অনুসরণকারী

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

32. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *﷽   ﷽    ﷽    ﷽    ﷽*    *﷽*


*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -৩ ====🥀*


            *ইমাম হুসাইনও মক্কার পথে* 


      দ্বিতীয় রাতে হযরত হুসাইন রাযি. স্বীয় ভগ্নি উম্মে কুলসুম আর যয়নব এবং ভাতিজা ও ভাগ্নে যথাক্রমেঃ- আবুবকর জাফর, আব্বাস এবং আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে মক্কার পথে পাড়ি জমালেন। তবে তার ভ্রাতা মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া মদীনা ত্যাগ করা পছন্দ করলেন না এবং বিদায়ের প্রাক্কালে এই নসীহত করলেন- প্রিয় ভ্রাতা, তোমার চেয়ে বেশি প্রিয় আর মাহবুব আমার নিকট অন্য কেউ নাই ইয়াযীদের পক্ষে বাই’আতের অস্বীকৃতি বিষয়ে আমি তোমার সাথে একমত। তুমি তার বাই’আত করনা বরং নিজের দূতদেরকে বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করে তোমার পক্ষে বাই’আতের আহবান জানাবে। দেশবাসী যদি তোমার হাতে বাইআত করে তাহলে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করবে। আর যদি অস্বীকার করে তাহলে তুমি এমন কোন শহরে যেওনা যেখানকার লোকেরা দুদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তোমার পক্ষে অপরদল বিপক্ষে। অতঃপর সেই দুই দলের মধ্যে লড়াই হয় আর তুমি সর্বপ্রথম লড়াইয়ের জন্য বেরিয়ে আস। আর ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, যে ব্যক্তি ব্যক্তিগত গুণাবলী আর বংশীয় মর্যাদার দিক দিয়ে উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিল নিকৃষ্ট পন্থায় তার রক্তপাত ঘটানো হয় আর তার পরিবার পরিজনকে লাঞ্ছিত করা হয়।


      ইমাম হুসাইন রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই তাহলে আমি কোথায় যাব? মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া বললেন তুমি মক্কায় অবস্থান করতে থাক সেখানে যদি শান্তি-নিরাপত্তা লাভ কর তাহলে তো ভাল। নতুবা মরুভূমি কিংবা পাহাড়ি এলাকার দিকে চলে যেও। এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সফর করতে থাক। এই অবস্থায় খেয়াল রাখবে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। যাতে করে স্থায়ী একটা সিদ্ধান্ত নিতে পার। পরিস্থিতির প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রেখে কাজ করা ভাল, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পরে আফসোস করে কি লাভ? (আল কামেল / ৩/ পৃ. ৩৭৯, তারীখে ত্ববারী ৩/ পৃ.২৭১, আল বিদায়া ৭-৮/১৫৫).


      পথিমধ্যে ইমাম হুসাইনের রাযি. সাথে আব্দুল্লাহ ইবনে মুতীর সাক্ষাত হল। অবস্থা জানার পর তিনি ইমামের কাছে আরয করলেন, হযরত! আপনি যদি মক্কা ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার ইরাদা করে থাকেন তাহলে কুফায় মোটেও যাবেন না। সেটি বড়ই অমঙ্গলের শহর। আপনার পিতাকে সেখানেই শহীদ করা হয়েছে আপনার ভাইয়ের উপর সেখানেই আততায়ীর হামলা হয়েছে এবং তাকে সহায় সম্বলহীন ভাবে পরিত্যাগ করা হয়েছে। বরং যতদূর সম্ভব আপনি হারাম শরীফ ছাড়বেন না। কেননা হেজাযবাসীরা আপনার তুলনায় অন্য কাউকে প্রাধান্য দেবে না। সেখানে বসে আপনি আপনার সমর্থক আর কল্যাণকামীদেরকে অতি সহজেই নিজের পাশে হাজির করতে পারবেন।


       *কুফাবাসীদের দাওয়াতী চিঠিঃ* 


      হযরত ইমাম হুসাইন রাযি. মক্কা পৌঁছে আবু তালেবের ঘাঁটিতে অবস্থান নিলেন। মক্কার অধিবাসী এবং অন্যান্য এলাকার লোকজন যারা হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করেছিল তারা যখন হযরত ইমামের আগমনের সংবাদ অবহিত হল তখন দলে দলে তার খেদমতে হাজির হতে লাগল। এরা সর্বদা তাকে বেষ্টন করে থাকত এবং নিজেদের আনুগত্য আর প্রাণ উৎসর্গের প্রমাণ রাখতে সচেষ্ট হত। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি. খানায়ে কাবার এক প্রান্তে অবস্থান করছিলেন। তিনি সারাটি দিন নামায আর তাওয়াফের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন। কখনো কখনো ইমাম হুসাইনের রাযি. নিকট এসে পরামর্শে শরীক হতেন।


      কুফাবাসীরা প্রথম থেকেই আহলে বাইতের প্রতি সমর্থনের দাবীদার ছিল। তাদের কারণেই হযরত আলী রাযি. খেলাফতের রাজধানী মদীনা থেকে কুফায় স্থানান্তর করেছিলেন। এটা ভিন্ন কথা যে, তাদের এই দাবী কখনো পরীক্ষার কষ্টি পাথরে টিকতে পারেনি।


      কুফাবাসীরা যখন হযরত মু‘আবিয়ার রাযি. মৃত্যু সংবাদ অবগত হল তখন তারা উল্লাসিত হয়ে উঠল। সুলাইমান বিন যরদ খুযাই তদের সরদার ছিল। তার গৃহে গোপন পরামর্শ হল এবং সেখানে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, ইমাম হুসাইনকে রাযি. কুফায় এনে তার হাতে বাই’আত করে খেলাফতকে আবারো আহলে বাইতের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। কারণ তারাই এর উপযুক্ত ইয়াযীদ আদৌ এ পদের উপযুক্ত নয়।


      এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুফার নেতৃস্থানীয় লোকদের পক্ষ থেকে প্রায় দেড়শত চিঠি হযরত ইমামের নামে প্রেরণ করা হল। সে সব চিঠির সারমর্ম ছিল নিম্নরূপ: আল্লাহর পাকের শোকর যে, আপনার প্রতিপক্ষ মৃত্যু নিদ্রায় শায়িত। এখন আমরা ইমাম বিহীন অবস্থায় আছি। আপনি দ্রুত তাশরীফ নিয়ে আসুন যাতে আপনার সাহায্যে আমরা সত্যের উপর একত্রিত হতে পারি। নুমান বিন বশীরের (কুফার গভর্নর) পিছনে আমরা জুমার নামায ও পড়ি না আর ঈদের নামাযও পড়ি না। আমরা যদি অবগত হই যে, আপনি তাশরীফ নিয়ে আসছেন তাহলে আমরা তাকে সিরিয়ার সীমান্তে ঠেলে দেব। (ইবনে কাসীর ৪ খণ্ড-৮পৃ:)


      এসব চিঠি পত্র ছাড়াও কুফার বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ইমাম হুসাইনের রাযি. খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাকে কুফায় পাওয়ার অনুরোধ করতে লাগল। (আল কামেল ৩/পৃ. ৩৮৫, তারীখের ত্ববারী ৩/পৃ.২৭৩) আর বিদায়া ৮/১৫৮)


       *মুসলিম ইবনে আকীলের যাত্রা:* 


       অনুরোধের মাত্রা যখন সীমা ছাড়িয়ে গেল তখন হযরত হুসাইন রাযি. অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্বীয় চাচাত ভাই মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফায় প্রেরণ করলেন এবং তাদের নামে এই জওয়াব লিখলেনঃ আমি আপনাদের আগ্রহ সম্বন্ধে অবগত হয়েছি। আমি আপনাদের নিকট আমার ভাই এবং বিশ্বস্ত মুসলিম ইবনে আকীলকে পাঠাচ্ছি। তিনি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করে আমাকে সংবাদ দেবেন। আমি যদি জানতে পারি যে কুফার আম-খাছ, ছোট-বড় সকলেই আমাকে খলীফা বানানোর প্রত্যাশী তাহলে ইনশাআল্লাহ আর দেরী করব না। বাস্তব কথা হল ঐ ব্যক্তিই ইমাম হওয়ার যোগ্য যে আল্লাহর কিতাবের ধারক, ন্যায় বিচারক এবং সত্য দীনের অনুসারী। মুসলিম ইবনে আকীল মদীনা হতে কুফায় পৌঁছলেন এবং মুখতারের গৃহে অবস্থান করতে লাগলেন। হযরত আলীর রাযি. ভক্তবৃন্দরা তাকে ঘিরে ধরল। তারা দলে দলে আসত মুসলিম ইবনে আকীল তাদেরকে হযরত হুসাইনের চিঠি পড়ে শোনাতেন আর তারা কেঁদে কেঁদে অঙ্গীকার করত যে, ইমাম হুসাইনের সহযোগিতার ব্যাপারে কোন রকম শৈথিল্য আমরা প্রদর্শন করব না। নিজেদের জীবন তার জন্য উৎসর্গ করে দেব।


      নুমান ইবনে বশীর তখন হযরত মুআবিয়া কর্তৃক কুফার গভর্নর ছিলেন। তিনি সৎচরিত্র আর সন্ধি-প্রিয় ছিলেন। সব ঘটনা তিনি জানতে পারছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু এতটুকু করলেন যে, জামে মসজিদে বক্তৃতা করতে যেয়ে বললেন- হে লোক সকল তোমরা ফেৎনার দিকে ধাবিত হয়ো না। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করনা। এতে জান-মাল বরবাদ হবে আমি অপবাদ আর কু-ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন শাস্তি দিতে চাইনা তবে তোমরা যদি প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু কর তাহলে আমিও কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।


      বনু উমাইয়ার তথা ইয়াযীদ এর সমর্থকদের মধ্যে একজন নুমানকে বাধা দিয়ে বলল, হে আমীর! আপনি দুর্বলতা প্রকাশ করছেন। এভাবে কাজ হবে না। কিন্তু নুমান জবাব দিলেন আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যে দুর্বল হওয়া তার নাফরমানীতে শক্তিশালী হওয়ার চেয়ে ভাল।


      এই ব্যক্তিই ইয়াযীদকে সব কিছু লিখে জানাল এবং এ কথাও বলল যে, কুফায় যদি নিজের শাসন কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাও তাহলে শক্ত কোন ব্যক্তিকে গভর্নর করে পাঠাও। নুমানের মত দুর্বল ব্যক্তির দ্বারা এখানের ফেতনা নির্মূল হবে না।


      ইয়াযীদ সারজুন রুমীর পরামর্শ মত বসরার গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করল এবং আদেশ দিল কুফায় যেয়ে মুসলিম ইবনে আকীলকে সেখান থেকে বহিস্কার কর অথবা হত্যা কর।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...