*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৭ ======*
*জঙ্গে সিফফীনের ইতিহাস*
*জঙ্গে সিফফীন মুসলিম বিশ্বকে স্থায়ীভাবে বিভক্ত করে রাখার আত্মঘাতী ষড়যন্ত্রঃ*
*আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ*
*لَوْ خَرَجُوْا فِیْكُمْ مَّا زَادُوْكُمْ اِلَّا خَبَالًا وَّلَا۠ اَوْضَعُوْا خِلٰلَكُمْ یَبْغُوْنَكُمُ الْفِتْنَۃَ ۚ وَفِیْكُمْ سَمّٰعُوْنَ لَهُمْ ؕ وَاللهُ عَلِیْمٌۢ بِالظّٰلِمِیْنَ ﴿۴۷﴾ لَقَدِ ابْتَغَوُا الْفِتْنَۃَ مِنْ قَبْلُ وَقَلَّبُوْا لَکَ الْاُمُوْرَ حَتّٰی جَآءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ اَمْرُ اللهِ وَهُمْ کٰرِهُوْنَ*
*অর্থঃ* যদি মুনাফিকরা তোমাদের সাথে (তাবুকের) জিহাদে বের হত তবে তোমাদের অনিষ্ট ছাড়া আর কিছু বৃদ্ধি করত না। আর অশ্ব ছুটাত তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি উদ্দেশ্যে। আর তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের গুপ্তচর। বস্তুতঃ আল্লাহ জালিমদের ভালভাবেই জানেন। তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির জন্য সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট পালট করে দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সত্য প্রতিশ্রুতি এসে গেল এবং জয়ী হল আল্লাহর হুকুম যে অবস্থায় তারা মন্দবোধ করছিল। (সূরাহ তাওবাহ ৪৭-৪৮)
মুনাফিকদের ব্যাপারে কুরআনে কারীমের উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বানী সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে জারী আছে দুনিয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জারী থাকবে। সেজন্য মুসলমানদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং নিম্মের ঘটনা প্রবাহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
হযরত আলী রাযি. বসরা হতে কুফায় প্রত্যাবর্তন করেন। কুফায় কিছু দিন অবস্থান করার পর আবার তিনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের লক্ষ্যে হযরত মুআবিয়া রাযি. এর উদ্দেশ্যে সিরিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখানেও সাবায়ীরা হযরত আলি ও হযরত মুআবিয়া রাযি. এর মাঝে যাতে কিছুতেই কোনরূপ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় ও তৎপর থাকে। এই দুস্কৃতিকারীরা হযরত আলী রাযি. কে চতুর্দিক হতে এমনভাবে পরিবেষ্টিত করে রেখেছিল এবং তাঁর দলের সাথে এরূপ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল যে হযরত আলী রাযি. কিছুতেই তাঁদের পরিবেষ্টন হতে বেরিয়ে ‘আসতে পারছিলেন না এবং তাদের বিচারও করতে পারছিলেন না। হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার হত্যাকাণ্ডে সফল হওয়ার পর সংখ্যায় নগণ্য হলেও রাজনৈতিকভাবে সাবায়ীরা তখন একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল হিসেবে সকলের মধ্যে প্রভাব ও ভীতি বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। সে সুবাদে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদ দখল করা ছাড়াও সকল ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাতে সামর্থ্য হয়েছিল। এ সকল কারণে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ খিলাফতের ভিত্তি মজবুত হওয়ার ব্যতিরেকে হযরত আলীর রাযি. পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কোন রূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না।
একদিকে যেমন হযরত আলী রাযি. সর্বদাই হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকাণ্ডের বদলা নেয়ার পূর্বে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ খিলাফতকে মজবুত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন। অপর দিকে হযরত আয়িশা রাযি. ত্বালহা, যুবাইর, মুআবিয়া রাযি. হযরত আলীর রাযি. চতুর্দিকে সাবায়ীদের দেখে তাঁকে খলীফা মানতে অস্বীকার করেন যাবত না তিনি সাবায়ীদেরকে স্বীয় সঙ্গ হতে বহিস্কার করে তাদের বিচার না করেন। আর তখনকার এরূপ জটিল পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিপরীত মত পোষণ করা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না।
লক্ষণীয় যে, আজ আমরা এর চেয়ে অনেক সাধারণ বিষয় নিয়েও বহুধাবিভক্ত হয়ে যাই। আর যদি এমন কোন কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হত তাহলে আমাদের মাঝে যে কত মত ও পথের সৃষ্টি হতো তা একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন। যা হোক, তখন এরূপ জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে সাবায়ী চক্র সফল হয়ে গেলে সাহাবায়ে কিরামের রাযি. মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় যা ছিল খুবই স্বাভাবিক।
তবে যে কোন মতানৈক্যের ক্ষেত্রে সকল মতই পরিপূর্ণ সঠিক হতে পারে না। একটি সঠিক হলে অপরটি ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আলোচ্য ঘটনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকাইদ হচ্ছে যে হযরত আলীর রাযি. মতই সঠিক ছিল।
আর ভিন্নমত পোষণকারী হযরত আয়িশা, ত্বালহা, যুবাইর ও মুআবিয়া রাযি. এর মত নির্ভুল ছিল না। কিন্তু তাদের সেই ভুল ইচ্ছাকৃত ও গোঁড়ামীপূর্ণ ছিল না বরং তা ছিল দীন ইসলামের স্বার্থে ও মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা ছিল তাদের উদ্ভাবিত পন্থায় অনিচ্ছাকৃত ইজতিহাদী ভুল।
আর শরী‘আতের বিধানমতে যে সকল ক্ষেত্রে মতানৈক্যের অবকাশ আছে সে সকল ক্ষেত্রে ‘মুজতাহিদগন’ তথা শরীয়ত স্বীকৃত প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিগণ যদি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছার জন্য সম্ভাব্য চিন্তা-ফিকির করার পরও কোনরূপ ভুল করে ফেলেন তবুও তারা গুনাহগার তো হনই না বরং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত মুজতাহিদ এর ন্যায় তারাও সাওয়াবের অংশীদার হন। তবে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত মুজতাহিদগণ দ্বিগুণ সাওয়াব পান আর সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পর ভুল সিদ্ধান্তের উপনীত মুজতাহিদগণ পান তার অর্ধেক সাওয়াব। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এক চির অমর বানীতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন: যখন মুজতাহিদ বিচারক ইজতিহাদের মাধ্যমে সঠিক বিচার করে তখন সেই দুই সাওয়াবের অধিকারী হয়। আর যখন ইজতিহাদ করে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল সিদ্ধান্ত দেয় তখন সে এক সাওয়াব পায়।
হযরত আলী রাযি. তাঁর মত অনুযায়ী সাবায়ীদের বিচারের পূর্বে ঐক্যবদ্ধ খিলাফত প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে হযরত মুআবিয়া রাযি. ও তার অনুগত লোকদের ঐক্যবদ্ধ মুসলিম শক্তির পতাকাতলে আনার জন্য সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে জঙ্গে জামালের ন্যায় এখানেও উভয় বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়েও যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে প্রথমে তারা আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান। যদিও হযরত আলী ও হযরত মুআবিয়া রাযি. বা তাঁদের দলের কোন মুসলমানই পরস্পরের কোন্দল ও যুদ্ধ কামনা করতেন না। কিন্তু হযরত আলীর রাযি. পক্ষে আলোচনাকারী প্রতিনিধি দলে সাবায়ীরা তাদের প্রভাব ও শক্তি বলে (যা পরিস্থিতির নাজুকতার কারণে হযরত আলীর রাযি. নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল) অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে অনুপ্রবেশ করে আলোচনায় আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ শুরুতেই ভণ্ডুল করে দেয়।
তারা হযরত মুআবিয়ার রাযি. সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ছাড়াও তাকে যা ইচ্ছে তাই বলে গাল-মন্দ করতে থাকে এবং বার বার তাকে যুদ্ধের হুমকি দিতে থাকে। হযরত আলী রাযি. শান্তি চুক্তি কামিয়াব করার জন্য বার বার প্রতিনিধি দল পাঠানো সত্ত্বেও ঐ একই কারণে সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়। হযরত আলীর রাযি. পক্ষের লোক হয়ে সাবায়ীদের এহেন আচরণ ও স্পর্ধা অবলোকনে হযরত মুআবিয়া রাযি. সাবায়ীদের বহিস্কার ও বিচারের পূর্বে হযরত আলী রাযি. কে খলীফা না মানার দাবী আরো যুক্তিযুক্ত ও সুসংহত হয়। যার দরুন শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, পরিণতিতে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। যুদ্ধ বেধে গেলেও প্রথমে কোন পক্ষেরই তেমন উদ্যম ও স্পৃহা পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। কারণ কোন পক্ষই মুসলমানদের পারস্পরিক যুদ্ধে আগ্রহী ছিল না বরং তারা যথাসাধ্য এ আত্মঘাতী যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু এতে কোন ফল হয়নি বরং ধীরে ধীরে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং হযরত আলী রাযি. জয় লাভের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। যখন হযরত আলীর রাযি. চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হয়ে এলো তখনই হঠাৎ হযরত মুআবিয়ার সিরিয় বাহিনীর লোকেরা তীরের মাথায় কুরআন শরীফ ঝুলিয়ে যুদ্ধ বন্ধ ও কুরআনের ফায়সালা মেনে নেয়ার জন্য উভয় পক্ষকে আহ্বান জানায়। হযরত আলী রাযি. এটাকে সিরিয়দের পরাজয় এড়ানোর কৌশল অভিহিত করে তার বাহিনীকে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সাবায়ী দল হযরত আলীর রাযি. চূড়ান্ত বিজয়ে নিজেদের মৃত্যু ঘণ্টা শুনতে পায়। কেননা এ যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারলে হযরত আলীর রাযি. জন্য ঐক্যবদ্ধ খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আর কোন বাধাই থাকবে না। অতঃপর তিনি সাবায়ীদের সমূলে ধ্বংস করবেন। তাই তারা হযরত আলী রাযি. কে বিজয়ের দিকে অগ্রসর হতে দেখেই কোন ছুতা ধরে যে কোনভাবে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্বেই যুদ্ধ থামিয়ে দিয়ে মুসলমান ও মুসলিম বিশ্বকে স্থায়ীভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত করে রাখতে এবং ঐক্যবদ্ধ খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হতে দেয়ার জন্য ওঁত পেতে ছিল।
এ লক্ষ্যে সিরিয়দের কুরআন উঁচিয়ে যুদ্ধ বন্ধের আবেদন শোনা মাত্র হযরত আলীর রাযি. নির্দেশ উপেক্ষা করে তাঁর সৈন্যবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রাখা সাবায়ী নেতারা সুযোগ বুঝে এই বলে বেকে বসল এটা কিভাবে হতে পারে যে আমাদের ‘আসমানী গ্রন্থ আল-কুরআনের প্রতি আহ্বান করা হবে আর আমরা তা অস্বীকার করব? এতদসত্ত্বেও হযরত আলী রাযি. যুদ্ধ অব্যাহত রাখার তাগিদ করলেন কমান্ডাররা তাঁকে সরাসরি এই বলে হুমকি দেয় আপনি যুদ্ধ বন্ধ করুন অন্যথায় আমরা আপনার সঙ্গেও তেমনি আচরণ করবো যেমনটি উসমানের রাযি. সাথে করেছি।
সাবায়ীরা কুরআনের দোহাই দিয়ে হযরত আলীর রাযি. সৈন্যবাহিনীর একটি বিরাট অংশকে বিভ্রান্ত করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। তখন নিজের দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশংকায় হযরত আলী রা. অপারগ হয়ে তার সিপাহসালার ‘আশতার’ কে যুদ্ধ বন্ধ করে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। আশতার যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করে ফিরে আসেন। ইতিহাসে এ যুদ্ধ জঙ্গে সিফফীন নামে প্রসিদ্ধ।
যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর হযরত আলী রাযি. হযরত মুআবিয়ার রাযি. নিকট দূত পাঠিয়ে কুরআন শরীফের ফয়সালা মেনে নেয়ার ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। হযরত মুআবিয়া রাযি. উত্তর পাঠালেন উভয় পক্ষ একজন করে সালিশ (তৃতীয় পক্ষ) নিয়োগ করবেন এবং তাদের নিকট হতে কুরআনের বিরুদ্ধে কোন ফয়সালা না করার অঙ্গীকার নিবেন। অতঃপর কুরআনের নির্দেশ মুতাবিক তারা দু’জনে আমাদের বিরোধ নিষ্পত্তির যে উপায় নির্ধারণ করবেন আমরা তা মেনে নিব। হযরত আলীর রাযি. বাহিনীর লোকেরা এটাকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করলেন।
অতঃপর হযরত আলীর রাযি. পক্ষ হতে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মূসা আশআরী রাযি. কে এবং হযরত মুআবিয়ার রাযি. পক্ষ হতে অপর প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আমার ইবনুল ‘আস রাযি. কে সালিশ নির্ধারণ করা হয়। উভয় পক্ষই এ দুই সালিশ কুরআন অনুযায়ী যে ফয়সালা করবেন তা মেনে সেটার বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। এ লক্ষ্যে তাদেরকে ছয় মাসের সময় দেয়া হয় এবং উভয় সালিশের জান ও মালের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও প্রমাণভিত্তিক বর্ণনা অনুযায়ী পরবর্তী ঘটনার বিবরণ এরূপ জানা যায় যে চুক্তি সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর সালিশী সাহাবীদ্বয় রাযি. সদলবলে ‘দাউমাতুল জান্দাল’ নামক স্থানে একত্রিত হলেন। তাছাড়া নিরপেক্ষ আরো কয়েকজন বিশিষ্ট বুযুর্গ সাহাবীও রাযি. তথায় উপস্থিত হন।
দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনার পর উভয় সালিশ হযরত আলীর রাযি. খিলাফত বিতর্কিত হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে এ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এ বিষয়টি লিখিত হয়ে যায় এবং তাতে উভয়ে দস্তখত করেন। আর হযরত মুআবিয়া রাযি. যেহেতু পূর্ব হতে খলীফাই ছিলেন না এবং তিনি নিজেও এখনো পর্যন্ত খিলাফতের দাবী করেন নি তাই তাঁকে খিলাফতের মসনদে বহাল রাখা বা অব্যাহতি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
অতঃপর উক্ত মজলিসে সমগ্র উম্মতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয়। হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমরের রাযি. নাম প্রস্তাব করেন। তিনি মুসলমানদের এই পারস্পরিক হানাহানিতে বরাবরই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে ‘আসছিলেন। অপর পক্ষে হযরত আমার ইবনুল ‘আস রাযি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনীহার কথা উল্লেখপূর্বক তিনি বিশিষ্ট আনসারী রাযি. সাহাবী হযরত সা‘আদ বিন আবী ওয়াক্কাসের রাযি. নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. তাতে দ্বিমত পোষণ করেন। অতঃপর হযরত আমর ইবনুল ‘আস রাযি. আরো একাধিক বুযুর্গ সাহাবী রাযি. নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু কারো ব্যাপারেই তাঁরা উভয়ে একমত হতে পারেননি।
অবশেষে সালিশ সাহাবীদ্বয় রাযি. নতুন খলীফা মনোনয়নের বিষয়টি তখন পর্যন্ত যে সকল প্রবীণ সাহাবী রাযি. জীবিত ছিলেন তাঁদের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন শেষ করেন। অবশ্য নতুন খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হযরত আলী এবং মুআবিয়া রাযি. কে আঞ্চলিক হামি বা প্রশাসক হিসেবে এদের অধীনস্থ এলাকার মধ্যে একথার উপর বহাল রাখা হয় যে, তাঁরা দুজন এ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে নিজ নিজ এলাকার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এ কথার উপর হযরত আবু মুসা আশআরী ও আমর ইবনুল আসের রাযি. সালিশী বৈঠক শেষ হয়। (আল-আওয়াসিম-মিনাল ক্বাওয়াসিম-১৮৪)
এখানে উল্লেখ্য যে, তাহ্কীম তথা সালিশ গঠন ও সালিশ কর্তৃক ফয়সালা ঘোষণার পর হযরত আলী রাযি. ও মুআবিয়ার রাযি. দলের মধ্যে আর কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত হয়নি। বরং উভয় পক্ষই যুদ্ধ বিরতি মেনে নেয় এবং তার উপর বহাল থাকে।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন