অনুসরণকারী

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

11. *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১১ ======*


*ইবনে সাবা কর্তৃক মদীনা আক্রমণ* 


      হজ্জের মৌসুম যখন নিকটবর্তী এবং সকল এলাকার মুসলমানগণ বিশেষতঃ মদীনাবাসীগণ যখন মক্কা সফরে ব্যস্ত, সুযোগবুঝে তখনই নিঃশব্দে ইবনে সাবার সন্ত্রাসী দল মিশর বসরা ও কুফা তিন দিক হতে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা করল। যার দরুন পথিমধ্যে তারা কোথাও কোন বাধার সম্মুখীন হয়নি। মিশরীয় দলটির সাথে স্বয়ং ইবনে সাবাও ছিল। তারা মদীনার নিকটবর্তী স্থানে শিবির স্থাপন করতঃ মদীনাবাসীদের সমর্থন চাইলে হযরত আলী রাযি., তালহা রাযি., ও যুবাইর রাযি. প্রমুখ সাহাবীগণ তাদের তিরষ্কার করে ফিরিয়ে দেন এবং খারেজীদের সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই সন্ত্রাসী দলকে আল্লাহ তা’আলার লা’নতপ্রাপ্ত ও অভিশপ্ত দল বলে আখ্যায়িত করেন। এদিকে সিরিয়া, কুফা ও বসরা হতে খলীফার সাহায্যার্থে মুসলিম বাহিনী রওয়ানা হওয়ার সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা উক্ত বাহিনী সেখানে এসে পৌছার পূর্বেই কাজ সমাধা করার মানসে যিলক্বদ মাসের শেষ দিকে হঠাৎ মদীনা আক্রমণ করে বসে।


 *হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত* 


      মদীনার নিয়ন্ত্রণ দখল করে তারা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বাস ভবন অবরোধ করে। মদীনার অধিকাংশ মুসলমানই তখন হজ্জে গিয়েছিলেন। তাই মদীনা এক প্রকার জনশূন্যই ছিল। সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিল। আমাদের ব্যাপারে যারা হস্তক্ষেপ না করবে শুধু তারাই জানের নিরাপত্তা পাবে। তাদের মোকাবিলায় তখন উপস্থিত মদীনাবাসীদের শক্তি ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। তাই তারা নিশ্চুপ থাকলেন।


      সন্ত্রাসীরা খলীফার বাসভবন অবরোধ করে খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দেয়। হযরত উসমান রাযি. ভবনের ছাদে আরোহণ করে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে তাদের দাবী ও কার্যাবলীর অযৌক্তিকতা বুঝাতে চেষ্টা করেন। তবুও তারা খলীফার পদত্যাগের দাবীতেই অটল থাকে। কিন্তু হযরত উসমান রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার প্রতি আরোপিত সুস্পষ্ট ও কড়া নির্দেশের কারণে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেন।


*হযরত উসমান রাযি. এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ভবিষ্যদ্বানীঃ* 


      হযরত আয়িশা রাযি. বর্ণনা করেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক মারফত হযরত উসমান রাযি. কে ডেকে আনলেন। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ করে বসে স্বীয় হস্তদ্বয় তার স্কন্ধে রেখে (অতিশয় গুরুত্ব আরোপ করে) বললেন হে উসমান। অচিরেই আল্লাহ তা’আলা তোমাকে একটি জামা পরাবেন। যদি মুনাফিকরা তোমার নিকট তা খুলে ফেলার দাবি জানায় তবে তুমি কিন্তু তা খুলে ফেলো না। যতক্ষণ না (শহীদ হয়ে) আমার সঙ্গে মিলিত হও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা তিন বার বললেন।


      হযরত উসমান রাযি. এর মাধ্যমে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ফলে জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে কুফা, বসরা ও মিশর হতে আগত সন্ত্রাসী দলের ১৩ জন নেতা, হযরত উসমানের রাযি. গৃহের সামনের দরজায় হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাযি. সহ যুবক সাহাবীদের রাযি. পাহারা থাকায় তাঁর গৃহের পিছনের দেয়াল টপকে ঘরে প্রবেশ করে। হযরত উসমান রাযি. তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যান। নামায শেষ করে তিনি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত আরম্ভ করেন। এ অবস্থাতে সন্ত্রাসীরা তার উপর আক্রমণ চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে আহত করে ফেলে। একজন সন্ত্রাসী পদাঘাত করে উসমান রাযি. এর সম্মুখ হতে কুরআন শরীফ সরিয়ে দিতে চাইলেও তা ঘূর্ণয়মানভাবে তার সম্মুখেই পড়ে। অতঃপর মিশরীয় দলের সন্ত্রাসী নেতা সুদান ইবনে হুমরানের তরবারীর আঘাতে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই তনয়া হযরত উম্মে কুলসুম রাযি. ও হযরত রুক্বাইয়া রাযি. এর স্বামী খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান রাযি. শাহাদাত বরণ করেন। তাকে হত্যা করার পর সন্ত্রাসীরা তাঁর গৃহের সব কিছুই লুন্ঠন করে নেয়।


      হযরত উসমান রাযি. এর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইবনে সাবা গং নিযামে খিলাফত ধ্বংসে তাদের প্রাথমিক সাফল্য লাভ করে। হিজরী ২৫ সনে ইসলামী হুকুমত ধ্বংসে ইবনে সাবা যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল দীর্ঘ দশ বছর চেষ্টার পর হিজরী ৩৫ সনে খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার প্রথম পর্ব শেষ হয়। অতঃপর শুরু হয় ভেঙ্গে পড়া খিলাফত ব্যবস্থাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত ও সংহত না হতে দেয়ার ষড়যন্ত্র।


      ইবনে সাবারা দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী দল গঠন করলেও খলীফার হত্যাকাণ্ডে তার এ সফলতা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। কারণ তার দল এত বড় ও এত শক্তিশালী ছিল না যে, এত জঘন্য কাজ করতে পারবে বলে কল্পনা করা যায়। অন্যদিকে হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে জনগণের কোন রকম বিদ্রোহ ছিল না যার কারণে পূর্ব থেকে এ ধরনের কোন আশংকা বোধ করা হয়নি। খারেজীরা শুধু গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অকস্মাৎ এই কুকীর্তিতে সফল হয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা সম্পূর্ণ অতর্কিতে কাজ করে তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে সফলকাম হতে পেরেছিল। এজন্য হযরত উসমান রাযি. কে সঠিক সময়ে খারেজী তথা ইবনে সাবার দলকে কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করারও কোন সুযোগ নেই।


      তাছাড়া এ ঘটনা ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন। বস্তুতঃ তার মুখ হতে নিঃসৃত একটি বাক্যও মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে না।


 *মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণীঃ* 


      বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির রাযি. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিৎনা তথা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। তখন আবু বকর রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি সেই ফিৎনার যুগ পাবো? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- না। হযরত উমর রাযি. ও অনুরূপ প্রশ্ন করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না সূচক উত্তর দেন। অতঃপর হযরত উসমান রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি পাবো ? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যস্থল তো তুমিই হবে। (মুসনাদে বাযযার)


      বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশ’আরী রাযি. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্জন পরিবেশের উদ্দেশ্যে একটি বাগানের ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন এবং আমি বাগানের প্রবেশ পথে প্রহরী হয়ে থাকলাম। তখন হযরত আবু বরক রাযি. উপস্থিত হয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর। অতঃপর হযরত উমর রাযি. এসে অনুমতি প্রার্থনা করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কেও বললেন, অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর। অতঃপর হযরত উসমান রাযি. ও এসে অনুমতি চাইলেন।


      রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বললেন- অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর বালা মুসীবত ও আপদ বিপদের সাথে। তখন হযরত উসমান রাযি. বাগানে প্রবেশ করলেন। তার মুখে ছিল “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’লার এবং আল্লাহ্‌ তা’লার নিকটই সাহায্য কামনা করি। হে আল্লাহ্‌ (সেই বিপদে আমাকে) সবর ও ধৈর্য ধারণের শক্তি দাও। (বুখারী ও মুসলিম)


      হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বর্ণনা করেন, একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিৎনা তথা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন এবং বললেন- সেই ফিৎনার সময় ঐ মস্তকাবৃত লোকটি অন্যায়ভাবে মজলুম হয়ে নিহত হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন আমি তৎক্ষণাৎ সেই মস্তকাবৃত লোকটির প্রতি তাকিয়ে দেখি তিনি হযরত উসমান রাযি.। 


      এসকল হাদীসে হযরত উসমান রাযি. এর খিলাফত কালে খারিজী মুনাফিকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সেই ফিৎনায় হযরত উসমান রাযি. এর শহীদ হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী অতি স্পষ্ট।


      শাহাদাতের পূর্বে হযরত উসমানের রাযি. স্বপ্নঃ তাছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে আরও বর্ণিত আছে, যেদিন খলীফা হযরত উসমান রাযি. শহীদ হয়েছিলেন, সেদিন সকালে তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে, অদ্য আমি হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্ন দেখেছি। তিনি আমাকে বলেছেন হে উসমান। আজ তুমি আমার নিকট ইফতার করবে। সে মতে তিনি ঐ দিন রোযা রেখেছিলেন এবং রোযা অবস্থাতেই দিনের শেষে শহীদ হয়েছিলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)


      পূর্বের দিনও একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাও তিনি বর্ণনা করেছেন যে, গতকাল রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি যেন হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিক উপস্থিত হয়েছি। তাঁর নিক আবু বকর ও উমর রাযি. বসা ছিলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তুমি চলে যাও। আগামী কাল নিশ্চয়ই তুমি আমাদের নিকট এসে ইফতার করবে। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)


      বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযি. বর্ণনা করেছেন, খলীফা হযরত উসমান রাযি. অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় একবার আমি তার নিকট ‘আসলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন, হে ভাই! আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই দরওয়াজার নিকট দেখেছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে উসমান ! তোমাকে কি শত্রু দল অবরোধ করেছে ? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন তারা কি তোমাকে তৃষ্ণার্ত রেখেছে ? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক বালতি পানি দান করেন। আমি প্রাণ ভরে তা পান করলাম। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার সাহায্য করতে পারি। আর যদি ইচ্ছা কর তবে আমাদের নিকট এসে ইফতার করতে পার। উসমান রাযি. বললেন আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে ইফতার করাকেই গ্রহণ করেছি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...