*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৭ ======*
*ইবনে সাবার নানাবিধ অপকৌশল*
ধুরন্ধর ইবনে সাবা নতুন এই সকল মুনাফিক ও পুরাতন মুনাফিক যারা হরত আবু বকর ও হযরত উমর রাযি. এর খিলাফত কালে কখনো চোখ খোলার সাহস পেত না তাদের নিয়ে একটি গোপন দল গঠন করে। ইবনে সাবার এই দলকে বলা হয় খারিজী বা সাবায়ী দল। “নিযামে খিলাফাত” তথা মুসলমানদের সর্ব সম্মত একতাপূর্ণ সুদৃঢ় খিলাফত তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ধ্বংসের লক্ষ্য সামনে রেখে ইবনে সাবা সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা চালায় খলীফাসহ রাষ্ট্রীয় কার্যে নিয়োজিত বিভিন্ন গভর্নর সাহাবীগণের রাযি. নামে অন্যান্য লোকদের নিকট কুৎসা রটিয়ে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে।
সাহাবীগণের রাযি. দোষ চর্চা হারাম হওয়া সত্ত্বেও এই সাবায়ী চক্র হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে নিযামে খিলাফাত ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে সম্পূর্ণ বানোয়াটভাবে দোষ চর্চার পথকে বেছে নেয়। এর পূর্বে এমন কোন জামা’আত বা দলের আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেনি যারা সাহাবী রাযি. না হয়েও সাহাবীগণের রাযি. দোষ চর্চার কল্পনা করেছে। অবশ্য এই বানোয়াট দোষ চর্চার পথ অবলম্বন করে তারা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। একজন সাহাবীর রাযি. নিকট মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন সাবা হযরত মুআবিয়া রাযি. সম্পর্কে মিথ্যা সমালোচনা করলে তিনি তাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন- তুই কে? কসম খোদার আমার ধারণা তুই কোন ইয়াহুদীর বাচ্চা। আরেকজন সাহাবীর রাযি. নিকট গিয়ে হযরত মুআবিয়ার রাযি. সম্পর্কে মিথ্যা সমালোচনা করলে তিনি তাকে পাকড়াও করে হযরত মুআবিয়ার রাযি. দরবারে উপস্থিত করেন। হযরত মুআবিয়া রাযি. সুমদয় ঘটনা খলীফা উসমান রাযি. এর নিকট জানিয়ে পাঠান। হযরত উসমান রাযি. এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যার বিবরণ বক্ষ্যমাণ আলোচনায় বিধৃত হবে। উল্লেখ্য ইবনে সাবা এ সময়ে সিরিয়ায় অবস্থান করছিল এবং সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন তখন হযরত মুআবিয়া রাযি.।
অতঃপর ইবনে সাবা সিরিয়া হতে বসরায় এসে এখানকার এক পুরাতন দাগী সন্ত্রাসী ও ডাকাতের বাড়ীতে বসে আরো কতিপয় লোককে নিয়ে এক গোপন বৈঠক করে। সেখানে সাংকেতিক ভাষায় একটি কার্য পরিচালনার প্রস্তাব করলে তা গৃহীত হয়। বসরার গভর্নর গোপন সূত্রে এই সংবাদ পেয়ে তাকে বসরা হতে বহিস্কার করলেন। ফলে সেখান থেকে সে কুফায় চলে যায়। কিছুদিন পর সেখান হতেও বহিস্কৃত হয়ে মিশরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর এরই মধ্যে সে বসরা ও কুফায় তার অনুসারীদের সমন্বয়ে গোপন দলের একটি স্থানীয় কমিটি তথা ষড়যন্ত্রকারী দল গঠন করে দিয়ে যায়।
মিশরে গিয়ে সে তার কেন্দ্রীয় দফতর ও প্রধান ঘাটি স্থাপন করে এবং বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষতঃ বসরা ও কুফায় অবস্থানরত তার সুসংগঠিত অনুসারীদের সঙ্গে চিঠি-পত্রের মাধ্যমে সর্বদা যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। তাদের মাধ্যমে সে মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা আরম্ভ করে। তার স্বজনপ্রীতি বংশের লোকদের চাকুরীর ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অধিক হারে তাদের মাঝে বণ্টনের কল্পিত অভিযোগ উত্থাপন করে। অধিকন্তু তাকে (হযরত উসমান রাযি. আরো বেশী দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আব্দুল্লাহ বিন সাবার সহকর্মীরা আরো অনেক গভর্নর সাহাবীর রাযি. বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে। এরূপ ষড়যন্ত্রকারী খারিজীরা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা -অতিরঞ্জনকেই বড় অস্ত্ররূপে ব্যবহার করে। এমন কি তারা এসব কল্পিত মিথ্যা অপবাদগুলোকে এরূপ ব্যাপকভাবে পুথি পুস্তকাকারে সর্বত্র প্রচার করে যে, সেগুলো পরবর্তীতে বে-মালুম ইতিহাসে পরিণত হয়ে যায়।
এমনিভাবে আব্দুল্লাহ বিন সাবা নতুন পুরাতন মুনাফিকদের একত্রিত করে এবং মদীনার দু’জন স্বার্থান্বেষী খান্দানী মুসলমান যাদের সাহাবী রাযি. হওয়ার সৌভাগ্য নসীব হয়নি অর্থাৎ মুহাম্মদ বিন আবু বকর ও মুহাম্মদ বিন হুযাইফাকে ভিড়িয়ে উক্ত সন্ত্রাসী দল মিথ্যার বহর ছড়াতে ও মুসলমানদের শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করে।
এই উদ্দেশ্যে ইবনে সাবার দল পুথি-পুস্তকাকারে মিথ্যার বহর এমন ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল যে, পরবর্তী অনেক ইতিহাস লেখকগণ সেসব মিথ্যা গুজব সর্বস্ব পুথি পুস্তক দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েন। তারই কলঙ্কিত নজীর হচ্ছে মীর মোশারারফ হোসেনের বহু পুরাতন উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” যার আদ্যোপান্ত শুধু অলীক ও কাল্পনিক কাহিনী এবং সে সকল মুনাফিকদের প্রচারিত মিথ্যা তথ্য ও ঘটনাবলীর দ্বারা পরিপূর্ণ। উল্লেখ্য এই মীর মোশারারফ হোসেন শিয়া ছিলেন।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন