*﷽ ﷽ ﷽ ﷽ ﷽* *﷽*
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -২ ====🥀*
*সাবায়ী ফিৎনা নির্মূল*
*সাবায়ী ফিৎনা নির্মূলে হযরত মুআবিয়ার রাযি. অবদানঃ*
এক কথায় দীর্ঘ প্রায় এক দশকের গৃহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মুসলিম উম্মাহ্ হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকালেই ফিরে পায় তাদের হৃত গৌরব। খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আসে পূর্ণ শৃঙ্খলা মুসলিম জাতি মুক্তি পায় আব্দুল্লাহ বিন সাবার ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের ভয়াল থাবা থেকে। যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল হযরত উসমানের রাযি. শাসনামলের মাঝামাঝি সময় হতে। অবশেষে তা ফুলে ফেঁপে বীভৎসরূপে ভয়াল মরণ কামড় নিয়ে স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই জামাতা মুসলিম জাহানের তৃতীয় ও চতুর্থ খলীফা হযরত উসমান ও আলীর রাযি. শাহাদাত পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান মুআবিয়া ও আমর ইবনুল আসের ন্যায় ইসলামী দুনিযার মহান নেতাগণের হত্যা প্রচেষ্টা এবং মুসলিম উম্মাহকে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে হাজার হাজার সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের রাযি. জান কেড়ে নেয়া এবং খিলাফত ব্যবস্থাকে চিরতরে ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে মুসলমানদের দুনিয়া হতে নিশ্চিহ্ন করে দেযার প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
পঞ্চম খলীফা হযরত হাসান রাযি. অন্যান্য বিচক্ষণতা তৎপরতা শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে যেমনি অবদান রাখেন ঠিক তেমনিভাবে মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাস দু‘আয় ধন্য হযরত মুআবিয়ার রাযি. অনবদ্য শাসন ও নিরলস প্রচেষ্টার বদৌলতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের উদ্ধার ও রক্ষা করেন। হযরত মুআবিয়ার রাযি. অক্লান্ত পরিশ্রমে শাসনকার্যে ফিরে আসে স্থিতিশীলতা। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা পুনরায় সু-সংহত হয় এবং মুসলিম বীর যোদ্ধার পুনরায় আরম্ভ করে তাদের স্বভাবসুলভ ইসলামের বিজয়াভিযান। ফলে ইসলামী সীমান্তের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে দিক হতে দিকান্তরে।
কিন্তু মুসলিম জাহানের এই বিজয়াভিযান ও মুসলমানদের উন্নতি প্রগতি ও যাবতীয় জাগতিক উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যম ঐক্যবদ্ধ খিলাফত ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থার এই স্থিতিশীলতা ইয়াহুদী খৃষ্টানচক্র ও তাদের তল্পিবাহক মুনাফিক সাবায়ী গোষ্ঠীর সহ্য হওয়ার নয়। তাই তারা আবার মেতে উঠে পুরোনো ষড়যন্ত্রে। শুরু হয় হযরত উসমানের রাযি. হযরত মুআবিয়ার রাযি. সুশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ। রটনা করতে থাকে অত্যাচার জুলুম ও স্বজনপ্রিয়তা গোয়েবলসীয় অপপ্রচার। কিন্তু এবার আর মুসলিম জনসাধারণ অতীতের ন্যায় ভুল করে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কায়দায় সাবায়ীদের আরোপিত চটকদার ও গতানুগতিক মিথ্যা অভিযোগ সমূহে কান দেয়নি এবং তাদের পরীক্ষিত নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তো করেইনি, বরং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে সর্বত্র সহযোগিতা করে।
যেহেতু হযরত উসমানের রাযি. যুগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা সাবায়ী দল মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের (যা ছিল তাদেরই সৃষ্ট) সুযোগে বিরাট শক্তি ও প্রভাবশালী দলরূপে আত্মপ্রকাশ করে প্রকাশ্যেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করা আরম্ভ করে দিয়েছিল। হযরত হাসান রাযি. খলীফা হয়ে তাদেরকে দমনের জন্য একমাত্র হযরত মুআবিয়া রাযি. কেই উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করে তাঁর হাতে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে দিয়েছিলেন। তাই তিনি সর্বসম্মত ও ঐকমত্যপূর্ণ খলীফা মনোনীত হয়ে ঐ মুনাফিক সন্ত্রাসবাদী দলকে দমন করাকেই নিজের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য মনে করলেন।
অবশ্য হযরত মুআবিয়া রাযি. প্রথম তাঁর প্রবাদতুল্য স্বভাবসুলভ সহনশীলতা ও নম্রতার ব্যবহার করেন। সাবায়ী খারিজীরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তারা স্বীয় বিশ্বাসে ছিল কট্টর এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ছিল অনড়। শেষ রক্ত বিন্দু বাকি থাকা পর্যন্ত জান হাতে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়া ছিল তাদের স্বভাব ।এতে কোন লোভ লালসা ভয় ভীতি বা অন্য কোন চিন্তা কখনই তাদের পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারত না। এ প্রেক্ষিতে এ ধরনের একটি সুসংগঠিত ও চরমপন্থি দলের নিয়ন্ত্রণ ও দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত বিচক্ষণ শাসকের প্রয়োজন ছিল যা হযরত মুআবিয়ার রাযি. মাঝে যথাযথভাবেই বিদ্যমান ছিল। তিনি তাদের সংগে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও নম্র আচরণ প্রদর্শন করলেন এবং তাদের বাড়াবাড়ি সমূহের মুকাবিলার ধৈর্য্য ও সহ্যের এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যার নজীর পৃথিবীর শাসকদের ইতিহাসে মেলা ভার।
এতদসত্ত্বেও সাবায়ী গোষ্ঠী সৃষ্ট খারেজী দল শান্তির পথে না এসে অনবরত দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টে ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ। নিযামকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে টুকরা টুকরা করার প্রচেষ্টায় মত্ত থাকে। সুতরাং তাদের রক্তখেলা হতে দেশ ও জাতির রক্ষা কল্পে হযরত মুআবিয়া রাযি. তাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন এবং প্রবল প্রতিরোধী হয়ে উঠেন। বিশেষতঃ উক্ত দলের আবির্ভাব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বানী করতে গিয়ে হাত মুবারক উঁচিয়ে ইরাকের দিকে ইশারা করতঃ বলেছিলেন- ঐ অঞ্চল হতে তাদের আবির্ভাব হবে। বস্তুতঃ ঘটেছিলও তাই। ইরাকের কেন্দ্রীয় এলাকা বসরা ও কুফাই উক্ত সন্ত্রাসবাদী দলটির অপতৎপরতার ঘাঁটি ছিল। হযরত মুআবিয়া রাযি.তাই বসরা ও কুফায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। এই কঠোরতা ছাড়া আমীরুল মুমিনীন হযরত মুআবিয়ার রাযি. দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বৎসরের শাসন আমলের সুন্দর অবস্থা ইতিহাসের নিম্নবর্ণিত সার সংক্ষিপ্ত বিবৃতি থেকেই অনুধাবন করা যায়ঃ
হযরত মুআবিয়াহ রাযি. ৪১ হিজরী সনে সর্বসম্মতরূপে খলীফা নির্বাচিত হয়ে স্বীয় পদে বহাল থাকাবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত বহিঃশত্রুদের এলাকায় পূর্ণোদ্দমে জিহাদ অব্যাহত ছিল। আল্লাহর কালিমা তথা দীন ইসলামের প্রতিপত্তি সর্বত্র বিরাজমান ছিল। চতুর্দিক হতে শত্রুপক্ষের বিজিত ধন সম্পদের সমাগম ছিল। তার শাসনামলে মুসলমানগণ শান্তি ও ন্যায়পরায়ণতার মাঝে দিনাতিপাত করছিলেন এবং দয়া ও ক্ষমা উপভোগ করছিলেন। কঠোরতার কোন প্রশ্নই ছিল না।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন