*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৩ ======*
*আয়িশা রাযি.-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ*
*দৃষ্টান্ত-৩-* নবী পত্মী হযরত আয়িশা রাযি.-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদের ঘটনাঃ
বনু মুস্তালিক যুদ্ধে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সঙ্গিনী ছিলেন হযরত আয়িশা রাযি.। যুদ্ধ সমাপ্তির পর মদীনা প্রত্যাবর্তনকালে এক মনযিলে কাফেলা অবস্থান করার পর শেষ রাতে প্রস্থানের ঘোষণা করা হলো যে, কাফেলা কিছুক্ষণের মধ্যে এখান থেকে রওয়ানা হয়ে যাবে। তাই সবাই যেন নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে প্রস্তুত হয়ে যায়। হযরত আয়িশা রাযি. ইস্তিঞ্জা (প্রাকৃতিক কার্জ) সম্পাদনের প্রয়োজনে জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন। সেখানে ঘটনাক্রমে তার গলার হার ছিঁড়ে হারিয়ে গেল, সেখানে তিনি তা তালাশ করতে লাগলেন। এতে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। ইতিমধ্যে কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেল। মনযিলে এসে কাফেলাকে না দেখে তিনি সেখানে কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করে বসে পড়লেন এবং সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যে নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লেন। সময় ছিল শেষরাত্রি, হযরত আয়িশা রাযি. ছুটাছুটি না করে তাঁকে খুঁজে বের করার সুবিধার্থে পূর্বের স্থানেই অপেক্ষা করতে লাগলেন।
এদিকে সাফওয়ান বিন মুআত্তাল রাযি. কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব থেকেই কাফেলার পশ্চাতে থেকে কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর ভুলবশতঃ কোন কিছু ফেলে গেলে বা রেখে গেলে তা কুড়িয়ে আনার দায়িত্বে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন। সে মতে তিনি পূর্বের মনজিল হতে সকাল নাগাদ উল্লেখিত মনজিলে এসে পৌঁছলেন। তখন পর্যন্ত প্রভাতরশ্মি ততটুকু উজ্জ্বল হয়ে উঠেনি। তিনি একজন মানুষকে নিদ্রামগ্ন দেখে কাছে এসে চিনতে পারলেন। তার মুখ থেকে বিচলিত কণ্ঠে “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” বেরিয়ে এল। তাঁর আওয়াজ শুনা মাত্র হযরত আয়িশা রাযি. জাগ্রত হয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে পড়লেন। অতঃপর হযরত সাফওয়ান রাযি. নিজের উট কাছে এনে বসিয়ে দিলে হযরত আয়িশা রাযি. তাতে সওয়ার হয়ে বসে যান। আর উক্ত সাহাবী রাযি. নিজে পায়ে হেটে হেটে উটের রশি ধরে আগে আগে চলতে লাগলেন। অবশেষে তিনি কাফেলার সাথে মিলিত হয়ে গেলেন।
এ ঘটনাটি নিয়ে মুনাফিকরা এক তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দিল। আব্দুল্লাহ বিন উবাই মুনাফিক হওয়া ছাড়াও সে ছিল অত্যন্ত অসৎ চরিত্রের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ব্যক্তিগতভাবেও তার ছিল প্রচণ্ড আক্রোশ ও চরম বিদ্বেষ। তাই সে নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাণপ্রিয় স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশার রাযি. পবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপন করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চরম লাঞ্ছনা ও মানসিক যাতনায় ফেলার চেষ্টা চালাল। এই হতভাগা ও তার সঙ্গীরা তখন হযরত আয়িশা রাযি. ও সাহাবী সাফওয়ানের রাযি. ব্যাপারে কুৎসা রটনা করতে লাগলো এবং এই মিথ্যা অপবাদের খুব প্রসার ঘটাতে লাগলো। যখন মানুষের মাঝে এই মুনাফিক রটিত অপবাদ চর্চা হতে লাগলো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে খুবই দুঃখিত হলেন। হযরত আয়িশার রাযি. তো দুঃখের কোন অন্তই ছিল না। সাধারণ মুসলমানরাও এতে দারুণভাবে বেদনাহত হলেন। এক মাস পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলো। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন মাজীদের সূরাহ নূরে ষোল আয়াত বিশিষ্ট দীর্ঘ দুই রুকু অবতীর্ণ করে তাতে হযরত আয়িশার রাযি. পবিত্রতা বর্ণনা ও অপবাদ রটনাকারীদের নিন্দাবাদ করেন। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপবাদ রটনাকারীদের হতে সাক্ষ্য তলব করেন। তারা এই ভিত্তিহীন অপবাদের সাক্ষ্য কোথা থেকে আনবে ? ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী কোন মুসলমানের চরিত্রে মিথ্যা অপবাদ আরোপের শাস্তি সরূপ প্রত্যেকের উপর আশি দোররা করে হদ্দে কযফ প্রয়োগের নির্দেশ দেন।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন