অনুসরণকারী

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

29. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৬ ====🥀*


    *উত্তরসূরী নির্বাচন ও ইয়াযীদ প্রসঙ্গ* 


 *হযরত মুআবিয়ার রাযি. উত্তরসূরী নির্বাচন ও ইয়াযীদ প্রসঙ্গঃ* 


      হযরত মুআবিয়া রাযি. মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বৎসরকাল ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম উম্মাহর খিদমত করেন। এর মধ্যে তিনি সাবায়ীদের ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করেন এবং সাবায়ীদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া খিলাফত ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসবাদী সাবায়ীদের দমন করে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। মুসলমানদের পারস্পরিক গৃহযুদ্ধের ক্ষতির প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রথম কাতারের ভুক্তভোগী হিসেবে তিনি একজন যোগ্য উত্তরসূরী মনোনয়ন পূর্বক নিজের জীবদ্দশায় তাঁর হাতে জনসাধারণের বাই’আত নিয়ে রাখার আকাঙ্খা পোষণ করতেন। যাতে তার মৃত্যুর পর পর খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে শত্রুদের ষড়যন্ত্রে বা অন্য কোন কারণে পুনরায় মুসলিম জাতির মাঝে বিভেদ সৃষ্টির কোন অবকাশ না থাকে।


      বর্তমান খলীফা তাঁর জীবদ্দশায় মুসলিম উম্মাহর নেতৃস্থানীয় ও গুণীজনদের সংগে পরামর্শক্রমে যে কোন যোগ্য ব্যক্তিকে পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে তার হাতে জনসাধারণের বাইআত গ্রহণের পর তাকে খলীফা ঘোষণা করে যেতে পারেন। এমনকি পিতৃত্ব বা অন্য কোন রক্ত সম্পর্কের কারণেও মনোনয়ন দানের বৈধতার রদবদল হবে না। অবশ্য পিতা-পুত্রের ক্ষেত্রে অর্থাৎ পূর্ববর্তী খলীফা যদি নিঃস্বার্থ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে শুধুমাত্র দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তার পুত্রকে ভাবী খলীফারূপে মনোনয়ন দিতে চান তাহলে এর জন্য শর্ত হচ্ছে- খলীফাকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সমর্থন ও অনুমোদন নিতে হবে। কেবলমাত্র তখনই পুত্রের মনোনয়ন ও তার হাতে জনসাধারণের বাই’আত গ্রহণ বৈধ হবে। এবং এটাকে রাজতন্ত্র বলা হবে না। রাজতন্ত্র বলা হয় যোগ্যতার বিচার না করে শুধু বংশানুক্রমিক হারে শাসনের ধারাকে।


      এ উদ্দেশ্যে পরামর্শ চেয়ে হযরত মুআবিয়া রাযি. নিজের এক গভর্নরের বরাবর যে চিঠি লিখেন, তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “আমার মৃত্যু অতি নিকটবর্তী। আমার আশংকা হয় যে আমার মৃত্যুর পর উম্মাহর ঐক্যে আবার ফাটল দেখা দিতে পারে। এ কারণে আমার ইচ্ছা হয় নিজের জীবদ্দশাতেই কোন যোগ্য ব্যক্তিকে আমার স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করে দিয়ে যাই। অন্যত্র তিনি একবার বলেন জনসাধারণকে আমি রাখালবিহীন বকরীর পালের মত ছেড়ে যেতে চাই না।”


      এ লক্ষ্যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম ও প্রিয় সাহাবায়ে কিরামের মধ্য হতে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী বিশিষ্ট সাহাবী রাযি. কুফার গভর্নর হযরত মুগীরাহ বিন শুবাহ রাযি. এই বলে পরামর্শ দেন যে হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাতের পর সাবায়ীদের ষড়যন্ত্রে মুসলমানদের মাঝে যে মতানৈক্য ও ভয়াবহ রক্তপাতের সূত্রপাত হয় তা কেউ বিস্মৃত হয়নি। সুতরাং আপনার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য পূর্ণ যোগ্যতাধারী ইয়াযীদের পক্ষে জনগণের বাই’আত নিয়ে তাকে আপনার স্থলাভিষিক্ত বানিয়ে যান। যাতে আপনার মৃত্যুর পর শত্রুপক্ষ হতে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে তিনি মুসলমানদের আশ্রয়স্থল হতে পারেন এবং খিলাফতের ব্যাপারে কোনরূপ গণ্ডগোল ও রক্তপাতের আশংকা না থাকে।


      বলাবাহুল্য ইয়াযীদ আমীরুল মুমিনীনের প্রিয়পুত্র ও সাহেবজাদা হিসেবে গোটা ইসলামী উম্মাহর বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তার নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারিবারিক সম্ভ্রম, প্রশাসনিক দক্ষতা ও একাধিক সমর নৈপূণ্যের বিচারে তিনি খিলাফতের জন্য যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। স্বয়ং হযরত মুআবিয়া রাযি. তাকে বিশিষ্ট সাহাবীগণের রাযি. উপস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী খারিজীদের দমনে এবং তৎকালের অন্যতম পরাশক্তি রোমীয়দের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে প্রেরণ করে তার সাহসিকতা ও সময় নৈপুন্যের স্বাক্ষর অবলোকন করেন। সুতরাং ইয়াযীদের তৎকালীন এসকল গুণাবলী শুধু হযরত মুগীরাহ বিন শুবাহ রাযি. বা হযরত মুআবিয়ারই রাযি. দৃষ্টিগোচর ছিল না বরং অধিকাংশ জীবিত সাহাবী রাযি. তখন ইয়াযীদের মনোনয়নকে সমর্থন করেন এবং তার পক্ষে তারা নিয়মিত প্রচারণাও চালিয়ে যান। ফলে মুসলিম জাহানের বিভিন্ন অঞ্চলে সুধী ও গুণীজনেরা স্ব-স্ব এলাকার প্রতিনিধিসহ আমীরুল মুমিনীনের আবাসস্থল দামেস্ক আগমন করে হযরত মু’আবিয়ার রাযি. সঙ্গে সাক্ষাত করে তারা নিজেদের পক্ষ হতে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফারূপে মনোনয়ন দানের প্রস্তাব পেশ করতে থাকেন।হযরত মুআবিয়া রাযি. তাদের এ ব্যাপারে বিবেচনার আশ্বাস দেন এবং বলেন- এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। যা আল্লাহর মঞ্জুর আছে তাই হবে। এরই মধ্যে সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ সমূহের প্রতিনিধিদল এসে হযরত মুআবিয়ার রাযি. প্রতি ইয়াযীদের মনোনয়নের ব্যাপারেই অনুরোধ জানাতে থাকেন। তখন হযরত মুআবিয়াও রাযি. স্বীয় পুত্র ইয়াযীদকে মনোনয়ন দানে মনস্থ করেন।


      অতঃপর প্রশাসন ও মুসলিম উম্মাহর অন্যান্য নেতৃস্থানীয়গণের সংগে এ ব্যাপারে পরামর্শ করলে তারাও এ ব্যাপারে সমর্থন দান করেন। তখন শুধু হিজায তথা মক্কা মদীনার নেতৃবৃন্দের মতামত জানা বাকি ছিল। মক্কা মদীনাবাসীদের মধ্যে শুধু কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ইয়াযীদের ব্যাপারে একারণে আপত্তি জানালেন যে, হযরত হুসাইন, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর, আবদুল্লাহ বিন যুবাইর ও আবদুর রহমান বিন আবু বকর রাযি. তখনো জীবিত ছিলেন। আর তাঁরা সকলেই সাহাবী রাযি. হওয়ার কারণে ইয়াযীদের চেয়ে উত্তম ছিলেন এবং ধার্মিকতা ও প্রশাসনিক যোগ্যতার ক্ষেত্রেও তারা ইয়াযীদের চেয়ে উত্তম ছিলেন।


      কিন্তু তাদের মতামত এজন্য প্রাধান্য পেল না যে সাহাবায়ে কিরামের এক বিরাট অংশ এ কারণে ইয়াযীদের মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন যে ইমাম হুসাইন প্রমুখগণ ইয়াযীদের চেয়ে যোগ্যতম হলেও ইয়াযীদ এক দিকে খিলাফতের দায়িত্ব পালনে বাহ্যিকভাবে কম যোগ্য ছিল না। যার বিবরণ পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর যোগ্যতর ব্যক্তির বর্তমানে যোগ্য ব্যক্তিকে খলীফা মনোনীত করার বৈধতা ইসলামে আছে। অন্যদিকে ইয়াযীদ আমীরুল মুমিনীন হযরত মুআবিয়া রাযি. এর মত বিচক্ষণ প্রশাসক সাহাবীর রাযি. পুত্র হওয়ার সুবাদে সর্বদা পিতার সান্নিধ্যে থাকার বদৌলতে খিলাফত শাসনকার্য ও রাজ্য পরিচালনায় বেশ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার পর অতিরিক্ত যোগ্যতা ও পাণ্ডিত্যের চেয়ে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অনেক বেশী সে কারণে হযরত মুআবিয়া রাযি. ও আন্তরিকভাবে ইয়াযীদকেই খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করতেন। তাঁর ধারণায় উম্মাহর সামগ্রিক কল্যাণও এতে নিহিত ছিল। এ কারণে একবার হযরত উসমানের রাযি. পুত্র সাঈদের অনুযোগের উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম তোমার এ দাবী যথার্থ যে, তোমার পিতা আমার চেয়ে উত্তম এবং রাসূলুল্লাহর নৈকট্যভাজন ছিলেন। আর তোমার মাও ইয়াযীদের মায়ের চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু ইয়াযীদ সম্পর্কে আমাকে বলতেই হবে যে গোটা ভূখণ্ড তোমার মত লোকে ভরে গেলেও ইয়াযীদের যোগ্যতার পাল্লা ভারী হবে। তাই উম্মাহর ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফা বানানোর বিকল্প ছিল না।


      অপরদিকে বনু উমাইয়া গোত্রই তখন কুরাইশের প্রধান শক্তি ছিল। উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও ছিল তাদেরই অনুবর্তী। আর বনু উমাইয়ার সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এক বাক্যে ইয়াযীদের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ সকল কারণে উম্মাহর ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে ইয়াযীদকে পরবর্তী খলীফা বানানোই যুক্তিযুক্ত ছিল। ফলে ইয়াযীদই চূড়ান্তরূপে পরবর্তী খলীফা হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন এবং ৬০ হিজরীতে হযরত মুআবিয়ার রাযি. ইন্তিকালের পর ইয়াযীদই যথারীতি খলীফা নিযুক্ত হন।


      ইয়াযীদকে চূড়ান্তরূপে মনোনয়ন দানের পূর্বে ও পরে হযরত মুআবিয়া রাযি. বিভিন্ন সময় আপন প্রভুর নিকট যেসব দু’আ করেন সেগুলো তার ইখলাস এবং পুত্র ইয়াযীদের মনোনয়নে পিতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা নিঃস্বার্থ ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন-জুমু’আর এক খুতবায় ‘আসমানের দিকে তাকিয়ে তিনি এই দু’আ করেছিলেনঃ হে আল্লাহ! খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করেই যদি আমি ইয়াযীদকে মনোনয়ন দিয়ে থাকি তাহলে তার পক্ষে আমার এ সিদ্ধান্তকে তুমি পূর্ণতা দান করো। পক্ষান্তরে পুত্রের প্রতি পিতার মোহই যদি হয় এর কারণ তাহলে তা তুমি ব্যর্থ করে দাও।


      অন্য এক খুতবায় তিনি বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ! ইয়াযীদকে যদি তার যোগ্যতার কারণেই মনোনীত করে থাকি, তাহলে সে মর্যাদায় তাকে উন্নীত কর এবং তাকে মদদ কর। আর যদি পুত্রের প্রতি পিতার সহজাত ভালবাসাই এ কাজে আমাকে প্ররোচিত করে থাকে তাহলে আগেই তাকে তুমি তুলে নাও। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তার মনে যদি সংশয় থাকত বা তিনি যদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুত্রত্বের মোহে পড়ে পরবর্তী খলীফা হিসেবে পুত্রের মনোনয়নের অপচেষ্টায় লিপ্ত হতেন তবে তিনি জুমুআর দিনে হাজার হাজার লোকের সম্মুখে মসজিদের মিম্বরে দাড়িয়ে দুআ কবুল হওয়ার যথার্থ মুহূর্তে পুত্রের নামে এরূপ কঠিন দু‘আ কখনো করতে পারতেন না।


      সাবায়ী ও খারিজীদের অপকীর্তির কথা বলাই বাহুল্য যারা হযরত মুআবিয়াকে রাযি. আপন চক্ষুশূল মনে করত এবং তাঁর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপপ্রচারেও কুন্ঠাবোধ করত না। তারা যে ইয়াযীদের মনোনয়নকে ব্যক্তি স্বার্থে প্রণোদিত বলে আখ্যা দিবে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। তারা ইয়াযীদের বাই’আত গ্রহণে বল প্রয়োগ ঘুষ প্রদান ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণের ন্যায় ঘৃণিত অসুদপায় অবলম্বনের মিথ্যা ও উদ্ভট অভিযোগ পর্যন্ত আনতে দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু দুঃখবোধ হয় সে সকল বিবেকবান মুসলমান ভাইদের প্রতি যারা পরবর্তীতে ইয়াযীদের শাসনামলে কুফার গভর্নর উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের নির্দেশে কারবালা প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় দৌহিত্র সাইয়িদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত হুসাইন রাযি. এর মর্মন্তুদ শাহাদাতের ঘটনাকে পুঁজি করে এর সকল দায় দায়িত্ব রাসূলুল্লাহর-ই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর প্রিয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. উপর চাপিয়ে দেন এবং তার অযোগ্য পুত্রকে খলীফা বানিয়ে ইসলামী খিলাফতের পরিবর্তে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করে নিজেদের ঈমানের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেন।


      সাহাবীগণের রাযি. সমালোচনাকারী বা তাদের ব্যাপারে মনে মনে সংকীর্ণতা পোষণকারীদের প্রতি মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট সতর্কবাণী হচ্ছেঃ


      আল্লাহুকে ভয় কর! আল্লাহুকে ভয় কর! আমার সাহাবীগণের রাযি. ব্যাপারে। আমার পরে তাঁদেরকে তোমরা সমালোচনার পাত্র বানিও না। যে আমার সাহাবীগণকে রাযি. ভালবাসে সে আমার মুহাব্বাতেই তাদেরকে ভালবাসে। আর যে আমার সাহাবীগণের রাযি. প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখার দরুনই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। (বুখারী শরীফ-হাদীস নং-৩৬৭৩)


      বস্তুতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৌহিত্রের মর্মান্তিক শাহাদাতের সাথে কিঞ্চিত পরিমাণ হলেও যে নরাধম জড়িত, ইসলামী খিলাফতের পবিত্র আসনে মুহূর্তের জন্যও তাকে অধিষ্ঠিত রাখার কল্পনা করা যে কোন মুসলমানের পক্ষে কষ্টকর। কিন্তু ঘটনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে একথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ইয়াযীদকে যখন মনোনয়ন দেয়া হচ্ছিল তখন কিন্তু কারবালা ট্রাজেডির কোন অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি পরবর্তী কালের দোষ ত্রুটিগুলো ইয়াযীদের চরিত্রে তখন বিদ্যমান ছিল না। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখন সে আমীরুল মুমিনীনের প্রিয় পুত্র ও সাহাবীজাদা রাযি. হিসেবে গোটা মুসলিম জাতির বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিল এবং তার নৈতিকতা, ধার্মিকতা, পারিবারিক সম্ভ্রম প্রশাসনিক দক্ষতা ও সমর নৈপূণ্যের বিচারে তাকে খিলাফতের যোগ্য বিবেচনা করার পূর্ণ অবকাশ ছিল। তদুপরি ইয়াযীদের এ যোগ্যতা শুধু যে পিতা মুআবিয়ার রাযি. চোখেই ধরা পড়েছিল তা নয়। বরং বহু নেতৃস্থানীয় সাহাবী রাযি. ও তাবিয়ীগণও ইয়াযীদের প্রতি উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। যে কারণে তারাই প্রথমে হযরত মুআবিয়ার রাযি. প্রস্তাবটির ভাল-মন্দ বিবেচনা করে তা কার্যকর করেন মাত্র। পূর্বে এ কথাও উল্লেখিত হয়েছে যে প্রায় সব সাহাবী রাযি. ও তাবিয়ীগণই তখন ইয়াযীদের খলীফা মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন। ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে পানাহারের এক মজলিসে তাঁর নিকট হযরত মুআবিয়ার রাযি. মৃত্যু সংবাদ এসে পৌছলে তিনি অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলেন। অতঃপর বললেন- হে আল্লাহ মুআবিয়ার রাযি. প্রতি রহমত নাযিল কর পূর্ববর্তীদের তুলনায় তিনি উত্তম ছিলেন না বটে তবে পরবর্তীরাও তাঁর তুলনায় উত্তম হবে না। ইয়াযীদ অবশ্যই তাঁর খান্দানের যোগ্য উত্তরসূরী। সুতরাং তোমরা (উপস্থিত হাজিরানে মজলিস) স্ব-স্ব জ্ঞানে থেকে তাঁকে আনুগত্য ও বাইআত দান কর।


      এ অবস্থায় ইয়াযীদের কোন দুস্কর্মের জন্য সাহাবী হযরত মুআবিয়া রাযি. কে দায়ী করে তাঁর সম্পর্কে কোনরূপ সমালোচনা করা শুধু যে অযৌক্তিক তাই নয়। বরং কুরআন হাদীসের আলোকে তা জগণ্যতম অন্যায় ও নাজায়িয কাজ। কেননা সাহাবায়ে কিরাম রাযি. হতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আপত্তিজনক কোন কাজ সংঘটিত হলেও সেখানে শরী‘আতের বিধান হচ্ছে তার যথা সম্ভব এমন ব্যাখ্যা প্রদান করা যা সাহাবিয়্যাতের মহান মর্যাদার সাথে সর্বদিক দিয়ে সংগতিপূর্ণ হয়। পক্ষান্তরে এমন কোন ব্যাখ্যা প্রদান কিছুতেই বৈধ নয় যা তাদের জীবন চরিত্র ও সাহাবীসুলভ পবিত্রতার সাথে সংঘর্ষপূর্ণ অনুমিত হয়। কারণ এর ভিত্তি মূলতঃ রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাহাবীর রাযি. প্রতি বিদ্বেষ, অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞা পোষণের উপর প্রতিষ্ঠিত যা নিঃসন্দেহে ঈমান বিধ্বংসী আচরণ। সে ক্ষেত্রে ইয়াযীদের অন্যায়ের কারণে হযরত মুআবিয়ার রাযি. ন্যায় বিশিষ্ট সাহাবীকে রাযি. দায়ী করা যে কত বড় পাপ এবং নিজের ঈমানকে সংকটে ফেলার নামান্তর তা সহজেই অনুমেয়।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...