*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৫ ======*
*মসজিদের নামে ষড়যন্ত্র*
*দৃষ্টান্ত -৫ : মসজিদের নামে ষড়যন্ত্রের আখড়া নির্মাণঃ*
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে একদল মুনাফিক মসজিদে কুবা’র সন্নিকটে আর একটি মসজিদ বানিয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে আবেদন করলো যে, আমাদের দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তি যারা মসজিদে কুবায় যেতে পারে না তাদের জন্য একটি মসজিদ বানিয়েছি। অনুগ্রহপূর্বক আপনি নামায পড়িয়ে মসজিদটি বরকতময় করে দিয়ে ‘আসবেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-এখনতো আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। ফিরে এসে ইনশাআল্লাহ তোমাদের মসজিদে নামায পড়তে যাব।
এর দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক হতে ফিরার পথে “যী আওয়ান” নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে ওহীর মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মসজিদ নির্মাতাদের কু-উদ্দেশ্যে সম্পর্কে অবগত হয়ে দু’জন বিশিষ্ট সাহাবী রাযি. কে ডেকে জালিমদের তথাকথিত মসজিদটি জ্বালিয়ে গুড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন তারা দ্রুত গতিতে গিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিল। তার ভিতর অবস্থানকারী মুনাফিকরা সবাই এদিক সেদিক পালিয়ে জান বাঁচালো। কুরআনে কারীমে আল্লাহপাক মুনাফিকদের এই মসজিদকে মসজিদে জিরার বা ক্ষতিকর মসজিদ এবং আল্লাহ ও রাসূলের শত্রুদের ঘাটি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায় যে, মসজিদে জিরার বানিয়ে ছিল বার জন মুনাফিক তাদের নেতা আবু আমের একদিন তাদের বললো তোমরা মসজিদের নামে একটি ঘর তৈরী কর এবং তাতে সম্ভাব্য সব ধরনের অস্ত্র শস্ত্রের মজুত গড়ে তোল। আমি রোম সম্রাটের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তার বাহিনী নিয়ে ‘আসব এবং মদীনা হতে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের বিতাড়িত করব। তখন তার নির্দেশানুসারে তার অনুসারীরা মসজিদে জিরার নির্মাণ করে।
এই ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদী খৃষ্টান ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রসমূহের কতিপয় উদাহরণ।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[04/09, 9:41 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৬ ======*
*ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের লোমহর্ষক কাহিনীঃ*
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর ইসলাম এবং মুসলমানদের শক্তি ও শান্তি শৃঙ্খলার উৎস ছিল নিযামে খিলাফাত বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক খিলাফত ব্যবস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর সর্বপ্রথম খলীফা মনোনীত হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.।
তাঁর পর খলীফা নিযুক্ত হন হযরত উমর রাযি. এই দুই খলীফার কালজয়ী আদর্শ শাসনে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সফলতা যখন পরিস্ফুটিত ও সু-প্রমাণিত হয়ে প্রকাশ পায় তখনই ইয়াহুদী খৃষ্টান চক্র তাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট বানায় ‘নিযামে খিলাফাত’ কে। নতুন করে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির মূল শক্তি খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দুরভিসন্ধিতে ইসলামের তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত উসমান যিন্নুরাইন রাযি. এর খিলাফতকালের প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরী ২৫ সনে ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলমান দলভুক্ত হয় আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামে এক কুখ্যাত ইয়াহুদী মুনাফিক।
এসময় হযরত উসমান রাযি. এর নেতৃত্বে পারস্য, মিশর, সিরিয়া ও ইরাক ইত্যাদি অঞ্চল বিজিত হওয়ার পর লক্ষ লক্ষ লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার হিড়িক চলছিল। এর মধ্য আব্দুল্লাহ বিন সাবা ছাড়াও তার মত আরো অনেক সংখ্যক মুনাফিক ইসলামের মূলে আঘাত হানার মানসে বাহ্যতঃ ইসলাম গ্রহণ করে।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[05/09, 11:06 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৭ ======*
*ইবনে সাবার নানাবিধ অপকৌশল*
ধুরন্ধর ইবনে সাবা নতুন এই সকল মুনাফিক ও পুরাতন মুনাফিক যারা হরত আবু বকর ও হযরত উমর রাযি. এর খিলাফত কালে কখনো চোখ খোলার সাহস পেত না তাদের নিয়ে একটি গোপন দল গঠন করে। ইবনে সাবার এই দলকে বলা হয় খারিজী বা সাবায়ী দল। “নিযামে খিলাফাত” তথা মুসলমানদের সর্ব সম্মত একতাপূর্ণ সুদৃঢ় খিলাফত তথা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ধ্বংসের লক্ষ্য সামনে রেখে ইবনে সাবা সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা চালায় খলীফাসহ রাষ্ট্রীয় কার্যে নিয়োজিত বিভিন্ন গভর্নর সাহাবীগণের রাযি. নামে অন্যান্য লোকদের নিকট কুৎসা রটিয়ে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে।
সাহাবীগণের রাযি. দোষ চর্চা হারাম হওয়া সত্ত্বেও এই সাবায়ী চক্র হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে নিযামে খিলাফাত ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে সম্পূর্ণ বানোয়াটভাবে দোষ চর্চার পথকে বেছে নেয়। এর পূর্বে এমন কোন জামা’আত বা দলের আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটেনি যারা সাহাবী রাযি. না হয়েও সাহাবীগণের রাযি. দোষ চর্চার কল্পনা করেছে। অবশ্য এই বানোয়াট দোষ চর্চার পথ অবলম্বন করে তারা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। একজন সাহাবীর রাযি. নিকট মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন সাবা হযরত মুআবিয়া রাযি. সম্পর্কে মিথ্যা সমালোচনা করলে তিনি তাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন- তুই কে? কসম খোদার আমার ধারণা তুই কোন ইয়াহুদীর বাচ্চা। আরেকজন সাহাবীর রাযি. নিকট গিয়ে হযরত মুআবিয়ার রাযি. সম্পর্কে মিথ্যা সমালোচনা করলে তিনি তাকে পাকড়াও করে হযরত মুআবিয়ার রাযি. দরবারে উপস্থিত করেন। হযরত মুআবিয়া রাযি. সুমদয় ঘটনা খলীফা উসমান রাযি. এর নিকট জানিয়ে পাঠান। হযরত উসমান রাযি. এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যার বিবরণ বক্ষ্যমাণ আলোচনায় বিধৃত হবে। উল্লেখ্য ইবনে সাবা এ সময়ে সিরিয়ায় অবস্থান করছিল এবং সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন তখন হযরত মুআবিয়া রাযি.।
অতঃপর ইবনে সাবা সিরিয়া হতে বসরায় এসে এখানকার এক পুরাতন দাগী সন্ত্রাসী ও ডাকাতের বাড়ীতে বসে আরো কতিপয় লোককে নিয়ে এক গোপন বৈঠক করে। সেখানে সাংকেতিক ভাষায় একটি কার্য পরিচালনার প্রস্তাব করলে তা গৃহীত হয়। বসরার গভর্নর গোপন সূত্রে এই সংবাদ পেয়ে তাকে বসরা হতে বহিস্কার করলেন। ফলে সেখান থেকে সে কুফায় চলে যায়। কিছুদিন পর সেখান হতেও বহিস্কৃত হয়ে মিশরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আর এরই মধ্যে সে বসরা ও কুফায় তার অনুসারীদের সমন্বয়ে গোপন দলের একটি স্থানীয় কমিটি তথা ষড়যন্ত্রকারী দল গঠন করে দিয়ে যায়।
মিশরে গিয়ে সে তার কেন্দ্রীয় দফতর ও প্রধান ঘাটি স্থাপন করে এবং বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষতঃ বসরা ও কুফায় অবস্থানরত তার সুসংগঠিত অনুসারীদের সঙ্গে চিঠি-পত্রের মাধ্যমে সর্বদা যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। তাদের মাধ্যমে সে মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে নানা রকম মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা আরম্ভ করে। তার স্বজনপ্রীতি বংশের লোকদের চাকুরীর ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অধিক হারে তাদের মাঝে বণ্টনের কল্পিত অভিযোগ উত্থাপন করে। অধিকন্তু তাকে (হযরত উসমান রাযি. আরো বেশী দোষী সাব্যস্ত করার জন্য আব্দুল্লাহ বিন সাবার সহকর্মীরা আরো অনেক গভর্নর সাহাবীর রাযি. বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাতে থাকে। এরূপ ষড়যন্ত্রকারী খারিজীরা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা -অতিরঞ্জনকেই বড় অস্ত্ররূপে ব্যবহার করে। এমন কি তারা এসব কল্পিত মিথ্যা অপবাদগুলোকে এরূপ ব্যাপকভাবে পুথি পুস্তকাকারে সর্বত্র প্রচার করে যে, সেগুলো পরবর্তীতে বে-মালুম ইতিহাসে পরিণত হয়ে যায়।
এমনিভাবে আব্দুল্লাহ বিন সাবা নতুন পুরাতন মুনাফিকদের একত্রিত করে এবং মদীনার দু’জন স্বার্থান্বেষী খান্দানী মুসলমান যাদের সাহাবী রাযি. হওয়ার সৌভাগ্য নসীব হয়নি অর্থাৎ মুহাম্মদ বিন আবু বকর ও মুহাম্মদ বিন হুযাইফাকে ভিড়িয়ে উক্ত সন্ত্রাসী দল মিথ্যার বহর ছড়াতে ও মুসলমানদের শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করার অপচেষ্টা করে।
এই উদ্দেশ্যে ইবনে সাবার দল পুথি-পুস্তকাকারে মিথ্যার বহর এমন ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল যে, পরবর্তী অনেক ইতিহাস লেখকগণ সেসব মিথ্যা গুজব সর্বস্ব পুথি পুস্তক দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েন। তারই কলঙ্কিত নজীর হচ্ছে মীর মোশারারফ হোসেনের বহু পুরাতন উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” যার আদ্যোপান্ত শুধু অলীক ও কাল্পনিক কাহিনী এবং সে সকল মুনাফিকদের প্রচারিত মিথ্যা তথ্য ও ঘটনাবলীর দ্বারা পরিপূর্ণ। উল্লেখ্য এই মীর মোশারারফ হোসেন শিয়া ছিলেন।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[06/09, 11:39 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৮ ======*
*সাবায়ীচক্রের অপপ্রচারণা*
*সাবায়ীচক্রের অপপ্রচারণায় প্রভাবিত কতিপয় মুসলিম ঐতিহাসিকের বিষক্রিয়াঃ*
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, স্বীয় জাতির সঠিক ইতিহাস বিস্মৃত মুসলিম জাতির অনেকেই আজ মীর মোশারারফ হোসেনদের ন্যায় ইতিহাস লেখক, যারা সত্য মিথ্যা যাচাই না করে দলীল প্রমাণের কোন তোয়াক্কা না করে সবরকম ঐতিহাসিক বিবরণ সংগ্রহ করাতেই অধিক আনন্দ বোধ করেন এবং সঠিক ইতিহাস লেখার পরিবর্তে ইতিহাসের নামে গল্প-কাহিনী লেখার স্বাদ পেতে চান, বা স্বীয় বক্র স্বভাব ও মানসিক কু-চাহিদা পূরণ করে আত্মতৃপ্তি অনুভব করতে চান, আর সঙ্গে সঙ্গে সস্তা দরে ঐতিহাসিক বলে খ্যাত হতে চান। তাদের এ সকল আত্মতৃপ্তিমূলক লেখা তথাকথিত ইতিহাস পড়ে আজ মুসলিম মিল্লাতের বহু সরল প্রাণ মুসলমান হযরত উসমান রাযি. ও হযরত মুআবিয়া রাযি. সহ বিশিষ্ট ও অন্যতম কয়েকজন সাহাবীর রাযি. ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। মুসলিম উম্মাহর মাঝে এ ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন কিছু লোক তৈরি হওয়াও সাবায়ী খারেজীদের ইতিহাস বিকৃতির এক বিরাট সফলতা। এই মানসিকতায় অতি বেশী প্রভাবান্বিত হয়ে জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ খিলাফত ধ্বংসকারীদের ইতিহাস লিখতে গিয়ে সাবায়ী চক্রের মিথ্যা ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বেশী দোষী সাব্যস্ত করেছে, তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাযি. ও হযরত মুআবিয়া রাযি. কে।
তার এই লেখনীর বদৌলতে আজ মুসলিম উম্মাহর বহুলোক সাহাবীদের থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, আবার অনেকে সাহাবী বিদ্বেষীও হয়ে পড়েছে।
আরো অধিক পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, আধুনিক শিক্ষা অর্জনের নিমিত্তে যারা স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে গমন করেন, দীন ইসলাম ও তার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা না থাকার দরুন তারা আরো বেশী বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কারণ, তাদের পাঠ্যসূচীতে ইসলামের ইতিহাস নামে যে সব বই পাঠ্য রয়েছে, তা ব্রিটিশ উপনিবেশিক কর্তৃক প্রণীত সিলেবাসেরই অংশ। আর ব্রিটিশরা যে কখনই ইসলাম ও মুসলমানদের মঙ্গল চায়নি তা বলাই বাহুল্য। তাই তাদের প্রণীত সিলেবাসে সঠিক ঐতিহ্যপূর্ণ ইসলামী ইতিহাসের পরিবর্তে ভ্রান্তিকর ইতিহাস স্থান পাওয়াই স্বাভাবিক। তারা ইসলামী ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ঐ সাবায়ী ও শিয়া চক্র কর্তৃক রচিত ইসলামের উপর কুঠারাঘাত করা গর্হিত মিথ্যা ইতিহাসের উপর নির্ভর করেছে। ঐ সব ইতিহাস অধ্যয়ন করার দরুন আজ তাবলীগ জামাআত বা উলামায়ে কিরামের সঙ্গে সম্পর্কহীন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ শিক্ষিত বন্ধুরা হযরত উসমান রাযি. ও হযরত মুআবিয়া রাযি. সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে (নাউযুবিল্লাহ্)। অথচ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় বলে গিয়েছেন- “আল্লাহকে ভয় কর- আল্লাহকে ভয় কর- আমার সাহাবীদের ব্যাপারে। আমার পরে তোমরা আমার সাহাবীদেরকে সমালোচনার পাত্র বানিওনা।” এ জন্য আজ জরুরী হয়ে পড়েছে- উপনিবেশবাদী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে ইসলাম সম্মত যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। এ ব্যাপারে মুসলমানদের সোচ্চার হওয়া সময়ের দাবী ও কর্তব্য।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[07/09, 8:11 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -৯ ======*
*ইবনে সাবার লক্ষ্যে*
হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ বিন সাবার দলের এসব অপপ্রচারের উদ্দেশ্য ছিল, জনগণকে খলীফার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং তাদের দিয়ে বিদ্রোহ করিয়ে মুসলামানদের সুশৃঙ্খল ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে নিযামে খিলাফাত (খিলাফত ব্যবস্থা) কে ধ্বংস করা। এজন্য তারা উল্লেখিত পন্থায় অপপ্রচারের পাশাপাশি মদীনায় অবস্থানরত বিশিষ্ট সাহাবীগণের রাযি. নামে হযরত উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান সম্বলিত জাল প্রচারপত্র বিলি করতে থাকে। এভাবে তারা বেশ কিছুসংখ্যক জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই সাথে হিজরী ৩৪ সনে যখন এই মুসলিম নামধারী মুনাফিক সন্ত্রাসবাদী ঘাতক দলটি পূর্ণ জৈবিক উন্মাদনার সাথে আত্মপ্রকাশ করেছিল তখন তারা তাদের ইশতিহার ও ঘোষণা পত্রে আরেকটি বিষয় জুড়ে দিয়েছিল। তা ছিল এই যে এরূপ এক হাজার নবী এমন অতিবাহিত হয়েছেন যাঁদের প্রত্যেকে নিজ নিজ ওয়াসী বা খলীফা নিযুক্ত করে গিয়েছেন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব শেষ নবী। আলী রাযি. সর্বশেষ ওয়াসী। অতএব, আলী রাযি. উসমান রাযি. অপেক্ষা খিলাফতের অধিক হকদার, উসমান অন্যায়ভাবে খিলাফত দখল করে রেখেছে।
এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা উল্লেখপূর্বক জনসাধারণের প্রতি হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানায়। এতেও কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ইবনে সাবার অনুসারী হয় এবং তা থেকেই পরবর্তীতে হযরত আলী রাযি. কেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একমাত্র ‘খলীফা বরহক’ বলে বিশ্বাসী শিয়া দল সৃষ্টি হয়।
মুনাফিক দল বস্তুতঃ হযরত আলীর রাযি. প্রতিও অনুরাগী ছিল না। তারা তাঁর নাম কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করত। মুসলমানদের খিলাফত ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে হলে প্রথমে বর্তমান খলীফার বিরুদ্ধে আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। আর সুপ্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়তে হলে- তার মত যোগ্য ও আকর্ষণীয় ব্যক্তির নাম নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাই তারা এক্ষেত্রে হযরত আলীর রাযি. নাম সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে। উদ্দেশ্য শুধু স্বার্থ উদ্ধার । অথচ হযরত আবু বকর রাযি. ও উসমান রাযি. এর খলীফা মনোনীত হওয়ার সময় কেউই এরূপ উদ্ভট দাবী করেনি যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাযি. কে খলীফা নির্ধারিত করে গেছেন। বস্তুতঃ হযরত আলীও রাযি. তাদের খিলাফত সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে নিয়েছেন। উক্ত অপপ্রচার বাস্তবে ছিল খারেজীদের আন্দোলনের একটি কৌশল মাত্র।
এভাবে ইবনে সাবা তার দল-বল নিয়ে খলীফার বিরুদ্ধে ঘোলাটে বিশৃঙ্খলা, ও গর্হিত পরিস্থিতি সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী দল গঠন করতঃ মদীনা আক্রমণে সক্ষম হয়। (মদীনা আক্রমণের ঘটনার বিবরণ অচিরেই ‘আসছে) ইবনে সাবার দল সংখ্যায় অধিক না থাকলেও তারা সকলেই ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সুসংহত এবং তারা সকলেই ছিল সন্ত্রাসী ও নিষিদ্ধ কার্যে বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত ও উদ্দেশ্য পানে পৌছতে অত্যন্ত তৎপর। তাই তাদের পক্ষে এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং এরূপ গোপন শক্তিশালী সন্ত্রাসী দল গঠন করা সম্ভব হয়েছিল।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[08/09, 9:54 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১০ ======*
*ইবনে সাবার ষড়যন্ত্রের প্রথম পর্ব*
আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ করেনঃ
*لَتَجِدَنَّ اَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَۃً لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوا الْیَهُوْدَ وَالَّذِیْنَ اَشْرَكُوْا ۚ وَلَتَجِدَنَّ اَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّۃً لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوا الَّذِیْنَ قَالُوْۤا اِنَّا نَصٰرٰی ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّ مِنْهُمْ قِسِّیْسِیْنَ وَرُهْبَانًا وَّاَنَّهُمْ لَا یَسْتَكْبِرُوْنَ*
(হে নবী) আপনি মুসলমানদের জন্য সব মানুষের চেয়ে অধিক শত্রু ইয়াহুদী ও মুশরিক (পৌত্তলিক) দের পাবেন এবং আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন যারা নিজেদেরকে খৃষ্টান বলে, এর কারণ তাদের মধ্যে আলেম রয়েছে দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহংকার করে না। (সূরাহ মায়িদাহঃ ৮২)
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, খিলাফত ধ্বংসের লক্ষ্যে হযরত উসমানের রাযি. খিলাফত কালে আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামক এক ইয়াহুদী মুনাফিক মুসলিম বেশে মুসলমানদের মাঝে অনুপ্রবেশ করে। সে ছিল অত্যন্ত চতুর ও ধূর্ত। সে ইয়ামান হতে মদীনাতে এসে মুসলমানদের সাথে মিশে যায়। এখানে কিছুদিন অবস্থান করে সে মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগতি লাভ করে। অতঃপর মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি গোপন দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে। এ দলের প্রচারের ভিত্তি রাখা হয় এমন কতগুলো ধারার উপর যদ্দারা বাহ্যতঃ রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি অধিক প্রেম-মহব্বত ও আহলে বাইত তথা রাসুলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বংশধরের প্রতি অত্যাধিক অনুরাগ প্রদর্শিত হয়। যেমনঃ
*১.* আশ্চর্য, মুসলমানরা হযরত ঈসার আ. পুনরায় পৃথিবীতে আগমনের কথা বলে। কিন্তু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুনরাগমনের কথা মানে না।
*২.* সকল পয়গাম্বরের একজন ওয়াসী বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বশীল থাকেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আলী রাযি. যেহেতু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী অতএব, আলী রাযি. শেষ ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
*৩.* বড় অন্যায়ের কথা মুসলমানরা নিজেদের নবীর ওসীয়তের কোন পরওয়া করলো না এবং তার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও খিলাফত অন্যদের [আবু বকর উমর ও উসমানের রাযি.] হাতে অর্পণ করে দিল। অতএব তাদেরকে অপসারণ করে ন্যায্য ব্যক্তিকেই [হযরত আলী রাযি.] এ অধিকার প্রদান করা জরুরী।
এ গোপন দলের শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য ইবনে সাবা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রদেশসমূহের কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে দ্রুত সফর করে। উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে তাদেরকে কাজের কৌশল জানিয়ে দিল এবং নিজে মিসরে এসে অবস্থান গ্রহণ করে মিসরকেই সে তার কেন্দ্র রূপে সাব্যস্ত করলো।
*কাজের জন্য যে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হলো তা ছিল নিম্নরূপ:*
*ক)* দৃশ্যতঃ মুত্তাকী ও পরহেযগার হয়ে সাধারণ লোকদের উপর নিজের প্রভাব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
*খ)* সমকালীন খলিফার (হযরত উসমান রাযি. বিরুদ্ধে অপবাদ রটাতে হবে এবং অভিযোগ আরোপ করতে হবে।
*গ)* বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরগণকে অস্থির করে তুলতে হবে। তাদেরকে অযোগ্য, অসাধু, দুর্নীতি পরায়ণ ও জালিম সাব্যস্ত করে প্রদশেসমূহের কলহ ছড়াতে হবে। সাজানো মিথ্যা দোষসমূহ রটিয়ে পত্রাদি প্রেরণ করতে হবে।
*ঘ)* এক শহর থেকে অন্য শহরে গভর্নরগণের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত রূপে সাজানো মিথ্যা দোষ সমূহ রটিয়ে পত্রাদি প্রেরণ করতে হবে। মদীনা মুনাওয়ারা থেকে হযরত আলী, হযরত ত্বালহা, হযরত যুবাইর রাযি. প্রমুখ নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কিরামের পক্ষ খেকে গভর্নরদের বিরুদ্ধে জাল চিঠি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে হবে, এ সকল পত্রে আবদুল্লাহ বিন সাবার এ তৎপরতার সাথে উল্লেখিত সাহাবাগণের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ করতে হবে।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[09/09, 9:53 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১১ ======*
*ইবনে সাবা কর্তৃক মদীনা আক্রমণ*
হজ্জের মৌসুম যখন নিকটবর্তী এবং সকল এলাকার মুসলমানগণ বিশেষতঃ মদীনাবাসীগণ যখন মক্কা সফরে ব্যস্ত, সুযোগবুঝে তখনই নিঃশব্দে ইবনে সাবার সন্ত্রাসী দল মিশর বসরা ও কুফা তিন দিক হতে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা করল। যার দরুন পথিমধ্যে তারা কোথাও কোন বাধার সম্মুখীন হয়নি। মিশরীয় দলটির সাথে স্বয়ং ইবনে সাবাও ছিল। তারা মদীনার নিকটবর্তী স্থানে শিবির স্থাপন করতঃ মদীনাবাসীদের সমর্থন চাইলে হযরত আলী রাযি., তালহা রাযি., ও যুবাইর রাযি. প্রমুখ সাহাবীগণ তাদের তিরষ্কার করে ফিরিয়ে দেন এবং খারেজীদের সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই সন্ত্রাসী দলকে আল্লাহ তা’আলার লা’নতপ্রাপ্ত ও অভিশপ্ত দল বলে আখ্যায়িত করেন। এদিকে সিরিয়া, কুফা ও বসরা হতে খলীফার সাহায্যার্থে মুসলিম বাহিনী রওয়ানা হওয়ার সংবাদ পেয়ে সন্ত্রাসীরা উক্ত বাহিনী সেখানে এসে পৌছার পূর্বেই কাজ সমাধা করার মানসে যিলক্বদ মাসের শেষ দিকে হঠাৎ মদীনা আক্রমণ করে বসে।
*হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত*
মদীনার নিয়ন্ত্রণ দখল করে তারা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বাস ভবন অবরোধ করে। মদীনার অধিকাংশ মুসলমানই তখন হজ্জে গিয়েছিলেন। তাই মদীনা এক প্রকার জনশূন্যই ছিল। সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিল। আমাদের ব্যাপারে যারা হস্তক্ষেপ না করবে শুধু তারাই জানের নিরাপত্তা পাবে। তাদের মোকাবিলায় তখন উপস্থিত মদীনাবাসীদের শক্তি ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। তাই তারা নিশ্চুপ থাকলেন।
সন্ত্রাসীরা খলীফার বাসভবন অবরোধ করে খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দেয়। হযরত উসমান রাযি. ভবনের ছাদে আরোহণ করে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে তাদের দাবী ও কার্যাবলীর অযৌক্তিকতা বুঝাতে চেষ্টা করেন। তবুও তারা খলীফার পদত্যাগের দাবীতেই অটল থাকে। কিন্তু হযরত উসমান রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার প্রতি আরোপিত সুস্পষ্ট ও কড়া নির্দেশের কারণে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেন।
*হযরত উসমান রাযি. এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ভবিষ্যদ্বানীঃ*
হযরত আয়িশা রাযি. বর্ণনা করেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক মারফত হযরত উসমান রাযি. কে ডেকে আনলেন। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ করে বসে স্বীয় হস্তদ্বয় তার স্কন্ধে রেখে (অতিশয় গুরুত্ব আরোপ করে) বললেন হে উসমান। অচিরেই আল্লাহ তা’আলা তোমাকে একটি জামা পরাবেন। যদি মুনাফিকরা তোমার নিকট তা খুলে ফেলার দাবি জানায় তবে তুমি কিন্তু তা খুলে ফেলো না। যতক্ষণ না (শহীদ হয়ে) আমার সঙ্গে মিলিত হও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা তিন বার বললেন।
হযরত উসমান রাযি. এর মাধ্যমে নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ফলে জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে কুফা, বসরা ও মিশর হতে আগত সন্ত্রাসী দলের ১৩ জন নেতা, হযরত উসমানের রাযি. গৃহের সামনের দরজায় হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাযি. সহ যুবক সাহাবীদের রাযি. পাহারা থাকায় তাঁর গৃহের পিছনের দেয়াল টপকে ঘরে প্রবেশ করে। হযরত উসমান রাযি. তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যান। নামায শেষ করে তিনি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত আরম্ভ করেন। এ অবস্থাতে সন্ত্রাসীরা তার উপর আক্রমণ চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে আহত করে ফেলে। একজন সন্ত্রাসী পদাঘাত করে উসমান রাযি. এর সম্মুখ হতে কুরআন শরীফ সরিয়ে দিতে চাইলেও তা ঘূর্ণয়মানভাবে তার সম্মুখেই পড়ে। অতঃপর মিশরীয় দলের সন্ত্রাসী নেতা সুদান ইবনে হুমরানের তরবারীর আঘাতে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই তনয়া হযরত উম্মে কুলসুম রাযি. ও হযরত রুক্বাইয়া রাযি. এর স্বামী খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান রাযি. শাহাদাত বরণ করেন। তাকে হত্যা করার পর সন্ত্রাসীরা তাঁর গৃহের সব কিছুই লুন্ঠন করে নেয়।
হযরত উসমান রাযি. এর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইবনে সাবা গং নিযামে খিলাফত ধ্বংসে তাদের প্রাথমিক সাফল্য লাভ করে। হিজরী ২৫ সনে ইসলামী হুকুমত ধ্বংসে ইবনে সাবা যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল দীর্ঘ দশ বছর চেষ্টার পর হিজরী ৩৫ সনে খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তার প্রথম পর্ব শেষ হয়। অতঃপর শুরু হয় ভেঙ্গে পড়া খিলাফত ব্যবস্থাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত ও সংহত না হতে দেয়ার ষড়যন্ত্র।
ইবনে সাবারা দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী দল গঠন করলেও খলীফার হত্যাকাণ্ডে তার এ সফলতা ছিল একেবারেই কল্পনাতীত। কারণ তার দল এত বড় ও এত শক্তিশালী ছিল না যে, এত জঘন্য কাজ করতে পারবে বলে কল্পনা করা যায়। অন্যদিকে হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে জনগণের কোন রকম বিদ্রোহ ছিল না যার কারণে পূর্ব থেকে এ ধরনের কোন আশংকা বোধ করা হয়নি। খারেজীরা শুধু গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অকস্মাৎ এই কুকীর্তিতে সফল হয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা সম্পূর্ণ অতর্কিতে কাজ করে তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে সফলকাম হতে পেরেছিল। এজন্য হযরত উসমান রাযি. কে সঠিক সময়ে খারেজী তথা ইবনে সাবার দলকে কঠোর হস্তে দমন করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করারও কোন সুযোগ নেই।
তাছাড়া এ ঘটনা ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন। বস্তুতঃ তার মুখ হতে নিঃসৃত একটি বাক্যও মিথ্যা প্রমাণিত হতে পারে না।
*মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণীঃ*
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির রাযি. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিৎনা তথা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। তখন আবু বকর রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি সেই ফিৎনার যুগ পাবো? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- না। হযরত উমর রাযি. ও অনুরূপ প্রশ্ন করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না সূচক উত্তর দেন। অতঃপর হযরত উসমান রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি পাবো ? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যস্থল তো তুমিই হবে। (মুসনাদে বাযযার)
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশ’আরী রাযি. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্জন পরিবেশের উদ্দেশ্যে একটি বাগানের ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন এবং আমি বাগানের প্রবেশ পথে প্রহরী হয়ে থাকলাম। তখন হযরত আবু বরক রাযি. উপস্থিত হয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর। অতঃপর হযরত উমর রাযি. এসে অনুমতি প্রার্থনা করলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কেও বললেন, অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর। অতঃপর হযরত উসমান রাযি. ও এসে অনুমতি চাইলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বললেন- অনুমতি দাও এবং তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান কর বালা মুসীবত ও আপদ বিপদের সাথে। তখন হযরত উসমান রাযি. বাগানে প্রবেশ করলেন। তার মুখে ছিল “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তা’লার এবং আল্লাহ্ তা’লার নিকটই সাহায্য কামনা করি। হে আল্লাহ্ (সেই বিপদে আমাকে) সবর ও ধৈর্য ধারণের শক্তি দাও। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বর্ণনা করেন, একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিৎনা তথা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন এবং বললেন- সেই ফিৎনার সময় ঐ মস্তকাবৃত লোকটি অন্যায়ভাবে মজলুম হয়ে নিহত হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন আমি তৎক্ষণাৎ সেই মস্তকাবৃত লোকটির প্রতি তাকিয়ে দেখি তিনি হযরত উসমান রাযি.।
এসকল হাদীসে হযরত উসমান রাযি. এর খিলাফত কালে খারিজী মুনাফিকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সেই ফিৎনায় হযরত উসমান রাযি. এর শহীদ হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী অতি স্পষ্ট।
শাহাদাতের পূর্বে হযরত উসমানের রাযি. স্বপ্নঃ তাছাড়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হতে আরও বর্ণিত আছে, যেদিন খলীফা হযরত উসমান রাযি. শহীদ হয়েছিলেন, সেদিন সকালে তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে, অদ্য আমি হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বপ্ন দেখেছি। তিনি আমাকে বলেছেন হে উসমান। আজ তুমি আমার নিকট ইফতার করবে। সে মতে তিনি ঐ দিন রোযা রেখেছিলেন এবং রোযা অবস্থাতেই দিনের শেষে শহীদ হয়েছিলেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
পূর্বের দিনও একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাও তিনি বর্ণনা করেছেন যে, গতকাল রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি যেন হযরত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিক উপস্থিত হয়েছি। তাঁর নিক আবু বকর ও উমর রাযি. বসা ছিলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন তুমি চলে যাও। আগামী কাল নিশ্চয়ই তুমি আমাদের নিকট এসে ইফতার করবে। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযি. বর্ণনা করেছেন, খলীফা হযরত উসমান রাযি. অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় একবার আমি তার নিকট ‘আসলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন, হে ভাই! আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এই দরওয়াজার নিকট দেখেছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে উসমান ! তোমাকে কি শত্রু দল অবরোধ করেছে ? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন তারা কি তোমাকে তৃষ্ণার্ত রেখেছে ? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এক বালতি পানি দান করেন। আমি প্রাণ ভরে তা পান করলাম। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার সাহায্য করতে পারি। আর যদি ইচ্ছা কর তবে আমাদের নিকট এসে ইফতার করতে পার। উসমান রাযি. বললেন আমি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে ইফতার করাকেই গ্রহণ করেছি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[10/09, 6:14 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১২ ======*
*হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে কয়েকটি ভিত্তিহীন অভিযোগঃ*
হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে ইবনে সাবা কর্তৃক আরোপিত স্বজন-প্রীতি তথা স্বীয় বংশীয় লোকদেরকে রাষ্ট্রীয় তহবিল হতে অধিক সম্পদ প্রদান ও সরকারী চাকুরীতে অধিক হারে তাদের নিয়োগ দানের অপবাদ দেয়া হয়েছিল। যার উপর ভিত্তি করে আজ ইসলামী খিলাফতের বিকৃত ইতিহাস রচিত হয়েছে। এগুলো যে কেবলমাত্র ইবনে সাবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তার সাজানো, মনগড়া ও মিথ্যা অভিযোগ ছিল, সে বিষয়টি পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সেই সাবায়ী দলের গর্হিত ইতিহাসের ভিত্তিতেই বর্তমানে জনসাধারণের মাঝে প্রচলিত ইসলামী খিলাফতের বিকৃত ইতিহাস রচিত তাই নতুন করে তার অসারতা প্রমাণ করা প্রয়োজন।
স্বীয় বংশীয় লোকদের অধিক সম্পদ দান সংক্রান্ত অভিযোগের উত্তর স্বয়ং হযরত উসমান রাযি.-এর মুখেই শুনুন এবং বাস্তবতার প্রতিও লক্ষ্য রাখুন।
একবার ইবনে সাবা কুফা হতে তার কিছু অনুচরকে নেককার মানুষের বেশে মদীনা প্রেরণ করলো যেন তারা জনসমক্ষে হযরত উসমান রাযি. কে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ও তাকে হেস্তনেস্ত করে এবং চূড়ান্তরূপে অভিযুক্ত করতে সক্ষম হয়।
হযরত উসমান রাযি. গোপনে তাদের উদ্দেশ্য ও মদীনা আগমনের সংবাদ পেয়ে তাদেরকে মসজিদে ডাকালেন। ইতিমধ্যেই আজান দেয়া হল। তারা খলীফা হযরত উসমানের একেবারে সম্মুখে মিম্বরের নিকটবর্তী স্থানে বসলে উপস্থিত সাহাবীগণ রাযি. খলীফাকে ঘিরে বসলেন। খলীফা উসমান রাযি. উপস্থিত জনতাকে ইবনে সাবার অনুচরদের উদ্দেশ্যে ও পরিকল্পনা অবগত করিয়ে বিস্তারিত ভাষণ দেন। জনগণ তখন সেই কুচক্রীদের মৃত্যুদণ্ড দাবী করে। হযরত উসমান রাযি. উত্তরে বলেন আমি তাদের ক্ষমা করে দিব এবং আমার সৎ প্রচেষ্টায় তাদের বুঝাতে চেষ্টা করবো। আমি কাউকে প্রাণদণ্ড দিব না যাবৎ না সে প্রাণদণ্ডের অপরাধ করে অথবা প্রকাশ্যে কুকুরী করে। অতঃপর তিনি স্বজন-প্রীতির কথিত অভিযোগের উত্তরে বলেনঃ তারা অভিযোগ করে থাকে আমি আমার আপন জনদের অধিক ভালবাসি এবং তাদের অধিক দিয়ে থাকি। এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে আপনজনের সঙ্গে স্বাভাবিক ভালবাসা আছে বটে কিন্তু কোন অন্যায় ব্যাপারে তাদের পক্ষ সমর্থন করি না। বরং তাদের প্রাপ্য হক আমি তাদের নিকট পৌঁছে দেই মাত্র।
আর তাদের যে অধিক দিয়ে থাকি, তা আমার ব্যক্তিগত ও নিজস্ব সম্পদ হতে দিয়ে থাকি। মুসলমানদের সম্পদ তথা সরকারী ধন ভাণ্ডারকে আমি আমার জন্য এবং আমার আত্মীয় বা নিজস্ব কোন ব্যক্তির জন্য হালাল মনে করি না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে এবং আবু বকর ও উমর রাযি. এর আমলেও আমি আমার ব্যক্তিগত সম্পদ হতে ভাল ভাল ও বড় বড় দান করতাম। অথচ ঐ সময় তো বয়স হিসেবে পার্থিব ধন-সম্পদের প্রতি অধিক লোভ লালসার সময় ছিল। আর যখন আপন পরিজনের মধ্যে আমার বয়স সর্বাধিক। আমার বয়স শেষ সীমায় পৌঁছিয়েছে (৮০ হতে ৯০) এমতাবস্থায় আমি আমার ব্যক্তিগত বা নিজস্ব যা কিছু ছিল আপনজনদের দিয়ে দিয়েছি তাতে বেঈমানরা নানা রকম কথা বলে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন আমি যখন খলীফা নির্বাচিত হয়েছিলাম তখন আমি আরবের সর্বাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলাম। আরবের সবচেয়ে বেশী উট-বকরী আমার ছিল। বর্তমান মুহূর্তে আমার হজ্জের জন্য রক্ষিত দুটি উট ছাড়া অতিরিক্ত একটি উট বা একটি বকরীও আমার নেই। আমার সব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছি। হযরত উসমান রাযি. স্বীয় এই উক্তির উপর মদীনাবাসী জনগণের সাক্ষ্য চাইলেন- এটাই কি প্রকৃত অবস্থা নয়? তারা সকলে একবাক্যে আল্লাহকে হাজির নাযির উল্লেখ করতঃ বললেন, হ্যাঁ এটা বাস্তব সত্য।
হযরত উসমান রাযি. এর এই বক্তৃতার বর্ণনাকারী এ তথ্যও প্রকাশ করেছেন যে, হযরত উসমান রাযি. তার সমুদয় সম্পত্তি স্বীয় বংশের লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছিলেন। আর এক্ষেত্রে তিনি আপন পুত্র-কন্যাকে দানকৃত লোকদের সমশ্রেণীর করে দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ ইসলামের বিধান অনুযায়ী নিজস্ব মাল দেয়ার সময় স্বীয় বংশ ও আত্মীয় স্বজনই অগ্রগণ্য-এটাই সুন্নত তরীকা।
তাছাড়া হযরত উসমান রাযি. ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের পূর্ব হতেই আরবের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তার সিংহভাগ সম্পদই মুসলমানদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। যে কোন ধরনের নেক কাজে সম্পদ ব্যয় করায় তিনি থাকতেন সর্বাগ্রে। এ জন্য তাকে বলা হতো উসমানে গনী বা ধনী উসমান।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[11/09, 8:55 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৩ ======*
*উচ্চপদে আত্মীয়দের নিয়োগদান প্রসঙ্গে*
সরকারী চাকুরীতে স্বীয় আত্মীয় ও বংশীয় লোকদের অধিক হারে উচ্চপদ তথা গভর্ণরী প্রদানের যে অভিযোগ হযরত উসমান রাযি. এর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল তার অসারতা প্রমাণে তার খিলাফত কালের ৪৭ জন গভর্ণরের নামের তালিকার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে অতিসহজেই উত্তর পাওয়া যায় যে, উক্ত ৪৭ জন গভর্ণরের মধ্যে মাত্র ৫ জন হযরত উসমান রাযি. এর সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। তন্মধ্যে তিনজন ছিলেন তার নিজ বংশ তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোত্র কুরাইশের শাখা উমাইয়া গোত্রের। কিন্তু এই তিন জনের মধ্যে দুই জনই ছিলেন হযরত উমর রাযি. কর্তৃক নিয়োজিত। উক্ত পাঁচ জনের মধ্যে অপর দুই জন হযরত উসমান রাযি. এর আত্মীয় ছিলেন কিন্তু আত্মীয়তা অভিযোগের কারণ হতে পারে না। বরং হযরত উসমান রাযি. কে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করার জন্যই কেবল এ ধরনের কথা উত্থাপন করা হয়েছিল। নতুবা শুধু আত্মীয়তার খাতিরে হযরত উসমান রাযি. কাউকে গভর্নর নিয়োগ করেননি। যাকেই গভর্নর নিয়োগ করেছেন যোগ্যতাও পরামর্শের ভিত্তিতেই করেছেন। ৪৭ জন গভর্নরের ভিতরে ২/৪ জন যদি তার নিজ গোত্রের হয় এবং হযরত উসমানের রাযি. বিরাট গোত্রের মধ্যে যোগ্যতা সম্পন্ন লোক থাকাটাও স্বাভাবিক; তাহলে তাদেরকে দায়িত্বে বসালে তাতে এমন কি অপরাধ হতে পার ? বরং যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য দায়িত্বে না বসানোই অপরাধ এবং জনসাধারণের উপর জুলুম করার শামিল। কারণ বেশী যোগ্য লোক থাকতে যদি তার চেয়ে কম যোগ্য লোক দায়িত্বে বসানো হয় তাহলে নিশ্চয় জনসাধারণ ধর্মীয় সুযোগ সুবিধা ও ন্যায় বিচার কম পাবে যা অত্যন্ত স্পষ্ট। সুতরাং হযরত উসমান রাযি. এর উপর স্বজন-প্রীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা শুধু বক্র দিল ও ট্যারা চোখ সম্পন্ন লোকদের স্বার্থবাদী অপতৎপরতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
*ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় পর্ব:*
সাবায়ীদের চাপের মুখে হযরত আলীর রাযি. খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ সাবায়ী ষড়যন্ত্রের এ পর্বকে মুসলমানদের পরস্পরে চিরস্থায়ী অনৈক্য সৃষ্টির অধ্যায় বলা চলেঃ
আব্দুল্লাহ বিন সাবার মুনাফিক দল কর্তৃক খলীফা হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাতের পর মুসলিম জাহানের প্রথম করণীয় ছিল সর্বসম্মতিক্রমে একজন খলীফা মনোনীত করে ইসলামী খিলাফতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা এবং মুসলমানদের ঐক্যকে সুসংহত রাখা ও শরয়ী বিধান মুতাবিক হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী ও বিদ্রোহীদের বিচার করা। কিন্তু সেসব যদি বাস্তবায়িত হয়ে যায় তাহলে আব্দুল্লাহ বিন সাবা ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের যে নীল নকশা প্রণয়ন করেছিল শুধু যে তা বিধ্বংস হয়ে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হবে তা ই নয়, বরং তখন তার ও তার দলের ভয়াবহ পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে। তাই হযরত উসমান রাযি. কে হত্যা করার পর তার সর্বপ্রথম তৎপরতা ছিল ইসলামের উন্নতির চালিকা শক্তি উম্মতের সর্বসম্মত খিলাফত ব্যবস্থা যেন আর দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠা না হতে পারে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সাবায়ী দলের লোকেরা মুসলিম উম্মাহর সর্ব সম্মতিক্রমে একজনকে খলীফা বানিয়ে তার নেতৃত্বে সকলের একতাবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টাকে ঠেকিয়ে রাখার লক্ষ্যে তারা হজ্জের মওসুমে অধিকাংশ সাহাবী রাযি. ও শান্তিপ্রিয় জনগণশূণ্য দারুল খিলাফত মদীনায় যে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হযরত উসমান রাযি. কে শহীদ করেছিল সেই পরিস্থিতিতে নিজেরাই গোটা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে হযরত আলী রাযি. কে খলীফা পদপ্রার্থী হতে বাধ্য করে।
হযরত আলী রাযি. বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ত্বালহা রাযি. ও যুবাইর রাযি. এর নিকট খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের আবেদন জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে সাহাবা শূন্য মদীনায় যে স্বল্প সংখ্যক বিশিষ্ট সাহাবা রাযি. বিদ্যমান ছিলেন তাদের পরামর্শে ও বিধ্বস্ত খিলাফত পুনরুদ্ধারের শেষ আশায় এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিতে বাধ্য হয়ে সম্মতি প্রদান করেন। এর পূর্বে সাবায়ীরা মদীনাবাসীকে খলীফা নির্বাচনের জন্য তিন দিনের সময় সীমা বেঁধে দিয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে কাউকে খলীফা বানাতে ব্যর্থ হলে সকলকে হত্যার হুমকি পর্যন্ত তারা দিয়েছিল। ঘটনা পরস্পরার এক পর্যায়ে তারাই হযরত আলীর রাযি. নাম প্রস্তাব করে। অতঃপর উল্লেখিত পন্থায় কতিপয় বিশিষ্ট সাহাবীর রাযি. পরামর্শে হযরত আলী রাযি. খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হযরত আলীর রাযি. খলীফা হওয়ার পিছনে মূলতঃ সাবায়ীদের ভূমিকা থাকলেও তাঁর পক্ষে মদীনার একাধিক বিশিষ্ট সাহাবার রাযি. সমর্থনও ছিল। তাছাড়া বাস্তবিক পক্ষেও তখন হযরত আলী রাযি. খলীফা হওয়ার জন্য সর্বদিক দিয়ে যোগ্য ছিলেন। যার প্রমাণ হযরত উসমান রাযি. কে খলীফা মনোনীত করার সময় সমগ্র মুসলিম বিশ্বের রায় দু’ব্যক্তির ব্যাপারে সীমাবদ্ধ ছিল। অধিকাংশ গোত্র ও লোকের হযরত উসমানের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। অবশিষ্টরা হযরত আলীর রাযি. পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। এ দু’জন ব্যতীত অন্য কারো ব্যাপারে প্রস্তাব আসেনি। যে কারণে হযরত আলী রাযি. বিরোধী অন্যান্য সাহাবীগণ রাযি. কাউকে হযরত আলীর রাযি. বিরুদ্ধে পাল্টা খলীফা মনোনীত করেন নি। বরং তারা শুধু সাবায়ীদের ব্যাপারে বিশেষ আপত্তির কারণে হযরত আলীর রাযি. হাতে বাইয়াত হতে অস্বীকার করেছিলেন, এসকল কারণে অর্থাৎ মদীনায় অবস্থিত বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের সমর্থন, ও স্বীয় যোগ্যতা বলে হযরত আলীর খলীফা মনোনীত হওয়া শুদ্ধ ছিল এবং তিনি ‘খলীফায়ে বরহক’ ছিলেন। এ ব্যাপারে উম্মতের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই।
হযরত আলীর রাযি. উল্লেখিত পন্থায় খলীফা মনোনীত হওয়ার পর মদীনায় অবস্থিত যে সকল সাহাবী রাযি. তাঁর হাতে উল্লেখিত আপত্তির কারণে বাই’আত হতে অস্বীকার করেন, তাদের মধ্যে কতেককে বিশেষতঃ হযরত ত্বালহা ও যুবাইরের রাযি. ন্যায় বিশিষ্ট দুই সাহাবীকেও রাযি. সাবায়ীরা ঘাড়ের উপর তরবারী ধরে হযরত আলীর রাযি. হাতে বাই’আত হতে বাধ্য করে। খিলাফতের শূন্য পদে তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে খলীফা বানানোতে তাদের উদ্দেশ্যে ছিল নিজেদের ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র হতে মুসলমানদের দৃষ্টি আড়াল করে রাখা, জনগণের রোষানল থেকে আত্মরক্ষা করা এবং খিলাফত ব্যবস্থায় জবরদস্তি নিজেদের সম্পৃক্ত করে নিজেরা ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ধীরে ধীরে মনোনয়নে বিভেদ সৃষ্টি করে ধাপে ধাপে খিলাফত ব্যবস্থাকে চিরতরে বিনষ্ট করে দেয়া। হযরত আলীর রাযি. মত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বকে খলীফা মনোনীত না করলে তাদের এ সকল উদ্দেশ্যে অর্জিত হতো না বরং তখন মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে কাউকে খলীফা বানিয়ে তাঁর নেতৃত্বে খলীফা হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী সাবায়ীদের সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারতো। এ জন্য হযরত উসমান রাযি. কে শহীদ করার পর সাবায়ীদের সকল ষড়যন্ত্র মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে তা বাড়ানো ও জিইয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রণীত হয়। সে লক্ষ্যে তারা হযরত আলী রাযি. কে খলীফা মনোনয়ন ও বিরোধীদেরকে জোর পূর্বক তাঁর হাতে বাই’আত করার উল্লেখিত পন্থা অনুসরণ করে।
মদীনার বিশিষ্ট সাহাবীগণের রাযি. সমর্থন ও স্বীয় যোগ্যতার কারণে হযরত আলী রাযি. খলীফায়ে বরহক হলেও তার মনোনয়নে হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী সাবায়ী চক্রের হাত থাকা ও বিরোধীদেরকে সাবায়ী দল কর্তৃক জোর পূর্বক বাই’আত হতে বাধ্য করা এবং খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ পদে সাবায়ীদের জবরদস্তিমূলক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার দরুন বিপরীত মত সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়। যে কারণে আশারায়ে মুবাশশারাহ তথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে একই মজলিসে এই দুনিয়ায় জীবিত থেকে বেহেশতের শুভ সংবাদ লাভকারী দশজন সাহাবীর রাযি. অন্যতম দু’জন হযরত ত্বালহা ও হযরত যুবাইর রাযি. জোরপূর্বক হযরত আলীর রাযি. হাতে বাই’আত করেও তা প্রত্যাহার করে নেন এবং হযরত আয়িশা রাযি. ও হযরত মুআবিয়া রাযি.এবং উম্মুল মুমিনীনসহ বিশিষ্ট অনেক সাহাবীই রাযি. হযরত আলী রাযি. হাতে বাই’আত না হয়ে হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী সাবায়ীদের হযরত আলী রাযি. কর্তৃক বিচারের দাবীতে বিরোধী শিবিরে অবস্থান গ্রহণ করেন।
*বিঃদ্রঃ*
*ভ্রান্তি নিরসনঃ* আর্টিকেল এর মধ্যে সাহাবী ও সাবায়ী শব্দ দুটি বহু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। তাই সাধারণ পাঠকদের মাঝে যাতে এ সম্পর্কে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় সেজন্য শব্দ দু’টির সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
*সাহাবী:* যে সকল মহান ব্যক্তি ঈমান থাকা অবস্থায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দর্শন লাভে ধন্য হয়েছেন এবং ঈমান থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।
*সাবায়ী:* কুখ্যাত ইয়াহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবা’র অনুসারীদেরকে বলা হয় সাবায়ী।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[12/09, 9:40 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৪ ======*
*সফলতার পথে সাবায়ী ষড়যন্ত্র*
এদিকে হযরত আলী রাযি. খলীফা মনোনীত হওয়ার পর সাবায়ী দল কর্তৃক সৃষ্ট গোলযোগপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল মুহূর্তে তার চতুর্দিকে সাবায়ীদের শক্ত আধিপত্য ও ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থান এবং এরই সঙ্গে হযরত আলীর রাযি. সমর্থন ও ক্ষমতার প্রভাবে সাবায়ী চক্রের দৃঢ় অবস্থান ও প্রভাব কিছুতেই খতম করতে না পারার দরুন হযরত আলী রাযি. বিরোধী শিবিরে অবস্থান গ্রহণকারী সাহাবীগণের রাযি. সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলছিল।
আর এর মাধ্যমে মুসলমানদের ঐক্যকে চূর্ণ করে তাদেরকে দুই শিবিরে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র সফলতার দিকে এগুচ্ছিল। এক দিকে হযরত আয়িশা, তালহা, যুবাইর, মুআবিয়া প্রমুখ সাহাবা রাযি. ও তাদের অনুসারীগণ হযরত আলীর রাযি. প্রতি তাদের দাবী ছিল আপনি খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার প্রথম কর্তব্য হচ্ছে হযরত উসমানের রাযি. হত্যার বদলা নেয়া। অপর দিকে হযরত আলী রাযি. ও তাঁর সমর্থকগণের বক্তব্য ছিল যেহেতু আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে সাবায়ীদের দৃঢ় অবস্থান ও প্রভাব সীমিত শক্তি দ্বারা খতম করতে পারছি না তাই আপনারাও এগিয়ে আসুন এবং নির্বাচিত খলীফার হাতে বাই’আত করে তার হাত কে শক্তিশালী করুন এবং খিলাফতের ভিত্তি মজবুত করুন। অতঃপর তিনি অবশ্যই তাদের (সাবায়ী) বিচার করবেন। হযরত উসমানের রাযি. রক্ত তিনি কিছুতেই বৃথা যেতে দিতে পারেন না।
হযরত আলী রাযি. এ বক্তব্য জনসাধারণের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। অনেকে হযরত আলীর রাযি. সাথে এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করলেও অন্যরা এটাকে হযরত উসমানের রাযি. হত্যার বদলা নেয়া হতে তাঁর পাশ কাটানোর চেষ্টা বলে অভিহিত করলো। আর সাবায়ীরা হযরত আলীর রাযি. উল্লেখিত বক্তব্য শ্রবণে চিন্তা করলো যে যদি তিনি প্রতিকুল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে সামান্য নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ পান, তাহলে আমাদের আর রক্ষা নেই। অতএব আমদের এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির বিরুদ্ধে সর্বদা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এদিকে হযরত মুআবিয়া রাযি. তাঁর শাসিত ‘শাম প্রদেশে’ হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারীদের বদলা নেয়ার পক্ষে জনমত গঠনে ব্যস্ত থাকায় হযরত আলী রাযি. তাঁর প্রতি বাইআতের আহ্বান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেন। হযরত মুআবিয়ার রাযি. পক্ষ হতে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ার হযরত আলী রাযি. বুঝে নিলেন যে, ব্যাপারটি এত সহজে সমাধান হবার নয়। অতএব, তিনি হযরত মুআবিয়ার রাযি. বিরুদ্ধে শাম (সিরিয়া) অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
অপরদিকে হযরত আয়িশা রাযি. মক্কা হতে হজ্জ পালন করে মদীনা ফিরার সময় পথিমধ্যে সাবায়ী দল কর্তৃক হযরত উসমানের রাযি. শাহাদাত ও মদীনা দখলের সংবাদ শ্রবণ পূর্বক মক্কা প্রত্যাবর্তন করে সাবায়ীদের বিচার ও মদীনাকে তাদের দখলমুক্ত করার পক্ষ জনমত গঠন করতে থাকেন। হযরত ত্বালহা ও যুবাইর রাযি. সহ আরো অনেকেই মদীনা থেকে মক্কায় এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। তাঁদের পরামর্শে হযরত আয়িশা রাযি. হযরত আলীর রাযি. উপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে, অর্থ ও সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য সমমনা লোকদের সাথে বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
হযরত আয়িশা রাযি. কর্তৃক বসরা অভিযানের সংবাদ শুনে তথায় হযরত আলী রাযি. কর্তৃক নিযুক্ত গভর্নর উসমান বিন হানিফ এ অভিযান প্রতিহত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অতঃপর হযরত আয়িশা রাযি. সদলবলে বসরা আগমনের পর উভয় পক্ষ যুদ্ধ এড়িয়ে সন্ধির পথ বের করতে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু বসরায় নিযুক্ত আব্দুল্লাহ বিন সাবার এজেন্ট হাকিম বিন জাবাল হঠাৎ করে তার দল নিয়ে হযরত আয়িশার রাযি. বাহিনীর উপর আক্রমণ করে বসে। কিন্তু হযরত আয়িশা রাযি. তাঁর বাহিনীকে যুদ্ধ এড়িয়ে শুধু প্রতিরোধের নির্দেশ দেন।
কিন্তু ধীরে ধীরে এ যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে। সে মুহূর্তে উসমান বিন হানিফ হাকিম বিন জাবালার পক্ষ অবলম্বন করেন। অবশেষে উসমান বিন হানিফ পরাজিত হয় এবং বসরা শহর হযরত আয়িশার রাযি. নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বসরা দখলের পর হযরত উসমানের রাযি. বিরুদ্ধে যে সকল বসরাবাসী বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল হযরত ত্বালহা ও যুবাইরের রাযি. নির্দেশে তাদের অনেককেই গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়। আর কিছু লোক পলায়ন করে আত্মরক্ষা করে।
হযরত আয়িশার রাযি. বসরা অভিযান ও তথায় তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংবাদ শুনে হযরত আলী রাযি. সিরিয়া অভিযান স্থগিত রেখে ইরাক তথা বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ‘যী-ক্বার’ নামক স্থানে হযরত আলী রাযি. বসরার নিকট শিবির স্থাপন করেন।
সন্ধি প্রচেষ্টাঃ হযরত আলী রাযি. আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ নিষ্পত্তির আশায় ক্বা‘ ক্কা‘ বিন আমরকে বসরায় পাঠালেন। ক্কা‘ ক্কা‘ একজন বিচক্ষণ ও বাকপটু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হযরত আয়িশা, ত্বালহা ও যুবাইরের রাযি. দরবারে এসে আরয করলেন আপনারা যে এত কষ্ট করে এখানে এসেছেন, এতে আপনাদের উদ্দেশ্য ও নেক নিয়ত কি? হযরত আয়িশা রাযি. ও তাঁর সঙ্গীরা উত্তর দিলেন আমাদের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের ঐক্যে যে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করা ও কুরআনের আদেশ বাস্তবায়িত করা।
ক্বা‘ ক্বা‘ বললেন- তাহলে এ লক্ষ্য অর্জনে আপনারা কি পন্থা নির্ধারণ করেছেন ? তারা উত্তর দিলেন- ‘হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারীদেরকে হত্যা করতে হবে। কেননা তাঁর হত্যার কিসাস (হত্যার বদলে হত্যাকারীকে হত্যা করা) না নেয়া হলে কুরআনের বিরুদ্ধাচরণ করা হবে।
ক্বা‘ ক্বা‘ বললেন- হযরত উসমানের রাযি. হত্যার কিসাসের দাবী তো যুক্তিযুক্ত এবং তাতে আমাদের কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত খিলাফতের ভিত্তি সুদৃঢ় না হবে এবং রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে না ‘আসবে ততক্ষণ তো এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভবপর নয়। দেখুন আপনারা বসরার বিদ্রোহীদের নিকট হতে কিসাস নিয়েছেন কিন্তু হারকুম বিন যাহীরকে শায়েস্তা করতে পারেননি বরং তাকে হত্যার করতে চাইলে তার পক্ষে ছয় হাজার মানুষ দাড়িয়ে গেল অবশেষে আপনারা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তাহলে আপনারা যখন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকরীদের মধ্য হতে একজনকে আপাততঃ ছেড়ে দিতে পারলেন তাহলে হযরত আলী রাযি. যদি সকলের বিচার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখেন তাহলে তার অন্যায় কোথায়? অতএব, এই অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার সমাধান এভাবেই হতে পারে যে, আপনারা সকলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর রাযি. পতাকাতলে সমবেত হয়ে বিদ্রোহীদের বিচারের জন্য তাঁর হাতকে শক্তিশালী করবেন এবং নিজেদেরকে ও আমাদেরকে এমন বিপদে নিক্ষেপ করা হতে বিরত থাকবেন যার পরিণতিতে আমরা উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাব। কোন একক ব্যক্তি বা দলের নয় বরং তা সমগ্র জাতির ঐক্য ভাঙনের কারণ হবে। আমি আশা করি আপনারা যুদ্ধ বিগ্রহের চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই অগ্রাধিকার দিবেন।
ক্বা‘ক্বা‘র এ যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনায় হযরত আয়িশা রাযি. ও তাঁর দুই অনুসারী হযরত ত্বালহা ও যুবাইর রাযি. অত্যন্ত প্রভাবান্বিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনার এ ফর্মুলা তো অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু হযরত আলীর রাযি. ও কি এই মত? যদি তাঁরও এই মত হয়ে থাকে, আর তিনি হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকরীদের বিচারে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে অতি সহজেই এ সংকট নিরসন হতে পারে।
ক্বা’ক্বা’ ফিরে এসে হযরত আলীকে রাযি. উপরোক্ত আলোচনার বিবরণ শুনালে হযরত আলী রাযি. অত্যন্ত খুশী ও আশান্বিত হয়ে উঠলেন । ক্বা‘ক্বা‘র সঙ্গে হযরত ত্বালহা ও হযরত যুবাইরের রাযি. কিছু অনুসারীও হযরত আলীর রাযি. নিকট তার প্রকৃত মনোভাব জানার জন্য ‘আসল। কেননা তাদের নিকট সাবায়ীরা এই অপপ্রচার চালাচ্ছিল যে, হযরত আলী রাযি. বসরা বিজয় করে তথাকার যুবকদের হত্যা করবেন আর শিশু ও নারীদের গোলাম-বাঁদী বানিয়ে নিবেন।
হযরত আলী রাযি. তাদেরকে একান্তে নিয়ে এ সকল মিথ্যা অপপ্রচারে কান না দেয়ার পরামর্শ দেন এবং তার পক্ষ হতে এরূপ আচরণ না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তারা হযরত আলীর রাযি. বাহিনীকে শান্তির প্রত্যাশী ও যুদ্ধ পরিহারে আগ্রহীই দেখতে পেল। দীন ও ইসলামী উম্মাহর স্বার্থে উভয় পক্ষের এই ইখলাস ও নমনীয়তায় যে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাতে মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও গৃহযুদ্ধের আশংকা দূরীভূত হয়ে ‘আসছিল আর এরূপ আশার আলো দেখা যাচ্ছিল যে, মুসলমানদের উভয় পক্ষ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সাবায়ীদের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব কলহকে ভুলে গিয়ে অচিরেই চূড়ান্ত ঐক্যের ঘোষণা দিবেন এবং উভয় পক্ষ হযরত আলীর রাযি. খিলাফতের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হয়ে খিলাফতের ভিত্তিকে দৃঢ় করে খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী ও হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকারী সাবায়ী চক্রকে সমূলে উৎখাত করে তাদের সকল ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত গুঁড়িয়ে দিবেন এবং তাদেরকে চরম শাস্তি প্রদান করবেন।
অতএব, উভয় পক্ষের এই ঐক্য ইসলাম ও ইসলামের উন্নতির মূল ভিত্তি ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ও মুসলমানদের জন্য মঙ্গলজনক হলেও আব্দুল্লাহ বিন সাবা ও তার দলের জন্য তা ছিল মৃত্যু ঘণ্টা । তাই তারা এতে নিজেদের প্রমাদ গুনলো এবং যে কোন মূল্যে মুসলমানদের এ ঐক্য প্রয়াস ব্যর্থ করার হীন ষড়যন্ত্রে মত্ত্ব হল। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে উদ্বৃত্ত হচ্ছে।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
[13/09, 6:09 AM] نور:
*ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস*
*====== প্রথম অধ্যায়,পর্ব -১৫ ======*
*সাবায়ীদের বিরুদ্ধে হযরত আলী রাযি. এর দ্ব্যর্থহীন ভাষণ ও এর প্রতিক্রিয়াঃ*
হযরত আলী রাযি. শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য বসরা গমনের প্রস্তুতি নিলেন। রওয়ানা হওয়ার পূর্বে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি একটি ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি জাহিলিয়াতের অন্ধকার ও ইসলামের আলোর কথা উল্লেখ করেন। অতঃপর মুসলমনাদেরকে পারস্পরিক ঐক্য, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের যে মহান নিয়ামত দান করা হয়েছিল, তা উল্লেখপূর্বক বর্তমান অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার উপর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এর জন্য ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রকেই দায়ী করে বলেন- “যারা মুসলমানদের উন্নতি ও প্রতিপত্তি সহ্য করতে পারে না এবং মুসলমানদের বিশ্বব্যাপী রাজত্ব বিস্তারে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের অধঃপতন কামনা করে বর্তমানের এ সৃষ্ট পরিস্থিতি তাদেরই ষড়যন্ত্রের পরিণতি।”
অতঃপর তিনি বললেন- আগামীকাল আমরা বসরায় যাব। কিন্তু আমাদের এই সফর যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নয় বরং শান্তি ও একতার জন্য। অতএব যারা হযরত উসমানের রাযি. হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের কেউ যেন আমাদের সঙ্গে না যায়।
হযরত আলীর রাযি. স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন এ ভাষণ শ্রবণ করতঃ সাবায়ীদের পয়ের নীচ হতে মাটি সরে গেল। তাই যে কোন মূল্যে এই ঐক্য প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে মরণ কামড় হানার পায়তারায় আব্দুল্লাহ বিন সাবা তার ঘনিষ্ঠ সাঙ্গ পাঙ্গদের নিয়ে এক গোপন বৈঠকে বসল। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতঃ তারা মতামত ব্যক্ত করল যে যদি আলী রাযি. ও ত্বালহা-যুবাইরের রাযি. মাঝে ঐক্য সম্পাদিত হয়ে যায় তাহলে তা আমাদের রক্তের উপর দিয়ে সম্পাদিত হবে যা আমাদের এতদিনের সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিবে। অতএব যে কোন মূল্যে এ সন্ধি প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।
পরের দিন সকালে হযরত আলী রাযি. স্বীয় বাহিনীসহ বসরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলেন। অপরপক্ষে হযরত ত্বালহা-যুবাইর রাযি. ও তাদের বাহিনী নিয়ে বসর হতে বেরিয়ে ‘আসলেন। উভয় দর তিন দিন পর্যন্ত মুখোমুখি অবস্থান করল। উভয়পক্ষের মাঝে আলোচনা চলতে থাকল। অবশেষে হযরত আলী রাযি. হযরত ত্বালহা ও যুবাইর রাযি. নিকট প্রস্তাব পাঠালেন যে, ক্বা‘ক্বা‘র সঙ্গে এর পূর্বে যে কথা হয়েছিল তাতে যদি আপনারা একমত থাকেন তাহলে আর সময় ক্ষেপণ না করে চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাওয়া উচিৎ। তাঁরা উত্তর দিলেন আমরা নিঃসন্দেহে সে কথার উপর অটল আছি। অতঃপর এ পক্ষ থেকে এই দু’জন ও অপরপক্ষ হতে হযরত আলী রাযি. নিজ ঘোড়ায় আরোহণ করে বের হলেন এবং অপরের সঙ্গে লেগে গেল। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই তিন নেতার সরাসরি বৈঠক ও আন্তরিক আলোচনা হল। আলোচনায় উভয়পক্ষেই অতীতের বিভিন্ন স্মৃতি চারণ করলেন। এ বৈঠকের পর সন্ধিচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ ও আশংকা রইল না।
_*📋নিজে পড়বেন এবং শেয়ার করে অন্যদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন।*_
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন