*﷽ ﷽ ﷽ ﷽ ﷽* *﷽*
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*🥀====দ্বিতীয় অধ্যায়,পর্ব -৩ ====🥀*
*অপপ্রচারণার কবলে হযরত মুআবিয়া রাযি.*
ঘটনা পরম্পরায় হযরত মুআবিয়া রাযি. উক্ত মুনাফিক সন্ত্রাসবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী দলটির বিরুদ্ধে যেরূপ প্রতিরোধী হয়েছিলেন, তদ্রূপ তারাও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছিল। খলীফা হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে তারা তাদের যে স্বভাবসুলভ মিথ্যার বহর ছড়িয়ে জনসাধারণকে উত্তেজিত ও বিভ্রান্ত করার অস্ত্র ব্যবহার করেছিল সেই অস্ত্রই তারা হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিরুদ্ধে আরো অধিক ধারালো রূপে বিরামহীনভাবে চালিয়ে গেল।
গোয়েবলসের মিথ্যা প্রচারের নীতি অনুসারে সেই সব প্রচারণা কতিপয় বিভ্রান্ত ঐতিহাসিকের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছিল। অথচ হযরত মুআবিয়ার রাযি. শাসনামলের সঠিক ও বাস্তব চিত্র এই ছিল যা ইতিপূর্বে মুসলিম ঐতিহাসিকগণের বিশুদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থসমূহ হতে উদ্ধৃত হয়েছে। ঘটনার সত্য-মিথ্যা সব রকমের বিবরণ সংগ্রহে যে সকল ঐতিহাসিকগণ আত্মতৃপ্তি অনুভব করতেন তাদের এ লেখায় প্রভাবান্বিত হয়ে অনেক খাঁটি মুসলমানও বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং নিজেদের ঈমান আমলকে হুমকির সম্মুখীন করেছেন।
আর সেসব জাল ইতিহাসের উপর নির্ভর করে কতিপয় সাহাবী রাযি. বিদ্বেষী তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকালের যে চিত্র এঁকেছেন তা আগাগোড়া যুক্তি বিরুদ্ধ ও বাস্তবতা বিবর্জিত এবং তা মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার ৭৩ ফেরকার মধ্যে একমাত্র সঠিক ও মুক্তিপ্রাপ্ত দল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা ও মৌলিক বিশ্বাসের সাথে কেবল অসংগতি পূর্ণই নয় বরং সংঘর্ষপূর্ণও। সুতরাং কোন ক্রমেই উক্ত বর্ণনাসমূহ গ্রহণযোগ্য নয়। ঐ সব তথাকথিত চিন্তাবিদদের লেখার কেরামতিতে সাধারণ পাঠকের মনে এ ধারণাই বদ্ধমূল হয় যে, ক্ষমতার লোভে সাহাবীগণ রাযি. জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনে পারস্পরিক সংঘর্ষ বাঁধিয়ে বহু লোককে হত্যা করেছিলেন। হযরত আলীর রাযি. শাহাদাতের সাথে সাথেই গোটা পরিস্থিতি হঠাৎ বুঝি ডিগবাজি খেয়েছিল এবং ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা তার সকল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে তা শুধু আগ্রাসী শাসনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। খিলাফতে রাশিদা ছিল যাবতীয় কল্যাণ ও সৌন্দর্যের এক অনুকরণীয় আদর্শ। কিন্তু হযরত মুআবিয়া রাযি. খিলাফতের দায়িত্বভার হাতে নেয়ার সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহর জীবন থেকে সেগুলো হঠাৎ করে উবে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত হযরত মুআবিয়া রাযি. রাজতন্ত্র কায়িমের মাধ্যমে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে ছেড়েছেন। (নাউজুবিল্লাহ) এমনিভাবে সেসব বিভ্রান্ত পাঠকদের হৃদয়ে এ ধারণা জন্মে যে, খিলাফতে রাশিদার স্বর্ণ যুগে মুসলিম সমাজ ছিল মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সমাজ। কিন্তু মুহূর্তের ব্যবধানে (হযরত মুআবিয়ার যুগে) সে সমাজেই প্রবৃত্তি ও পাশবিকতা সকল বিভৎসতা ও জঘন্যতা নিয়ে শিকড় গেড়ে বসল। চল্লিশ হিজরী পর্যন্ত খলীফার পক্ষে শরীআতের একটি সাধারণ বিধান লঙ্ঘনও ছিল কল্পনার অতীত। কিন্তু একচল্লিশ হিজরী তথা হযরত মুআবিয়ার রাযি. খিলাফতকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পরিস্থিতি শরী‘আত লঙ্ঘন, দীনের বিকৃতি ও বিদ‘আত প্রবর্তনের রূপ ধারণ করল। চল্লিশ হিজরীতে ঘুষ, লেন-দেনের পাপ ধারণা কারো হৃদয়ের পূর্ণ ভূমিতে ছায়াও ফেলতে পারেনি কিন্তু একচল্লিশ হিজরীতে শাসক শাসিত সবার কাছে তা হয়ে উঠল মায়ের দুধের চেয়ে প্রিয়। চল্লিশ হিজরীতে কাফিরকে পর্যন্ত লা‘নত ও গাল মন্দ করা হত না, আর একচল্লিশ হিজরীতে হযরত আলীর রাযি. বিরুদ্ধে ইসলামী খিলাফতের সর্বত্র গালাগালের ঝড় শুরু হল। চল্লিশ হিজরীতে সাধারণ সৈনিকের মনেও গনীমতের মালে খিয়ানতের কু-বাসনা জাগ্রত হত না কিন্তু একচল্লিশ হিজরীতে খোদ খলীফাতুল মুসলিমীন গনীমতের মাল আত্মসাতের মতলবে রীতিমত ফরমান জারী করতে লেগে গেলেন। চল্লিশ হিজরীতে খিলাফত ছিল ন্যায়-ইনসাফের উজ্জ্বল প্রতীক আর একচল্লিশ হিজরীতে জুলুম ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে দাঁড়াল কেন্দ্রের নীতি। চল্লিশ হিজরীতে শাসক-শাসিতের ঈমানী বল এবং আল্লাহু ভীতি এমনই প্রবলভাবে জাগ্রত ছিল যে, সাধারণ মানুষও প্রকাশ্যে রাজপথে খলীফার পথ রোধ করে দাড়াতে পারত। অথচ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খলীফাতুল মুসলিমীনের জুলুম-নির্যাতন এমনই চরম রূপ ধারণ করল যে মুখে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হল বিবেকের টুটি চেপে ধরা হল এবং চাবুকের নির্মম কষাঘাত হল সত্য ভাষণের পুরষ্কার।
মোট কথা চল্লিশ হিজরী শেষ হতে না হতেই ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির এমন সর্বনাশা প্লাবন দেখা দিল যা বিংশ শতকের সভ্য মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আমরা আজ দেখতে পাই।
এ প্রেক্ষিতে আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই যে, এসব আবোল তাবোল বকে অজ্ঞদের মধ্যে মিথ্যা আবেগ সৃষ্টি করা যায় নিজেকে চিন্তাবিদ ও গবেষক বলে জাহির করা যায় কিন্তু বাস্তব পর্যন্ত পৌছা যায় না বরং এ হচ্ছে এক ধরনের সংকীর্ণতা ইসলাম সম্পর্কে সামগ্রিক জ্ঞানের অভাব এবং অপরিণত মানসিকতার পরিচায়ক।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন