*⛲ ♧ ﷽ ﷽ ﷽ ﷽* *♧* *⛲*
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত*
*ইতিহাস*
*🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১১====🥀*
*শাহাদাতের সকাল*
পরিশেষে আশুরা দিবসের সকালের উন্মেষ ঘটল। সূর্য রক্ত অশ্রু ছড়াতে ছড়াতে উদিত হল। হযরত হুসাইন রাযি. ফজরের নামায শেষে জীবন উৎসর্গকারী ৭২ জন সাথি নিয়ে রণাঙ্গনে এলেন। ডান দিকে যুবায়ের ইবনে কীন, বাম দিকে হাবীব ইবনে মুজাহেরকে নিযুক্ত করলেন।
আব্বাস ইবনে আলীর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে ইমাম হুসাইন রাযি. স্বয়ং ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করলেন এবং কুরআন শরীফ আনিয়া সামনে রাখলেন অতঃপর হাত তলে দূ’আ করলেন।
তিনি যদিও খুব ভালভাবে জানতেন যে, তার কোন চেষ্টা বাহ্যিকভাবে সফলকাম হবে না তবুও দলীলের পূর্ণতার জন্য কুফাবাসীদেরকে সম্বোধন করে নিম্নোক্ত ভাষণ প্রদান করলেন, যাতে করে কুফাবাসী আল্লাহর দরবারে কোন ওজর পেশ করতে না পারে। “হে লোক সকল! একটু থাম। আমার কথা শ্রবণ কর। যেন আমি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করতে পারি। তোমরা যদি আমার কথা শ্রবণ কর আর আমার সাথে ন্যায় বিচার কর তাহলে তোমাদের চেয়ে সৌভাগ্যশালী আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে তোমরা যদি এর জন্য প্রস্তুত না থাক তাহলে সেটা তোমাদের ইচ্ছা, ঘটনার সব দিক তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে। আর তোমরা যা ইচ্ছা করার অধিকার রাখবে। আমার সাথে কোন কিছু করতে বাদ রাখবে না, আমার সাহায্যকারী আমার আল্লাহ ।
https://chat.whatsapp.com/IAmsnxFXehkI5mIL05ApPJ
হযরত হুসাইন রাযি. এতটুকু বলতে না বলতেই মহিলাদের তাঁবু থেকে কান্নার রোল ভেসে এলো। তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ঠিকই বলেছিল। মহিলাদেরকে সাথে না আনাই ভাল ছিল। অতঃপর তিনি আব্বাস ইবনে আলীকে মহিলাদেরকে চুপ করানোর জন্য পাঠালেন। তারা নিশ্চুপ হয়ে গেল তিনি আবার বক্তৃতায় ফিরে এলেন, হে লোকেরা! একটু চিন্তা করে দেখ আমি কে? তারপরে ভেবে দেখ তোমাদের জন্য আমাকে হত্যা করা এবং আমাকে লাঞ্ছিত করা জায়েয আছে কি? আমি কি তোমাদের নবীর দৌহিত্র নই? আমি কি তার চাচাত ভাই আলীর পুত্র নই? সায়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা রাযি. কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? শহীদ জা’ফর তাইয়ার কি আমার চাচা ছিলেন না? আমাদের দুই ভাই সম্পর্কে তোমরা কি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রসিদ্ধ হাদীস শোননি “হে হাসান, হুসাইন! তোমরা জান্নাতের সরদার আর আহলে সুন্নাতের চোখের শীতলতা।” আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, অথচ আমি জীবনে কখনো মিথ্যা বলি নাই, তাহলে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক সাহাবী রাযি. এখনো জীবিত আছেন, তাদের জিজ্ঞাস করে দেখ। এতদসত্বেও কি তোমরা আমার রক্তপাত থেকে বিরত হবে না? নবীর এই হাদীসের ব্যাপারে কি তোমাদের কোন সন্দেহ আছে? অথবা এই ব্যাপারে কি কোন সন্দেহ আছে যে, আমি ফাতেমা যাহরার ছেলে হুসাইন? এতে যদি সন্দিহান হও তাহলে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলতে পারি যে, তোমরা পূর্ব-পশ্চিমে আমি ব্যতীত আর কাউকে নবী-দৌহিত্র রূপে আর ফাতেমার আদরের দুলাল হিসাবে পাবে না। তোমরা আমাকে কেন হত্যা করতে চাও? আমি তোমাদের কাউকে হত্যা করেছি? তোমাদের কারো ধনসম্পদ ডাকাতি করেছি? তোমাদের কাউকে আহত করেছি?
অতঃপর তিনি কুফায় কয়েকজন নেতার নাম ধরে ডাকলেন এবং বললেন, তোমরা কি পত্র প্রেরণ করে আমাকে আমন্ত্রণ জানাওনি?
তারা বলল- না, আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। হযরত হুসাইন বললেন, তোমরা অবশ্যই আমন্ত্রণ জানিয়েছ। তবে এখন আমার আগমন যদি পছন্দ না হয় তাহলে আমাকে নিজের আশ্রয়ের জায়গায় যেতে দাও।
এক ব্যক্তি বলল, আপনি আমার চাচাত ভাই ইবনে যিয়াদের সিদ্ধান্ত কেন মেনে নিচ্ছেন না? এটাই তো আপনার জন্য ভাল।
হযরত হুসাইন রাযি. বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি ছোট লোকদের মত আমার হাত দুশমনের হাতে দিতে পারি না। গোলামের মত তাদের দাসত্ব মেনে নিতে পারি না। আমি সকল অহংকারী থেকে যাদের কিয়ামতের উপর বিশ্বাস নাই- আল্লাহ তা’আলার আশ্রয় কামনা করছি। (আল কামেল ৩/৪১৮-১০)
ইমাম হুসাইনের রাযি. পদতলে হুর ইবনে ইয়াযীদঃ ইমাম হুসাইনের রাযি. এই ভাষন কুফাবাসীর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারল না। তবে হুর ইবনে ইয়াযীদ তামীমী ধীরে ধীরে ঘোড়া নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং কাছাকাছি পৌঁছে ঘোড়াকে জোড়ে এক গোড়ালী মেরে আহলে বাইতের বাহিনীতে যোগ দিলেন। তিনি ইমাম হুসাইনকে রাযি. বললেন, হে রাসূলের বংশধর! আমিই ঐ নরাধম যে সর্বপ্রথম আপনাকে বাধা দিয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম না যে, আমার সম্প্রদায় বদবখতীর চরম সীমায় পৌঁছে যাবে এবং যুদ্ধ ছাড়া আর কোন যুক্তি সংগত পন্থা অবলম্বন করবে না। এখন আমি আপনার পদতলে হাজির। শরীরে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে আপনার সাহচর্য্যের হক আদায় করব। আল্লাহর ওয়াস্তে বলুন, আমার এই ভূমিকা কি পিছনের গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে?
হযরত হুসাইন রাযি. খুশি হয়ে বললেন অবশ্যই হে হুর। দুনিয়াতেও তুমি হুর (স্বাধীন) আখেরাতেও ইনশাআল্লাহ দোযখের আযাব থেকে মুক্তি পাবে। হুর এবার স্বীয় কওমকে সম্বোধন করে বললেন: হে লোক সকল ইমাম হুসাইনের রাযি. প্রস্তাবিত দফা সমূহের মধ্যে যে কোন একটি দফা নাও এবং তার বিরুদ্ধে তরবারী ধারণের অভিশাপ থেকে বেঁচে যাও।
উমর ইবনে সাআদ বলল, আমি তো সমঝোতাই পছন্দ করি কিন্তু এটি তো আমার আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। অতঃপর কুফাবাসীদের পক্ষ থেকে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হল এবং যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। (আল কামেল ৩/৪২১)
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_