অনুসরণকারী

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

43. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*


      *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৪====🥀*


     *আহলে বাইতের কাফেলা সিরিয়ায়* 


      এই হৃদয় বিদারক ঘটনার পর আহলে বাইতের সদস্যদেরকে কুফায় ইবনে যিয়াদের নিকট পাঠানো হল। আর শহীদদের মাথা তার দরবারে পেশ করা হল। ইবনে যিয়াদ হযরত হুসাইনের রাযি. দাঁত মুবারক একটি লাঠি দ্বারা খোঁচা দিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী হযরত যায়েদ ইবনে আকরাম রাযি.।


      তিনি এই বেআদবী সহ্য করতে পারলেন না। বললেন: আল্লাহর শপথ! আমি নিজের চোখে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই ঠোটে চুম্বন করতে দেখেছি। এর সাথে বেআদবী কর না। একথা বলে তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন। ইবনে যিয়াদ বলল, বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তোমার বোধশক্তি যদি লোপ না পেত তাহলে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। হযরত যায়েদ বদ দুআ করতে করতে মজলিস থেকে চলে গেলেন।


      ইবনে যিয়াদ আহলে বাইতের এই কাফেলা এবং শহীদের মাথা শিমারের তত্বাবধানে দামেশকে ইয়াযীদের নিকট পাঠিয়ে দিল।


https://chat.whatsapp.com/IAmsnxFXehkI5mIL05ApPJ


      ইয়াযীদের দরবারে যখন হযরত হুসাইন রাযি. এর মাথা মুবারক রাখা হল আর পুরস্কারের লোভে শিমার নিজের এবং সাথিদের বীরত্বের কথা উচ্চকন্ঠে বলতে লাগল তখন ইয়াযীদ অশ্রুভরা কন্ঠে বলল: আফসোস তোমাদের উপর। তোমার যদি হুসাইনকে হত্যা না করতে তাহলে আমি তোমাদের প্রতি অধিক খুশি হতাম। আল্লাহর লানত হোক ইবনে মারজানার (ইবনে যিয়াদের) উপর। তার স্থলে যদি আমি হতাম তাহলে আল্লাহর কসম আমি হুসাইনকে মাফ করে দিতাম। আল্লাহ তুমি তাদের উপর রহমত নাযিল কর।


      ইয়াযীদের স্ত্রী হিন্দ বিনতে আব্দুল্লাহ বিন আমের মুখে চাদর পেঁচিয়ে দরবারে এসে বলল আমীরুল মুমিনীন। এটি কি রাসূলের কলিজার টুকরা হুসাইন ইবনে ফাতেমার মাথা।


      ইয়াযীদ জবাব দিল, হ্যাঁ। এটা হুসাইন রাসূল দৌহিত্রের মাথা। তুমি এর জন্য মাতম কর। আল্লাহ ইবনে যিয়াদকে ধ্বংস করুন। সে তাকে হত্যা করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তবে ইয়াযীদ তাকে শাস্তি দিল না বা কুফার শাসন ক্ষমতা থেকে বরখাস্ত করল না এটা তার চরম অযোগ্যতা প্রমাণ করে।


      অতঃপর ইয়াযীদ দরবারী লোকদেরকে সম্বোধন করে বলল, তোমরা কি জান, এই ঘটনা কেন ঘটল? হুসাইন রাযি. বলেছিল আমার পিতা হযরত আলী রাযি. ইয়াযীদের পিতার চেয়ে উত্তম। আমার মাতা সায়্যিদা ফাতেমা যাহরা রাযি. ইয়াযীদের মাতার চেয়ে উত্তম। আমার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াযীদের নানার চেয়ে উত্তম। আর আমি নিজেও তার চেয়ে উত্তম, তাই খেলাফতের হক ও আমারই বেশি।


      পিতার ব্যাপারে কথা হল আমার পিতা আর তার পিতা আল্লাহর সামনে নিজেদের মুআমালা পেশ করেছিলেন দুনিয়া স্বাক্ষী যে আল্লাহতালা আমার পিতার পক্ষে ফয়সালা করেছেন। উল্লেখ্য ইয়াযীদের এ বক্তব্য ভুল ছিল কারণ রাজত্ব পাওয়া আর উত্তম হওয়া কখনো এক জিনিষ নয়। তবে তার মা রাসূল তনয়া ফাতেমা রাযি. আমার মার চেয়ে উত্তম আর তার নানা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নানার চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি আল্লাহও কিয়ামতের দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে সে কখনো কোন ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ বলতে পারে না। তবে হুসাইন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন নি এবং কুরআনের এই আয়াতের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ হয়নি যেখানে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করছেন, বলুন হে আল্লাহ তুমিই সারা জগতের বাদশাহ, যাকে ইচ্ছা তুমি বাদশাহী দান কর আর যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নাও। (আল কামেল ৩/৪৩৮)


      আল্লাহই ভাল জানেন ইয়াযীদের এসব কথা তার অন্তরের প্রতিধ্বনি ছিল নাকি শুধু মাত্র চাপাবাজি ছিল। আর তার এই অশ্রু দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের অশ্রু ছিল নাকি রাজনৈতিক কুটচাল ছিল। কেননা ইতিহাসে এ ধরনের অশ্রুর দৃষ্টান্ত অনেক দেখতে পাওয়া যায়। ইউসুফ আ. এর ভায়েরাও তাকে কুপে নিক্ষেপ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় ঘরে ফিরে এসে পিতা হযরত ইয়াকুব আ. নিকট অনেক দুঃখ প্রকাশ করেছিল। পরবর্তী ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে এ সবই তার রাজনৈতিক চাল ছিল। অন্তরের প্রতিধ্বনি ছিল না। বস্তুত ইয়াযীদ শাসন ক্ষমতা লাভ করার পরে অনেক গুলি মারাত্মক ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল ইসলাম ইতিহাসে যার দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। যেহেতু নিছক দোষচর্চা আমাদের উদ্দেশ্য নয় তাই তার দুষ্কর্মের ফিরিস্তি পেশ করা থেকে আমরা বিরত থাকলাম। ঘটনা বুঝানোর স্বার্থে দু একটি বিষয় বলতে বাধ্য হচ্ছি। তাঁর অন্যায়ের মধ্যে ইমাম হুসাইনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ, তেমনিভাবে ইবনে হুসাইনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করাও একটি মারাত্মক অপরাধ তেমনিভাবে ইবনে যিয়াদকে শাস্তির সম্মুখীন না করাও তার পদস্খলন। আর প্রকৃত কথা হল ইবনে যিয়াদ যা করেছিল তারই নির্দেশে বা ইশারায় করেছিল। ইয়াযীদের দুষ্কর্মের সামান্য আলোচনা শুনুন।


      নিঃসন্দেহে ইয়াযীদ মুসলিম ইবনে উকবাকে তিন দিন পর্যন্ত মদীনাতে হত্যা যজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়ে সাংঘাতিক রকমের ভুল করেছিল। এই (অন্যায় মূলক) ভ্রান্তি তো ছিলই এর সাথে সাহাবায়ে কিরামের বিরাট একটি অংশ এবং তাদের সন্তানদের হত্যা করার অপরাধও যোগ হয়েছিল এর সাথে। পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে সে হযরত হোসাইন রাযি. কে হত্যা করিয়েছিল। তা ছাড়া সেই তিন দিনে মদীনায় সে এমন সীমাহীন অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল যার যথার্থ বর্ণনা ও বিবরণ তুলে ধরা আদৌ সম্ভব নয়। একমাত্র আল্লাহই তা ভাল জানেন। মুসলিম ইবনে উকবাকে মদীনায় প্রেরণের পেছনে ইয়াযীদের উদ্দেশ্যে ছিল ক্ষমতা সংহতকরণ ও তার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। যাতে কোন প্রতিপক্ষের অস্তিত্ব অবশিষ্ট না থাকে। কিন্তু এজন্য আল্লাহ তাকে শাস্তি দিলেন এবং তার অভিপ্রায় ব্যর্থ করে দিলেন। তাকে তিনি এমনভাবে পাকড়াও করলেন যে ভাবে ক্ষমতাদর্পীদের পাকড়াও করে থাকেন এবং তাকে মৃত্যু মুখে পতিত করলেন। আর অত্যাচারী জনপদের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এমন কঠিনই হয়ে থাকে। তার ধরা বড়ই কঠিন, মর্মন্তুদ। (আল-বিদায়া)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...