দাড়াতে পারত। অথচ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খলীফাতুল মুসলিমীনের জুলুম-নির্যাতন এমনই চরম রূপ ধারণ করল যে মুখে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হল বিবেকের টুটি চেপে ধরা হল এবং চাবুকের নির্মম কষাঘাত হল সত্য ভাষণের পুরষ্কার। 


      মোট কথা চল্লিশ হিজরী শেষ হতে না হতেই ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির এমন সর্বনাশা প্লাবন দেখা দিল যা বিংশ শতকের সভ্য মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আমরা আজ দেখতে পাই।


      এ প্রেক্ষিতে আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই যে, এসব আবোল তাবোল বকে অজ্ঞদের মধ্যে মিথ্যা আবেগ সৃষ্টি করা যায় নিজেকে চিন্তাবিদ ও গবেষক বলে জাহির করা যায় কিন্তু বাস্তব পর্যন্ত পৌছা যায় না বরং এ হচ্ছে এক ধরনের সংকীর্ণতা ইসলাম সম্পর্কে সামগ্রিক জ্ঞানের অভাব এবং অপরিণত মানসিকতার পরিচায়ক।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

25. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -২ ====🥀*


                 *সাবায়ী ফিৎনা নির্মূল* 


 *সাবায়ী ফিৎনা নির্মূলে হযরত মুআবিয়ার রাযি. অবদানঃ* 


      এক কথায় দীর্ঘ প্রায় এক দশকের গৃহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মুসলিম উম্মাহ্‌ হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকালেই ফিরে পায় তাদের হৃত গৌরব। খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসে পূর্ণ শৃঙ্খলা মুসলিম জাতি মুক্তি পায় আব্দুল্লাহ বিন সাবার ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের ভয়াল থাবা থেকে। যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল হযরত উসমানের রাযি. শাসনামলের মাঝামাঝি সময় হতে। অবশেষে তা ফুলে ফেঁপে বীভৎসরূপে ভয়াল মরণ কামড় নিয়ে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই জামাতা মুসলিম জাহানের তৃতীয় ও চতুর্থ খলীফা হযরত উসমান ও আলীর রাযি. শাহাদাত পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান মুআবিয়া ও আমর ইবনুল আসের ন্যায় ইসলামী দুনিযার মহান নেতাগণের হত্যা প্রচেষ্টা এবং মুসলিম উম্মাহকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে হাজার হাজার সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের রাযি. জান কেড়ে নেয়া এবং খিলাফত ব্যবস্থাকে চিরতরে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে মুসলমানদের দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করে দেযার প্রচেষ্টার মাধ্যমে।


      পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান রাযি. অন্যান্য বিচক্ষণতা তৎপরতা শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যেমনি অবদান রাখেন ঠিক তেমনিভাবে মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাস দু‘আয় ধন্য হযরত মুআবিয়ার রাযি. অনবদ্য শাসন ও নিরলস প্রচেষ্টার বদৌলতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের উদ্ধার ও রক্ষা করেন। হযরত মুআবিয়ার রাযি. অক্লান্ত পরিশ্রমে শাসনকার্যে ফিরে আসে স্থিতিশীলতা। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা পুনরায় সু-সংহত হয় এবং মুসলিম বীর যোদ্ধার পুনরায় আরম্ভ করে তাদের স্বভাবসুলভ ইসলামের বিজয়াভিযান। ফলে ইসলামী সীমান্তের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে দিক হতে দিকান্তরে।


      কিন্তু মুসলিম জাহানের এই বিজয়াভিযান ও মুসলমানদের উন্নতি প্রগতি ও যাবতীয় জাগতিক উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যম ঐক্যবদ্ধ খিলাফত ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থার এই স্থিতিশীলতা ইয়াহুদী খৃষ্টানচক্র ও তাদের তল্পিবাহক মুনাফিক সাবায়ী গোষ্ঠীর সহ্য হওয়ার নয়। তাই তারা আবার মেতে উঠে পুরোনো ষড়যন্ত্রে। শুরু হয় হযরত উসমানের রাযি. হযরত মুআবিয়ার রাযি. সুশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ। রটনা করতে থাকে অত্যাচার জুলুম ও স্বজনপ্রিয়তা গোয়েবলসীয় অপপ্রচার। কিন্তু এবার আর মুসলিম জনসাধারণ অতীতের ন্যায় ভুল করে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কায়দায় সাবায়ীদের আরোপিত চটকদার ও গতানুগতিক মিথ্যা অভিযোগ সমূহে কান দেয়নি এবং তাদের পরীক্ষিত নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তো করেইনি, বরং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে সর্বত্র সহযোগিতা করে।


      যেহেতু হযরত উসমানের রাযি. যুগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা সাবায়ী দল মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের (যা ছিল তাদেরই সৃষ্ট) সুযোগে বিরাট শক্তি ও প্রভাবশালী দলরূপে আত্মপ্রকাশ করে প্রকাশ্যেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করা আরম্ভ করে দিয়েছিল। হযরত হাসান রাযি. খলীফা হয়ে তাদেরকে দমনের জন্য একমাত্র হযরত মুআবিয়া রাযি. কেই উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করে তাঁর হাতে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে দিয়েছিলেন। তাই তিনি সর্বসম্মত ও ঐকমত্যপূর্ণ খলীফা মনোনীত হয়ে ঐ মুনাফিক সন্ত্রাসবাদী দলকে দমন করাকেই নিজের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য মনে করলেন।


      অবশ্য হযরত মুআবিয়া রাযি. প্রথম তাঁর প্রবাদতুল্য স্বভাবসুলভ সহনশীলতা ও নম্রতার ব্যবহার করেন। সাবায়ী খারিজীরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তারা স্বীয় বিশ্বাসে ছিল কট্টর এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ছিল অনড়। শেষ রক্ত বিন্দু বাকি থাকা পর্যন্ত জান হাতে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়া ছিল তাদের স্বভাব ।এতে কোন লোভ লালসা ভয় ভীতি বা অন্য কোন চিন্তা কখনই তাদের পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারত না। এ প্রেক্ষিতে এ ধরনের একটি সুসংগঠিত ও চরমপন্থি দলের নিয়ন্ত্রণ ও দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত বিচক্ষণ শাসকের প্রয়োজন ছিল যা হযরত মুআবিয়ার রাযি. মাঝে যথাযথভাবেই বিদ্যমান ছিল। তিনি তাদের সংগে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও নম্র আচরণ প্রদর্শন করলেন এবং তাদের বাড়াবাড়ি সমূহের মুকাবিলার ধৈর্য্য ও সহ্যের এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যার নজীর পৃথিবীর শাসকদের ইতিহাসে মেলা ভার।


      এতদসত্ত্বেও সাবায়ী গোষ্ঠী সৃষ্ট খারেজী দল শান্তির পথে না এসে অনবরত দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টে ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ। নিযামকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে টুকরা টুকরা করার প্রচেষ্টায় মত্ত থাকে। সুতরাং তাদের রক্তখেলা হতে দেশ ও জাতির রক্ষা কল্পে হযরত মুআবিয়া রাযি. তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন এবং প্রবল প্রতিরোধী হয়ে উঠেন। বিশেষতঃ উক্ত দলের আবির্ভাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বানী করতে গিয়ে হাত মুবারক উঁচিয়ে ইরাকের দিকে ইশারা করতঃ বলেছিলেন- ঐ অঞ্চল হতে তাদের আবির্ভাব হবে। বস্তুতঃ ঘটেছিলও তাই। ইরাকের কেন্দ্রীয় এলাকা বসরা ও কুফাই উক্ত সন্ত্রাসবাদী দলটির অপতৎপরতার ঘাঁটি ছিল। হযরত মুআবিয়া রাযি.তাই বসরা ও কুফায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। এই কঠোরতা ছাড়া আমীরুল মুমিনীন হযরত মুআবিয়ার রাযি. দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বৎসরের শাসন আমলের সুন্দর অবস্থা ইতিহাসের নিম্নবর্ণিত সার সংক্ষিপ্ত বিবৃতি থেকেই অনুধাবন করা যায়ঃ


      হযরত মুআবিয়াহ রাযি. ৪১ হিজরী সনে সর্বসম্মতরূপে খলীফা নির্বাচিত হয়ে স্বীয় পদে বহাল থাকাবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত বহিঃশত্রুদের এলাকায় পূর্ণোদ্দমে জিহাদ অব্যাহত ছিল। আল্লাহর কালিমা তথা দীন ইসলামের প্রতিপত্তি সর্বত্র বিরাজমান ছিল। চতুর্দিক হতে শত্রুপক্ষের বিজিত ধন সম্পদের সমাগম ছিল। তার শাসনামলে মুসলমানগণ শান্তি ও ন্যায়পরায়ণতার মাঝে দিনাতিপাত করছিলেন এবং দয়া ও ক্ষমা উপভোগ করছিলেন। কঠোরতার কোন প্রশ্নই ছিল না।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

24. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -১ ====🥀*


*হযরত মুআবিয়ার রাযি.কীর্তিগাঁথা শাসনামল* 


      হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকালে সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মুসলিম উম্মাহর শক্তি ও গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাতের পর মুনাফিক সাবায়ীদের প্রচেষ্টায় মুসলমানদের দুঃখজনক পারস্পরিক হানাহানিতে মুসলিম শাসনের দিগ্বিজয়ের যে ধারা দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ ছিল, হযরত মুআবিয়াহ রাযি. খলীফা নির্বাচিত হয়ে কাফির শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও মুসলিম জাহানের সীমান্ত সম্প্রসারণের সেই ধারা আবার পুরোদমে উজ্জীবিত করেন। তাঁর শাসনামলেই মধ্য এশিয়ার সিজিস্তান, সুদান, কাবুল ও সিন্ধুর অংশ বিশেষ বিজিত হয়। পঁয়তাল্লিশ হিজরীতে আফ্রিকা অভিযান পরিচালনা করে তিনি বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড ইসলামী খিলাফতের মানচিত্রে সংযোজন করেন। এছাড়া সিসিলি অভিযান এবং কনস্টান্টিনোপল ও সকরকন্দ যুদ্ধ তাঁর আমলেই সংঘটিত হয়। তাঁর খিলাফতকালেই হিন্দুস্তানের ভূখণ্ডে এবং আমু দরিয়া অতিক্রম করে বুখারায় সর্বপ্রথম মুসলিম ফৌজ প্রবেশ করে। মুসলিম ফৌজের এই অব্যাহত বিজয় যাত্রা কাফিরদের শিবিরে নতুন করে ত্রাস সৃষ্টি করে।


      হযরত উসমানের রাযি. খিলাফতকালে সিরিয়ার গভর্নর থাকাবস্থায় তিনি হযরত উসমানের রাযি. অনুমতিতে ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য বিশ্বের প্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ২৭ হিজরীতে ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নৌবহর যোগে সাইপ্রাস অভিযান পরিচালনা করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিম্নোক্ত সুসংবাদের অধিকারী হনঃ


      “আমার উম্মতের যে প্রথম সৈন্যদলটি নৌ অভিযানে অংশ নিবে, তারা নিজেদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিয়েছে।” এ অভিযানে সাহাবীগণের রাযি. এক মুবারক জামা’আত তাঁর সাথে ছিলেন।


      খিলাফত লাভের পর নৌশক্তির উন্নয়নের প্রতি তিনি বিশেষ মনোযোগ নিবিষ্ট করেন। ফলে মিসর ও সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে অসংখ্য জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে অল্প কয়েক বছরে এক হাজার সাতশ’ বৃহদায়তন ও মজবুত জাহাজের সমন্বয়ে গড়ে উঠে এক বিরাট নৌবহর যা রোমদের মুকাবিলায় থাকত সদা প্রস্তুত। এ বিরাট নৌবহরের সাহায্যেই স্বীয় খিলাফত আমলে (হিজরী ৪৯ সনে) তিনি সুফিয়ান বিন আওফের পরিচালনায় কনস্টান্টিনোপলের পথে এক বিরাট বাহিনী প্রেরণ করেন। বহুসংখ্যক বিশিষ্ট সাহাবী রাযি. তাতে শরীক ছিলেন। এ বাহিনী সম্পর্কেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছিলেন-

“মুসলমানদের প্রথম যে বাহিনী কনস্টান্টিনোপলের জিহাদে যাবে, তাদের জন্য মহান আল্লাহর মাগফিরাত নির্ধারিত।”


      হযরত উমরের রাযি. আমলে প্রতিষ্ঠিত ডাক বিভাগ পুনর্বিন্যাস, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে হযরত মুআবিয়া রাযি. উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। বিশাল ইসলামী খিলাফতের সর্বত্র তিনি ডাক বিভাগের জাল বিছিয়ে দেন। এছাড়া সিল মোহর বিভাগ নামে নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাইতুল্লাহ শরীফের খিদমতের জন্য তিনি স্থায়ী সেবক নিযুক্ত করেছিলেন এবং আল্লাহর ঘরের জন্য মূল্যবান রেশমী কাপড়ের গিলাফ তৈরী করেছিলেন।


      সুদীর্ঘ একচল্লিশ বছর তিনি খিলাফতের বিভিন্ন দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছিলেন। এ সুদীর্ঘ শাসনকালের সামগ্রিক পর্যালোচনা শেষে ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. মন্তব্য করে বলেন, “তাঁর শাসনামলে জিহাদের ধারা অব্যাহত ছিল। আল্লাহর দীন অপ্রতিহত গতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে চলছিল এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গনীমতলব্ধ সম্পদের ঢল নেমে এসেছিল। মোটকথা, তাঁর শাসন ছায়ায় মুসলিম জনসাধারণ সুখ-শান্তি এবং ইনসাফ ও সমৃদ্ধপূর্ণ জীবন-যাপন করছিল।”


      জনসাধারণের মনোরঞ্জন, অধিকার ও প্রাপ্য আদায়, ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শরী‘আতের বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। আর তাই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ সাহাবার অন্যতম বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সা’আদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাযি. হযরত মুআবিয়ার রাযি. বাড়ীর দিকে ইঙ্গিত করে স্বতঃস্ফূর্ত ভাষায় বলেছেনঃ ‘‘হযরত উসমানের রাযি. পর এই ঘরের বাসিন্দার (মুআবিয়ার) চেয়ে অধিক ইনসাফকারী কাউকে আমি দেখিনি।”


      হযরত আবু ইসহাক রহ. বলেনঃ হযরত মুআবিয়ার রাযি. শাসনকাল যদি দেখতে, তাহলে ন্যায় ও ইনসাফের কারণে নিঃসন্দেহে তাকে তোমরা ‘মাহদী’ নামে আখ্যায়িত করতে। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক হযরত মুজাহিদ রহ. ও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।


      ইমাম আ’মাশের রহ. মজলিসে একবার হযরত উমর বিন আব্দুল আযীযের রহ. ন্যায়পরায়ণতার আলোচনা শুরু হলে, তিনি বলেনঃ তোমরা উমর বিন আব্দুল আযীযের রহ. প্রশংসা করছো, হযরত মুআবিয়ার রাযি. শাসন যুগ দেখলে কি করতে? লোকে জিজ্ঞেস করল- আপনি কি তাঁর সহনশীলতার কথা বলছেন? তিনি বললেন- না, তাঁর ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের কথাই বলছি।


      হযরত মুআবিয়ার রাযি. ধৈর্য্য ও সহনশীলতা ছিল প্রবাদ তুল্য। এ দু'টো গুণ ছিল তাঁর জীবন ও চরিত্রে অবিচ্ছেদ্য অংশ। চরম বিরুদ্ধাচারণকারীও তার কোন কোন কথার সরাসরি প্রতিবাদ করতো, অশালীন ভাষা ব্যবহার করতো, কিন্তু তা তিনি সহ্য করে নিতেন। বিশিষ্ট মুরুব্বী সাহাবী হযরত জাবির রাযি. বলেনঃ মুআবিয়ার চেয়ে সহনশীল ব্যক্তি আমি আর দেখিনি। হযরত মুআবিয়ার রাযি. নিজেও বলতেনঃ ক্রোধ হজম করায় যে স্বাদ আমি পাই, তা অন্য কিছুতে পাই না।


      কিন্তু এ সহনশীলতা ছিল ততক্ষণ, যতক্ষণ প্রতিপক্ষ শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করত। নীতি ও আইনের প্রশ্নে সামান্যতম নমনীয়তা ছিল না তাঁর চরিত্রে। কোথাও কঠোরতার প্রয়োজন হলে দৃঢ়তার সাথে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন।


       হযরত মুআবিয়ার রাযি. ধৈর্য্য ও ক্ষমা সুন্দর চরিত্রের অসংখ্য ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। ইবনে আওন বলেনঃ হযরত মুআবিয়ার রাযি. আমলে একজন সাধারণ মানুষও তাঁর পথ রোধ করে বলত- মুআবিয়া আমাদের সাথে তোমার আচরণ দুরস্ত করে নাও। নইলে কিন্তু আমরাই তোমাকে দুরস্ত করে ছাড়ব, হযরত মুআবিয়াহ রাযি. বলতেন- ভাই! কি দিয়ে দুরস্ত করবে শুনি? তারা বলত- হাতের এই লাঠি দিয়ে। মুআবিয়া রাযি. বলতেন- আচ্ছা তাহলে এমনিতেই আমি দুরস্ত হয়ে যাচ্ছি।


      খলীফা হযরত মুআবিয়া রাযি. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মসজিদে কুরসী পেতে বসে যেতেন। এ সময় সর্বস্তরের জনসাধারণ বিভিন্ন নালিশ-অভিযোগ এবং অভাব ও প্রয়োজন নিয়ে হাজিত হত। একে একে সবার কথা তিনি মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং যথাসাধ্য তাদের সন্তুষ্ট করতে ও অভাব-অভিযোগ পূরণের ব্যবস্থা করতেন। এভাবে সর্বশেষ ফরিয়াদী বিদায় হওয়া পর্যন্ত তিনি বসে থাকতেন। অতঃপর নেতৃস্থানীয়দের সাক্ষাৎকার দিতেন এবং তাদের বলতেন- “আপনারা স্ব-স্ব গোত্রের ও এলাকার নেতৃস্থানীয় হওয়ার সুবাদের এই বিশেষ মজলিসে উপস্থিত হতে পেরেছেন। সুতরাং এখানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ যারা পায় না, সেসব সাধারণ জনগণের অভাব-অভিযোগ ও তাদের কথা আমার কাছে তুলে ধরা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব।”


      এভাবে দিনের পাঁচটি সময় তিনি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন সাধারণ লোকদের জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য সেখানে সাক্ষাৎ ও অভিযোগ উত্থাপনের অবাধ অনুমতি ছিল। সবাই সেখানে আমীরুল মুমিনীনের দরবারে নালিশ দাখিল করতে পারতেন।


      হযরত মুআবিয়ার রাযি. বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব অমায়িক চরিত্র, অতুলনীয় অবদান ও অনুপম শাসনামলের তুলনাহীন ও বৈচিত্র্যময় সকল দিকের যতটুকু বিবরণ আরবী ভাষার রচিত মুসলিম ঐতিহাসিকগণের নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থসমূহে পাওয়া যায়, তার বঙ্গানুবাদের জন্য বিশাল কলেবরের গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন।


      বস্তুতঃ সকল বিচারেই হযরত মুআবিয়ার রাযি. শাসনকাল খিলাফতে রাশিদা পরবর্তী ইসলামী ইতিহাসের সফলতম ও স্বর্ণযুগ সমস্ত উম্মাহর ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ছিল পর্যাপ্ত সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা, সচ্ছলতা ও সমৃদ্ধি। জনসাধারণের জীবনযাত্রা, চরিত্র ও নৈতিকতার উপর তাঁর ছিল সদা সতর্ক দৃষ্টি।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২০

23. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀== প্রথম অধ্যায়,শেষ পর্ব -২৩ ==🥀*


       *হযরত হাসান রাযি.-এর শর্তাবলী* 


   *১.* ইরাকবাসীকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে এবং অতীতের ঘটনাবলীর কারণে কাউকে যেন গ্রেফতার না করা হয়।


   *২.* আহওয়াজের সম্পূর্ণ রাজস্ব আমার নামে লিখে দিতে হবে।


   *৩.* অনুরূপভাবে আমার ভাই হুসাইন রাযি. কে বৎসরে বিশ লক্ষ দিরহাম দিতে হবে। 


   *৪.* রাষ্ট্রীয় অনুদান ও উপহারের বেলায় বনু হাশিমের হক অন্যদের চেয়ে অগ্রগণ্য মনে করতে হবে।


 *হযরত হাসানের রাযি. শর্তাবলীর উদ্দেশ্যঃ* 


      হযরত হাসান রাযি. আহওয়াজের রাজস্ব নিজের নামে লিখে দেয়া ও হযরত হুসাইন রাযি. কে বাৎসরিক বিশ লক্ষ দিরহাম দেয়ার যে দাবী করছিলেন, তা তাদের ব্যক্তিগত খরচ বা পারিবারিক ভোগ-বিলাসে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপব্যয়ের জন্য ছিল না। বরং হযরত আলী রাযি. খলীফা থাকার বৎসরগুলোতে প্রচুর সংখ্যক গরীব-মিসকিন ও বিধবা-অনাথদের রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে দান করতেন। তার মৃত্যুর পর তারা সকলের তাঁর দুই পুত্র হাসান ও হুসাইনের রাযি. নিকটই ‘আসত ও ভীড় জমাত। হযরত হাসান রাযি. যে অল্প সময় (ছয়মাস) খলীফা ছিলেন, তখন তিনি ও তাঁর ভাই হুসাইন রাযি. রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে তাদের দান করতেন। খিলাফতের দায়িত্ব হতে সরে দাঁড়াবার পর যেন ঐ সকল গরীব-মিসকীনদের অসহায় অবস্থায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে না হয়, যে জন্য হযরত হাসান রাযি. খিলাফতের পদত্যাগ কালে এ প্রস্তাব করেন।


      সন্ধি চুক্তি সম্পাদনের পর হযরত হাসান রাযি. খিলাফতের দায়িত্ব হতে সরে আসেন। অতঃপর হযরত হাসান ও হযরত মুআবিয়া রাযি. উভয়ে কুফায় আগমন করেন। কুফার জামে মসজিদে হযরত মুআবিয়া রাযি. কুফাবাসীর নিকট হতে বাই’আত গ্রহণ করেন। সর্বপ্রথম হযরত হাসান রাযি. তাঁর হাতে বাই’আত হন।


      খিলাফতের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে হযরত হাসান রাযি. মদীনা শরীফে আগমন করেন এবং অবশিষ্ট জীবন স্বীয় নানা মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সান্নিধ্যে অতিবাহিত করেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই ভবিষ্যদ্বানী বাস্তবায়িত হলোঃ “আমার এ ছেলে সাইয়িদ-নেতা হবে। আমার ধারণা- আল্লাহ তা’আলা তার দ্বারা মুসলমানদের দু’টি বিরাট দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবেন।” উল্লেখ্য, হযরত হাসান রাযি. সর্বমোট ছয় মাস খলীফা ছিলেন।


      ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুখ্যাত আব্দুল্লাহ বিন সাবার ষড়যন্ত্রকারী ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা গঠিত খারিজী দলের এক ঘাতক কর্তৃক হযরত আলী রাযি. শহীদ হন। অতঃপর তাঁর বড় ছেলে হযরত হাসান রাযি. খলীফা মনোনীত হন। হযরত হাসান রাযি. ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন সাহাবী রাযি. । তাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সুপ্রসিদ্ধ ভবিষ্যদ্বানী এই ছিল যে, তাঁর দ্বারা মুসলমানদের দুটি বিরোধী পক্ষের বিরোধের অবসান ঘটবে। আল্লাহর কুদরতে হযরত হাসান রাযি. খলীফা নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত অকাট্য ভবিষ্যদ্বানী বাস্তবায়িত হওয়ার কাজ অগ্রসর হতে লাগল। এদিকে হযরত হাসান রাযি. এবং তাঁর সমর্থক কুফা ও ইরাকবাসী মুসলমান, অপর দিকে হযরত মুআবিয়াহ রাযি. ও তার সমর্থক সিরিয়াবাসী মুসলমান- এ দুই পক্ষের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন সাবার মুনাফিক দল ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী বিরোধ সৃষ্টি পাঁয়তারা করছিল। সেই বিরোধ অবসানের কাজ অর্থাৎ হযরত মুআবিয়াহ রাযি. সঙ্গে সন্ধির প্রয়াস আরম্ভ করলেন। এতে ইবনে সাবার দল চিরাচরিতরূপে মুসলমানদের ঐক্যের মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রমাদ গুনলো এবং হযরত হাসানের রাযি. উপর ক্ষেপে উঠল। এমনকি এক পর্যায়ে তারা তাঁর উপর আক্রমণ করে বসল এবং তাঁর সবকিছু লুণ্ঠন করে নিলো। এরপর হযরত হাসান রাযি. মুসলমানদের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং আরো অধিক তৎপর হলেন। মুসলমানদের সর্বনাশকারী খিলাফতের শত্রু এই পঞ্চম বাহিনীকে দমনের কাজে একমাত্র হযরত মুআবিয়াহ রাযি. কেই উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করে তাঁর পক্ষে তিনি খিলাফতের পদত্যাগ করলেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর হাতে বাই’আত হয়ে তাঁকে খলীফা হিসেবে বরণ করে নিলেন। এভাবে হিজরী ৪১ সনে হযরত মুআবিয়াহ রাযি. হাজার হাজার সাহাবায়ে কিরামের রাযি. উপস্থিতিতে মুসলিম জাহানের সর্বসম্মত খলীফা নির্বাচিত হন। সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের মুখে এবং ইতিহাস গ্রন্থে এবং বৎসরকে “আমুল-জামা’আহ বা ঐক্যের বৎসর” বলা হয়েছে।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

22. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -২২ ======*


             *একক খিলাফত প্রতিষ্ঠা* 


 *হযরত হাসান রাযি. ও হযরত মুআবিয়া রাযি.- এর মতৈক্যে একক খিলাফত প্রতিষ্ঠাঃ* 


      অতঃপর হযরত মুআবিয়া রাযি. হযরত হাসানের রাযি. নিকট দূত মারফত সন্ধি প্রস্তাব পাঠান। হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিশেষ দূত আব্দুল্লাহ বিন ‘আমির তাঁর দলবল সহ হযরত হাসানের রাযি. দলের মুখোমুখি হলে, তিনি চিৎকার করে বললেনঃ হে ইরাকবাসী ভাইয়েরা! আমরা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে আসিনি, বরং মুআবিয়ার রাযি. পক্ষ হতে সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। হযরত হাসান রাযি. কে আমার সালাম পৌঁছে দাও এবং আমার পক্ষ হতে তাঁর দরবারে এ নিবেদন পেশ কর যে, মুসলমানদের যেন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন।


      ইরাকবাসী হযরত মুআবিয়ার রাযি. প্রস্তাব শুনে যুদ্ধ না করাকেই পছন্দ করল। হযরত হাসান রাযি. ও স্বীয় বাহিনী নিয়ে শিবিরে প্রত্যাবর্তন করলেন। হযরত মুআবিয়ার রাযি. দূতের নিকট হযরত হাসান রাযি. এ উত্তর পাঠান যে, আমি কিছু শর্তের সাথে হযরত মুআবিয়ার রাযি. সাথে সন্ধি করতে ও খিলাফতের দায়িত্ব হতে সরে দাড়াতে প্রস্তুত আছি। আব্দুল্লাহ বিন আমির ফিরে এসে হযরত মুআবিয়া রাযি. কে সন্ধি আলোচনা শুনান। হযরত মুআবিয়া রাযি. মুসলিম বিশ্বের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে আশংকা হতে মুক্তির আশা দেখা দেয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং একটি সাদা কাগজে দস্তখত ও সিলমোহর দিয়ে আব্দুল্লাহ বিন আমিরের হাতে দিয়ে বলেন- এটা হাসান রাযি. কে দিয়ে বলল- যে শর্ত ইচ্ছা লিখে দিন। আমি (মুআবিয়া) তা মেনে নিব।


   _📋 *নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

21. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -২১ ======*


   *পঞ্চম খলীফা ও তাঁর পরবর্তী খলীফা* 


 *পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান রাযি. ও তাঁর পরবর্তী খলীফা হযরত মুআবিয়া রাযি.:* 


      হযরত আলী রাযি. চতুর্থ খলীফা ছিলেন। তাঁর শাহাদাতের পর কূফাবাসী তথা হযরত আলীর রাযি. অনুসারীগণ এক বাক্যে হযরত আলী রাযি. জেষ্ঠ্যপুত্র হযরত হাসান ইবনে আলী রাযি. কে খলীফা মনোনীত করে তাঁর হাতে বাই’আত হন। এদিকে শাম (সিরিয়া) বাসীগণ হযরত আলী রাযি. শাহাদাতের সংবাদ শ্রবণ করতঃ সকলে মিলে হযরত মুআবিয়া রাযি. কে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের আহবান জানান এবং সকলে তাঁকে খলীফা মনোনীত করে তাঁর হাতে বাই’আত হন।


      হযরত হাসান ও হযরত মুআবিয়া রাযি. উভয়েই ইসলামী বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে খলীফা মনোনীত হন। যদ্দরুন ইসলামী বিশ্বে প্রথমবারের মত দুই খলীফার আবির্ভাব এবং ইসলামী দুনিয়া স্থায়ীভাবে দুই শিবিরের বিভক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দেয়। অথচ আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নির্দেশ মুতাবিক ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার রূপরেখা অনুযায়ী সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ থেকে একই খলীফার অধীনে একাধিক ‘আমিল’ বা গভর্নর- এর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা। এমতাবস্থায় এ দায়িত্ববোধের প্রেক্ষিতে হযরত হাসান ও হযরত মুআবিয়া রাযি. সদলবলে কুফা অভিমুখে রওয়ানা হন।


      হযরত হাসান রাযি. এ খবর জানতে পেলে তিনি হযরত মুআবিয়া রাযি. কে বাধা দানের জন্য ‘মাদায়েন’ অভিমুখে রওয়ানা হন। উভয় পক্ষ বিশাল বাহিনীসহ মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় অতীতের চেয়ে আরো ব্যাপক ও ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ এড়ানোর জন্য হযরত হাসান ও হযরত মুআবিয়া রাযি. উভয়ই শান্তির লক্ষ্যে আলোচনা ও সন্ধির প্রয়াস চালান।


      এখানেও সাবায়ী ও খারেজীরা ঐক্য প্রচেষ্টা- ব্যর্থ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। সন্ধিতে সম্মত হওয়ায় একমত খারেজী হযরত হাসান রাযি. কে ও তাঁর পিতার ন্যায় কাফির হয়ে যাওয়ার অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর বাহিনীতে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনকি এক খারেজী দূর হতে তীর নিক্ষেপে হযরত হাসান রাযি. কে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি আহত হয়ে কিছুদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হন।


   _📋 *নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

20. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -২০ ======*


     *হযরত আলী রাযি.-এর শাহাদাত* 


      সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম হযরত আলী রাযি. আবাসস্থল কুফায় এলো। এখানে এসে যে, খারেজী গোত্রের এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে হযরত আলী রাযি. কে হত্যার ফন্দি আঁটতে লাগল। তারা উভয়ে এ কাজে আরো দু’জন খারেজীকে অন্তর্ভুক্ত করল। অবশেষে রমজানের ১৭ তারিখে ইবনে মুলজিম ও তার দুই সহযোগী কুফার জামে মসজিদে আত্মগোপন করে বসে রইল। ফজরের নামাযের সময় হযরত আলী রাযি. মসজিদে প্রবেশ করে যথারীতি ঘুমন্তদের জাগ্রত করতে লাগলেন। ঘাতকদের একজন গুপ্তস্থান হতে বের হয়ে তাঁর উপর তলোয়ারের আঘাত হানল। হযরত আলী রাযি. মিহরাবে লুটে পড়লেন, ইবনে মুলজিম তাঁর মাথায় পুনরায় আঘাত কর। এতে- তার সমস্ত শরীর ও দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল। ইবনে মুলজিম ধরা পড়ল ও অপর দু’জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হল।


      আশংকাজনক অবস্থায় হযরত আলী রাযি. কে তাঁর বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হল। অবশেষে সেদিন রাতেই তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। অতঃপর হযরত হাসান রাযি. খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর ইবনে মুলজিমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।


      এদিকে ইবনের মুলজিমের অপর সাথী বারক বিন আব্দুল্লাহও দামেস্ক (সিরিয়ার রাজধানী) পৌঁছে ঐ তারিখেই হযরত মুআবিয়া রাযি. যখন ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বেরুচ্ছিলেন, তখন তাঁর উপর আক্রমণ করে। তিনি সামান্য আহত হন। অতঃপর ঘাতক বারককে গ্রেফতারের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর বিশেষতঃ নামাযের সময়ের জন্য হযরত মুআবিয়া রাযি. নিজের জন্য দেহ রক্ষী নিয়োজিত করেন। ইবনে মুলজিমের তৃতীয় সঙ্গী আমর বিন বাকরও মিসরে নির্দিষ্ট দিনক্ষণে হযরত আমর ইবনুল ‘আসের রাযি. হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তিনি সেদিন অসুস্থ থাকার কারণে মসজিদে ‘আসতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে সেদিক খারিজা বিন আবী হাবীবা নামাযের ইমামতি করেন। ঘাতক তাকেই কাঙ্খিত ব্যক্তি মনে করে আক্রমণ চালায় এবং শহীদ করে ফেলে। অতঃপর নিজেও বন্দী হয়ে নিহত হয়।


   📋 _*নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

19. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস

 *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৯ ======*


    *খারেজী সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ* 


      আব্দুল্লাহ বিন সাবার এ দলটি এত দিনে অনেক শক্তি অর্জন করেছিল। তাই তারা এখন হযরত আলীর রাযি. দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা দল গঠন করে যুদ্ধ করারও দুঃসাহস দেখায়। তারা সালিশী চুক্তিকে কুফরী কাজ আখ্যা দিয়ে হযরত আলী ও হযরত মুআবিয়া রাযি. উভয়কেই কাফির ঘোষণা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে দেয়। তাছাড়া সালিশী চুক্তির সমর্থক সাধারণ মুসলিম জনগণকেও তারা কাফির ঘোষণা করে এবং তাঁদের হত্যা করা ও তাঁদের সম্পদ লুন্ঠন করাকে বৈধ ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে খুন, জখম, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়।


      তাদের এ অপতৎপরতা হযরত আলীর রাযি. ভূখণ্ডেই বেশী ছিল। হযরত আলী রাযি. তখন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় খারেজীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং একাধিক অভিযানে তাঁদের অধিকাংশকেই হত্যা ও বন্দী করেন।


      খারেজীদের বিরুদ্ধে হযরত আলীর রাযি. এ সকল অভিযানের কারণে হযরত আলী রাযি. ও অপরাপর মুসলিম নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিশোধস্পৃহা অনেকগুণে বেড়ে যায়। এ জন্য তারা এক সঙ্গে হযরত আলী, মুআবিয়া ও আমর ইবনুল ‘আস রাযি. কে হত্যা ও খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ চিরতরে রুদ্ধ করার গভীর ষড়যন্ত্র আঁটে। সে মতে তিন খারেজী আব্দুর রহমান বিন মুলজিম, বারক বিন আব্দুল্লাহ ও আমর বিন বাকর মক্কায় মিলিত হয়ে আলোচনা করল যে, আমাদের (খারেজী) ভাইদের মৃত্যুর পর জীবনের স্বাদ নেই। আমরা এখন আলী, মুআবিয়া ও আমর বিন ‘আস রাযি. কে হত্যা করে আমাদের ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার মাঝেই জীবনের সর্বশেষ স্বার্থকতা দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, আব্দুর রহমান বিন মুলজিম হযরত আলী রাযি. কে, বারক হযরত মুআবিয়া রাযি. কে এবং আমর হযরত আমর ইবনুল ‘আস রাযি. কে একই দিন একই সময়ে শহীদ করবে। এর জন্য তারা ১৭ই রমজান ৪০ হিজরী তারিখকে দিনক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করলো।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...