অনুসরণকারী

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

14. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস

 *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস* 


 *====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৪ ======*


*সফলতার পথে সাবায়ী ষড়যন্ত্র* 


      এদিকে হযরত আলী রাযি. খলীফা মনোনীত হওয়ার পর সাবায়ী দল কর্তৃক সৃষ্ট গোলযোগপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল মুহূর্তে তার চতুর্দিকে সাবায়ীদের শক্ত আধিপত্য ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থান এবং এরই সঙ্গে হযরত আলীর রাযি. সমর্থন ও ক্ষমতার প্রভাবে সাবায়ী চক্রের দৃঢ় অবস্থান ও প্রভাব কিছুতেই খতম করতে না পারার দরুন হযরত আলী রাযি. বিরোধী শিবিরে অবস্থান গ্রহণকারী সাহাবীগণের রাযি. সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলছিল।


      আর এর মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্যকে চূর্ণ করে তাদেরকে দুই শিবিরে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র সফলতার দিকে এগুচ্ছিল। এক দিকে হযরত আয়িশা, তালহা, যুবাইর, মুআবিয়া প্রমুখ সাহাবা রাযি. ও তাদের অনুসারীগণ হযরত আলীর রাযি. প্রতি তাদের দাবী ছিল আপনি খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার প্রথম কর্তব্য হচ্ছে হযরত উসমানের রাযি. হত্যার বদলা নেয়া। অপর দিকে হযরত আলী রাযি. ও তাঁর সমর্থকগণের বক্তব্য ছিল যেহেতু আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সাবায়ীদের দৃঢ় অবস্থান ও প্রভাব সীমিত শক্তি দ্বারা খতম করতে পারছি না তাই আপনারাও এগিয়ে আসুন এবং নির্বাচিত খলীফার হাতে বাই’আত করে তার হাত কে শক্তিশালী করুন এবং খিলাফতের ভিত্তি মজবুত করুন। অতঃপর তিনি অবশ্যই তাদের (সাবায়ী) বিচার করবেন। হযরত উসমানের রাযি. রক্ত তিনি কিছুতেই বৃথা যেতে দিতে পারেন না।


      হযরত আলী রাযি. এ বক্তব্য জনসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। অনেকে হযরত আলীর রাযি. সাথে এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করলেও অন্যরা এটাকে হযরত উসমানের রাযি. হত্যার বদলা নেয়া হতে তাঁর পাশ কাটানোর চেষ্টা বলে অভিহিত করলো। আর সাবায়ীরা হযরত আলীর রাযি. উল্লেখিত বক্তব্য শ্রবণে চিন্তা করলো যে যদি তিনি প্রতিকুল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সামান্য নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ পান, তাহলে আমাদের আর রক্ষা নেই। অতএব আমদের এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির বিরুদ্ধে সর্বদা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।


      এদিকে হযরত মুআবিয়া রাযি. তাঁর শাসিত ‘শাম প্রদেশে’ হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারীদের বদলা নেয়ার পক্ষে জনমত গঠনে ব্যস্ত থাকায় হযরত আলী রাযি. তাঁর প্রতি বাইআতের আহ্বান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেন। হযরত মুআবিয়ার রাযি. পক্ষ হতে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ার হযরত আলী রাযি. বুঝে নিলেন যে, ব্যাপারটি এত সহজে সমাধান হবার নয়। অতএব, তিনি হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিরুদ্ধে শাম (সিরিয়া) অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।


      অপরদিকে হযরত আয়িশা রাযি. মক্কা হতে হজ্জ পালন করে মদীনা ফিরার সময় পথিমধ্যে সাবায়ী দল কর্তৃক হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাত ও মদীনা দখলের সংবাদ শ্রবণ পূর্বক মক্কা প্রত্যাবর্তন করে সাবায়ীদের বিচার ও মদীনাকে তাদের দখলমুক্ত করার পক্ষ জনমত গঠন করতে থাকেন। হযরত ত্বালহা ও যুবাইর রাযি. সহ আরো অনেকেই মদীনা থেকে মক্কায় এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। তাঁদের পরামর্শে হযরত আয়িশা রাযি. হযরত আলীর রাযি. উপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে, অর্থ ও সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য সমমনা লোকদের সাথে বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।


      হযরত আয়িশা রাযি. কর্তৃক বসরা অভিযানের সংবাদ শুনে তথায় হযরত আলী রাযি. কর্তৃক নিযুক্ত গভর্নর উসমান বিন হানিফ এ অভিযান প্রতিহত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অতঃপর হযরত আয়িশা রাযি. সদলবলে বসরা আগমনের পর উভয় পক্ষ যুদ্ধ এড়িয়ে সন্ধির পথ বের করতে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু বসরায় নিযুক্ত আব্দুল্লাহ বিন সাবার এজেন্ট হাকিম বিন জাবাল হঠাৎ করে তার দল নিয়ে হযরত আয়িশার রাযি. বাহিনীর উপর আক্রমণ করে বসে। কিন্তু হযরত আয়িশা রাযি. তাঁর বাহিনীকে যুদ্ধ এড়িয়ে শুধু প্রতিরোধের নির্দেশ দেন।


      কিন্তু ধীরে ধীরে এ যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে মুহূর্তে উসমান বিন হানিফ হাকিম বিন জাবালার পক্ষ অবলম্বন করেন। অবশেষে উসমান বিন হানিফ পরাজিত হয় এবং বসরা শহর হযরত আয়িশার রাযি. নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বসরা দখলের পর হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে যে সকল বসরাবাসী বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল হযরত ত্বালহা ও যুবাইরের রাযি. নির্দেশে তাদের অনেককেই গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়। আর কিছু লোক পলায়ন করে আত্মরক্ষা করে।


      হযরত আয়িশার রাযি. বসরা অভিযান ও তথায় তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংবাদ শুনে হযরত আলী রাযি. সিরিয়া অভিযান স্থগিত রেখে ইরাক তথা বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ‘যী-ক্বার’ নামক স্থানে হযরত আলী রাযি. বসরার নিকট শিবির স্থাপন করেন।


      সন্ধি প্রচেষ্টাঃ হযরত আলী রাযি. আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ নিষ্পত্তির আশায় ক্বা‘ ক্কা‘ বিন আমরকে বসরায় পাঠালেন। ক্কা‘ ক্কা‘ একজন বিচক্ষণ ও বাকপটু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হযরত আয়িশা, ত্বালহা ও যুবাইরের রাযি. দরবারে এসে আরয করলেন আপনারা যে এত কষ্ট করে এখানে এসেছেন, এতে আপনাদের উদ্দেশ্য ও নেক নিয়ত কি? হযরত আয়িশা রাযি. ও তাঁর সঙ্গীরা উত্তর দিলেন আমাদের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ঐক্যে যে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করা ও কুরআনের আদেশ বাস্তবায়িত করা।


      ক্বা‘ ক্বা‘ বললেন- তাহলে এ লক্ষ্য অর্জনে আপনারা কি পন্থা নির্ধারণ করেছেন ? তারা উত্তর দিলেন- ‘হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। কেননা তাঁর হত্যার কিসাস (হত্যার বদলে হত্যাকারীকে হত্যা করা) না নেয়া হলে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করা হবে।


      ক্বা‘ ক্বা‘ বললেন- হযরত উসমানের রাযি. হত্যার কিসাসের দাবী তো যুক্তিযুক্ত এবং তাতে আমাদের কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত খিলাফতের ভিত্তি সুদৃঢ় না হবে এবং রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে না ‘আসবে ততক্ষণ তো এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর নয়। দেখুন আপনারা বসরার বিদ্রোহীদের নিকট হতে কিসাস নিয়েছেন কিন্তু হারকুম বিন যাহীরকে শায়েস্তা করতে পারেননি বরং তাকে হত্যার করতে চাইলে তার পক্ষে ছয় হাজার মানুষ দাড়িয়ে গেল অবশেষে আপনারা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তাহলে আপনারা যখন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকরীদের মধ্য হতে একজনকে আপাততঃ ছেড়ে দিতে পারলেন তাহলে হযরত আলী রাযি. যদি সকলের বিচার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন তাহলে তার অন্যায় কোথায়? অতএব, এই অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার সমাধান এভাবেই হতে পারে যে, আপনারা সকলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর রাযি. পতাকাতলে সমবেত হয়ে বিদ্রোহীদের বিচারের জন্য তাঁর হাতকে শক্তিশালী করবেন এবং নিজেদেরকে ও আমাদেরকে এমন বিপদে নিক্ষেপ করা হতে বিরত থাকবেন যার পরিণতিতে আমরা উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাব। কোন একক ব্যক্তি বা দলের নয় বরং তা সমগ্র জাতির ঐক্য ভাঙনের কারণ হবে। আমি আশা করি আপনারা যুদ্ধ বিগ্রহের চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই অগ্রাধিকার দিবেন।


      ক্বা‘ক্বা‘র এ যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনায় হযরত আয়িশা রাযি. ও তাঁর দুই অনুসারী হযরত ত্বালহা ও যুবাইর রাযি. অত্যন্ত প্রভাবান্বিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনার এ ফর্মুলা তো অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু হযরত আলীর রাযি. ও কি এই মত? যদি তাঁরও এই মত হয়ে থাকে, আর তিনি হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকরীদের বিচারে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে অতি সহজেই এ সংকট নিরসন হতে পারে।


      ক্বা’ক্বা’ ফিরে এসে হযরত আলীকে রাযি. উপরোক্ত আলোচনার বিবরণ শুনালে হযরত আলী রাযি. অত্যন্ত খুশী ও আশান্বিত হয়ে উঠলেন । ক্বা‘ক্বা‘র সঙ্গে হযরত ত্বালহা ও হযরত যুবাইরের রাযি. কিছু অনুসারীও হযরত আলীর রাযি. নিকট তার প্রকৃত মনোভাব জানার জন্য ‘আসল। কেননা তাদের নিকট সাবায়ীরা এই অপপ্রচার চালাচ্ছিল যে, হযরত আলী রাযি. বসরা বিজয় করে তথাকার যুবকদের হত্যা করবেন আর শিশু ও নারীদের গোলাম-বাঁদী বানিয়ে নিবেন।


      হযরত আলী রাযি. তাদেরকে একান্তে নিয়ে এ সকল মিথ্যা অপপ্রচারে কান না দেয়ার পরামর্শ দেন এবং তার পক্ষ হতে এরূপ আচরণ না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তারা হযরত আলীর রাযি. বাহিনীকে শান্তির প্রত্যাশী ও যুদ্ধ পরিহারে আগ্রহীই দেখতে পেল। দীন ও ইসলামী উম্মাহর স্বার্থে উভয় পক্ষের এই ইখলাস ও নমনীয়তায় যে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাতে মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধের আশংকা দূরীভূত হয়ে ‘আসছিল আর এরূপ আশার আলো দেখা যাচ্ছিল যে, মুসলমানদের উভয় পক্ষ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সাবায়ীদের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব কলহকে ভুলে গিয়ে অচিরেই চূড়ান্ত ঐক্যের ঘোষণা দিবেন এবং উভয় পক্ষ হযরত আলীর রাযি. খিলাফতের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হয়ে খিলাফতের ভিত্তিকে দৃঢ় করে খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী ও হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী সাবায়ী চক্রকে সমূলে উৎখাত করে তাদের সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত গুঁড়িয়ে দিবেন এবং তাদেরকে চরম শাস্তি প্রদান করবেন।


      অতএব, উভয় পক্ষের এই ঐক্য ইসলাম ও ইসলামের উন্নতির মূল ভিত্তি ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ও মুসলমানদের জন্য মঙ্গলজনক হলেও আব্দুল্লাহ বিন সাবা ও তার দলের জন্য তা ছিল মৃত্যু ঘণ্টা । তাই তারা এতে নিজেদের প্রমাদ গুনলো এবং যে কোন মূল্যে মুসলমানদের এ ঐক্য প্রয়াস ব্যর্থ করার হীন ষড়যন্ত্রে মত্ত্ব হল। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে উদ্বৃত্ত হচ্ছে।


   _*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

44. ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*

 *⛲ ♧  ﷽   ﷽   ﷽   ﷽*  *♧*  *⛲*       *ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*  *🥀====তৃতীয় অধ্যায়,পর্ব -১৫====🥀*      *আহলে বাইতের সদস্য ব...